স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা বিষয় ও শিক্ষক পদ বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং তা অবিলম্বে পুনর্বহালের দাবিতে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রেসক্লাব যশোরের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।

মানববন্ধন চলাকালে বক্তারা সরকারের এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, গত ২৮ আগস্ট ২০২৫ তারিখের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা বিষয় ও পদ সংযুক্ত করা হলেও পরবর্তীতে ২ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে তা বাতিল করা হয়। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করবে।

উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তুলে ধরলেন বক্তারা

বক্তারা জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে শিশুদের মধ্যে স্থূলতা, শারীরিক দুর্বলতা, মানসিক চাপ এবং অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর হার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নত জাতি গঠনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিকভাবে প্রাথমিক স্তরে শারীরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু এই বিষয় বাদ দিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ, দক্ষ ও কর্মক্ষম নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।

মানববন্ধনে যবিপ্রবির শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক বাদের বিষয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বক্তারা হুঁশিয়ারি দেন, সরকার যদি দ্রুত এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তবে তারা এই দক্ষিণ জনপদের শারীরিক শিক্ষার সাথে জড়িত শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবেন এবং প্রয়োজনে ঢাকা মুখী কর্মসূচিও গ্রহণ করবেন।

তারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা বিষয়টি পুনর্বহাল করে জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্বাস্থ্য, সক্ষমতা ও মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানান।

মানববন্ধন শেষে অংশগ্রহণকারীরা সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার কাছে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। এই স্মারকলিপিতে তাদের সুনির্দিষ্ট দাবিসমূহ তুলে ধরা হয়েছে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা বিষয় ও পদ অবিলম্বে পুনর্বহাল করতে হবে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে শারীরিক শিক্ষা বিষয়কে বাধ্যতামূলক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শারীরিক শিক্ষা বিষয়ক প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের যথাযথ নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যালয় পর্যায়ে নিয়মিত ক্রীড়া ও শারীরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়ার উন্নয়নে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, আন্তজার্তিক ও জাতীয় পর্যায়ের কোচ ও বিচারক ইসমাইল হোসেন (স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী), প্রতিষ্ঠাতা কোচ (জুনিয়র লেপার্ড ফুটবল একাডেমি)আর্শিনুল বাহার, বর্তমান তায়াকোয়ান্ডো র‍্যাঙ্কিং ১ মো: ইলিয়াস, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে রেকর্ডধারী দৌড়বিদ রুপা খাতুন, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে আর্চারী খেলোয়াড় ইয়াসিন আরাফাত, জাতীয় রাগবি দলের খেলোয়াড় খায়রুল আলম, জাতীয় জুডো খেলোয়াড় সুমাইয়া ইলা, বয়স ভিত্তিক দলের ফুটবল দলে গোলকিপার সীমান্ত,স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আল আমিন মুক্ত, শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ, আল মামুন ফরহাদ।

এই তালিকার বাইরে জাতীয় দলের হকি দলের খেলোয়াড় এবং বিভিন্ন গেমসে বয়স ভিত্তিক ও জাতীয় দলের কৃতি খেলোয়াড়গণও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

(এসএ/এসপি/নভেম্বর ০৯, ২০২৫)