শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : আর্থিক সংকটে চার বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ঝিনাইদহের মহেশপুর পৌর এলাকার প্রায় ৫ কোটি টাকায় নির্মিত পানি শোধনাগার। ২০১৯ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে উদ্বোধনের পর কিছুদিন চালু থাকলেও আর্থিক সংকটের কারণে চার বছর ধরে বন্ধ রয়েছে শোধনাগারটি। ফলে আর্সেনিক ও অতিরিক্ত আয়রনযুক্ত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছেন পৌরসভার প্রায় ৭০ হাজার বাসিন্দা।

মহেশপুর পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রে নির্মিত এই শোধনাগারটি নিয়ে এলাকাবাসীর ছিল অনেক আশা। কিন্তু চালু হওয়ার পরই দেখা দেয় আর্থিক সংকট। শোধনাগার চালাতে মাসিক বিপুল ব্যয় ও বিদ্যুৎ বিল মেটাতে না পেরে পৌর কর্তৃপক্ষ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে অব্যবহৃত অবস্থায় যন্ত্রপাতিতে ধরেছে মরিচা, চারপাশে জন্মেছে আগাছা, চুরি হয়েছে ট্রান্সমিটারসহ মূল্যবান সরঞ্জাম।

পৌর এলাকায় প্রায় ৯৬টি নলকূপের পানিতে রয়েছে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি আর্সেনিক। পৌরসভার পানিতেও আয়রনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে জনগণ প্রতিদিনই স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা সজিব হাসান বলেন, আমরা ভেবেছিলাম নিরাপদ পানি পাব,কিন্তু কোটি টাকা খরচ করেও কিছুই হলো না। এখন দেখছি যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে,আমরা আগের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পানি পান করছি।

গৃহিণী শাহিদা খাতুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শোধনাগার বন্ধ হয়ে পড়ায় পরিবারে ছোট বাচ্চারা অসুস্থ হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি আমাদের অধিকার।

পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, শোধনাগার চালাতে প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় হয়। আর্থিক সংকটের কারণে বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। বকেয়া থাকায় কর্তৃপক্ষ প্রি-পেইড মিটার বন্ধ করে দিয়েছে।

মহেশপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সোহেল রানা বলেন, শোধনাগারটি চালাতে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তা পৌরসভার বর্তমান আয় থেকে সম্ভব নয়। বিদ্যুৎ বিল এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ মেটানো যায়নি বলেই চালু রাখা সম্ভব হয়নি। আমরা আশা করছি, সক্ষমতা তৈরি হলে পুনরায় চালু করতে পারব।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কোটি টাকার প্রকল্প বন্ধ হয়ে পড়ায় সরকারি অর্থ অপচয় হয়েছে। এভাবে অচল প্রকল্প ফেলে রাখার কারণে জনগণ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকলেও কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।

মহেশপুরের মানুষ এখনও অপেক্ষায় আছে বিশুদ্ধ পানির জন্য। ৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা খরচের পরও জনগণ সেই প্রত্যাশিত সুবিধা পাচ্ছে না। আর ব্যয় সংকটে অচল শোধনাগারটি দিন দিন পরিণত হচ্ছে ধ্বংসস্তূপে।

(এসআই/এসপি/নভেম্বর ০৮, ২০২৫)