ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফারুক হোসেন গ্রেপ্তার
রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : বাংলাদেশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাহী আদেশে কার্যক্রম স্থগিত করা রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফরিদপুর জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, মো. ফারুক হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে কোতয়ালি থানা পুলিশ।
সোমবার (১০ নভেম্বর) ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র ঝিলটুলীর একটি ফ্লাট থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ফরিদপুর কোতয়ালি থানা পুলিশ ও একাধিক গোয়েন্দা সূত্র উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে তাঁর গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সোমবার রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখার লেখা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হোসেনকে ঠিক কোন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা জানায়নি পুলিশ। তবে তাঁর নামে ফরিদপুর কোতয়ালি থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আসুন জেনে নেই ফরিদপুর কোতয়ালি থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারকৃতকে আওয়ামী লীগ নেতা মো. ফারুক হোসেন। গণতান্ত্রিক ও মুলধারার রাজনীতিতে মো. ফারুক হোসেন একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবেই সর্বমহলে পরিচিত এই রাজনীতিবিদের রাজনৈতিক সুচনা হয় ৭০ দশকের শেষের দিকে। দলমত নির্বিশেষে ফরিদপুরের মানুষের কাছের মানুষ হিসেবে সর্বাধিক স্বীকৃত রাজনীতিবিদ তিনি। ফারুক হোসেন তাঁর ৪৪-৪৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে কখনোই কোনো প্রতিহিংসার রাজনীতি করেন নাই এবং রাজনৈতিক মামলা ছাড়া ব্যক্তিগত কারণে তিনি কখনোই কোনো মামলা হামলার মুখোমুখিও হননি। স্বৈরাচার এরশাদ পতন আন্দোলনের বৃহত্তর ফরিদপুরের অন্যতম গণতান্ত্রিক ছাত্রনেতা ছিলেন মো. ফারুক হোসেন। ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে ওই সময়ে এরশাদ সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ১৯৮০ সালে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও ১৯৮১ সালে সরকারি ইয়াছিন কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ওই সালেই তিনি বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত টানা ৪ বছর এরশাদ শাসনামলে তিনি ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৮৩ সালে জেলে থাকা অবস্থায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য হন। জেলে থাকা অবস্থায় ১৯৮৬ সালে ফরিদপুর জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৫ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত জেলা যুবলীগের সভাপতি ও তার পরের বছর কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যকরী সদস্য হন। ২০০০ থেকে ২০০৩ সময়ে তিনি ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৫ম কংগ্রেসে তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুন্ম-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন (নানক-আজম কমিটি)। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে যুবলীগের ৬ষ্ঠ কংগ্রেসের মাধ্যমে তাঁকে কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেস শেষে মো. ফারুক হোসেন বাকী জীবন নিজ এলাকার মানুষের সেবা করার লক্ষ্যে ফরিদপুরে ফিরে এসে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেন। এরপর ২০২২ সালে ১২ মে অনুষ্ঠিত ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তিনি সভাপতি পদপ্রার্থী হন। কিন্তু ওই সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি শামীম হককে সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা শাহ মোহাম্মদ ইশতিয়াক আরিফকে সাধারণ সম্পাদক করলে মো. ফারুক হোসেনকে সিনিয়র সহসভাপতি করা হয়। ৫ আগস্টের পর থেকে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক দেশের বাইরে অবস্থান করায় সম্প্রতি মো. ফারুক হোসেনকে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি'র দায়িত্ব দেয় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে নির্বাহী আদেশে কার্যক্রম স্থগিত করা সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হোসেন তাঁর রাজনৈতিক জীবনে শুধুমাত্র রাজনীতি করার জন্য সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও সাবেক ১/১১ সরকার এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে মামলা ও গ্রেপ্তারের মুখোমুখি হয়েছেন। এছাড়া তাঁর সামগ্রিক রাজনৈতিক জীবনের প্রায় একচতুর্থাংশ সময় শুধুমাত্র রাজনীতি করার কারণে তাঁকে জেলের অন্ধকারে কাটাতে হয়েছে।
যাহোক, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃত আওয়ামী লীগ নেতা মো. ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে কোতয়ালি পুলিশ।
(আরআর/এএস/নভেম্বর ১১, ২০২৫)
