সুন্দরবনের ডাকাত সন্দেহে দুইজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ
রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সুন্দরবনের ডাকাত সন্দেহে দুইজনকে আটক করে গনধোলাইয়ের পর পুলিশে সোপর্দ করেছে জনতা। গতকাল শুক্রবার রাতের দিকে তাদেরকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা খেয়াঘাট এলাকার হায়দার আলীর চায়ের দোকানের সামনে থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছে থাকা দুটি ছোট কুড়াল, একটি হাতুড়ি, ১০টি ড্রিল বিট, একটি হাতুড়ি, ছিদ্রযুক্ত দুটি লোহার রড, ছিদ্রযুক্ত তিনটি লোহার পাতসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র জব্দ করা হয়।
আটককৃতরা হলেন- খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার ইমানপাড়া গ্রামের ইব্রাহীম গাজীর ছেলে বিল্লাল হোসেন(৩৩) ও একই জেলার দাকোপ থানার জয়নগর গ্রামের জয়নাল খাঁ’র ছেলে আযাহারুল ইসলাম ওরফে খানজাহান(৩৬)
শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা গ্রামের আসাদুল ইসলাস, ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা, ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মাহামুদুল ও মিলন ঘরামী জানান, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে কয়রার বেল্লাল হোসেন ও দাকোপের আযাহারুল ইসলামকে গাবুরা খেয়াঘাট এলাকার হায়দার ঘরামীর চায়ের দোকানের সামনে ঘোরাফেরা করতে দেখেন। সন্দেহ হলে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তারা জানতে পারেন যে, ওই দুই ব্যক্তি বেতকাশি খেয়া পার হয়ে গাবুরায় এসেছেন। তারা বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নের দাতিনাখালি গ্রামের জনৈক শাহজাহানের বাড়িতে যাবেন। তারা নিজেদেরকে ধানছাড়া মেশিনের মিস্ত্রী পরিচয় দেয়। তাদের হাতে থাকা দুটি প্লাস্টিকের শপিং ব্যাগের মধ্যে দু’টি হাতল বিহীন কুড়াল, একটি হাতুড়ি, ১০টি ড্রিল বিটসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম পাওয়া যায়। এ সময় জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে ওই দুইজন তার আত্মীয় ও তার সঙ্গে সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া মারতে যায় বলে জানান। কথাবার্তার একপর্যায়ে ওই দুইজন সুন্দরবনের ডাক্তা দলের সদস্য বলে সুন্দরবনে যাতায়াতকারি জেলেরা নিশ্চিত করায় থানায় খবর দিলে রাত ১১টার দিকে তাদেরকে গণধোলাই দিয়ে উপপরিদর্শক অভীক বড়ালের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
দাতিনাখালি গ্রামের শাহাজাহান আলী জানান, আযাহারুল তার সঙ্গে বনে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে যায়। তবে বেল্লাল একজন ধানঝাড়া মেশিনের মিস্ত্রী। সিজন শুরু হওয়ায় সে যশোরে যাবে বলেছিল।
তবে আটককৃত বেল্লাল হোসেন জানান, তিনি যশোরে ধান ঝাড়া মেশিনের মিস্ত্রী হিসেব কাজে যাওয়ার জন্য শ্যামনগরের দাঁতিনাখালি গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। বেতকাশি খেয়াঘাটে আযাহারুলের সঙ্গে তার দেখা হয়। সে ওই আজাহারুলের বাড়িতে যাবে বলে তাকে জানায়। একপর্যায়ে গাবুরা খেয়াঘাটের পাশে জনতা ডাকাত সন্দেহে তাদেরকে মারপিট করে পুলিশে সোপর্দ করে। তার বিরুদ্ধে ২০২০ সালে কয়রা ও ২০২১ সালে পাইকগাছা থানায় একটি করে অস্ত্র মামলা ও আযাহারুলের বিরুদ্ধে দাকোপ থানায় ২০১৭ সালে ডাকাতির চেষ্টার অভিযোগে ২০২১ সালে অস্ত্র আইনে একটি মামলা থাকার কথা নিশ্চিত করেন আটককৃতরা।
এদিকে মামলার বাদি শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক অভিক বড়াল এজাহারে উল্লেখ করেছেন যে, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি গোপনে খবর পেয়ে ১১টা ২০ মিনিটে গাবুরা খেয়াঘাটে হায়দার আলীর চায়ের দোকানের সামনে ইট সোলিং এর উপর বেল্লাল হোসেন ও আযহারুলসহ ৪/৫জনকে পান। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সকলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে জনগনের সহযোগিতায় বেল্লাল ও আযাহারুলকে ধরতে সক্ষম হন। এ সময় তাদের দুইজনের হাতে থাকা দুটি প্লাস্টিকের ব্যাগ থেকে দুটি হাতল বিহিন ছোট কুড়াল, একটি হাতুড়ি, ১০টি লেঅহার ড্রিল বিট, কয়েকটি ছিদ্রযুক্ত লোহার রড ও লোহার পাতসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র উদ্ধার করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ডাকাতি করতে যাচ্ছিল বলে পুলিশকে জানায়।
শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক হুমায়ুন কবীর মোল্লা সাংবাদিকদের জানান, আটককৃত বেল্লাল হোসেন ও আযাহারুলসহ অজ্ঞাতনামা ৫ জনের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতির অভিযোগে শনিবার থানায় ৩৯৯/৪০২ ধারায় মামলা(থানা মামলা নং-০৫, জিআর-৩৩৩) দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের শনিবার বিকেলে সাতক্ষীরা আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। উপপরিদর্শক তুহিন বাওয়ালীকে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে।
(আরকে/এসপি/নভেম্বর ০৮, ২০২৫)
