‘গ্রেপ্তারের পর আমার স্বামীর চরিত্র হননের অপচেষ্টা চালানো হয়েছে’
রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : দেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাহী আদেশে কার্যক্রম স্থগিত করা রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফরিদপুর জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, মো. ফারুক হোসেনকে শহরের ঝিলটুলী এলাকায় তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে সোমবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬ টার দিকে গ্রেপ্তার করেছে স্থানীয় কোতয়ালি থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর তাঁকে ফরিদপুর কোতয়ালি নিয়ে যাওয়া হয়, এবপর রাতে তাঁকে ফরিদপুর ডিবি অফিসে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে মঙ্গলবার জিজ্ঞেসাবাদ শেষে বিকেলের দিকে তাঁকে আবার কোতায়লি থানায় নেওয়া হয়। এরই মধ্যে ফারুক হোসেন ছোটমেয়ে বৃষ্টি ফারুক থেকে পুলিশের আইন অনুযায়ী স্বাক্ষর নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁকে কোর্টে তোলা হয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর তাঁকে ও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারকৃত জেলা যুব মহিলা লীগের নেত্রী নাসরিনকে নিয়ে জড়িয়ে বিভিন্ন ধরণের রসালো খবর প্রকাশ করা হয়। সোমবার ও মঙ্গলবার সারাদিন এসব খবর প্রকাশিত হওয়ার পর এসব বিষয়ে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ এর সাথে খোলামেলা কথা বলেন ফারুক হোসেনের সহধর্মিণী মিসেস শাহানা ফারুক শানু। এসময় ওসব প্রকাশিত খবরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে শাহানা ফারুক উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, 'আমার স্বামী একজন আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ, তিনি ১৯৭৮ সাল থেকে ছাত্র রাজনীতির মধ্যদিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। এ দীর্ঘ সময়ে অনেক জেল জুলুম হামলা মামলা
র স্বাক্ষী আমি'। শাহানা বলেন, ফারুক হোসেন রাজনীতি করেন, তাঁর নামে মামলা হয়েছে গ্রেপ্তার হবেন, জেল-জুলুমের সম্মুখীন হবেন এটা একজন রাজনীতিবিদের জন্য কমন বিষয়, আর আমিও ওইভাবেই মানিয়ে নিয়েছি। কিন্তু তাঁকে গ্রেপ্তারের পর থেকে তাঁর চরিত্রহননের চেষ্টাটি খুবই দুঃখজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত একটি হীন কাজ বলে মনে করছি। তাঁকে ঘিরে এসব মিথ্যাচার করা হবে আশা করিনি, মেনে নেওয়াও কষ্টকর।'
শাহানা ফারুক আরও বলেন, 'যারা তাঁর চরিত্র হননের চেষ্টা করছেন, তাঁদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। এবং তাঁদের মনে রাখা উচিত, তিনি আমার জন্মদাতা বাবার বাড়ি অর্থাৎ ফারুক হোসেনের নিজ শ্বশুর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন।' তিনি জানান,' গতবছরের ৫ আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে আমি সব সময় ফারুক হোসেনের সাথে ছিলাম। এমনকি আমার বাবার বাড়িতেও আমি তাঁর সাথেই ছিলাম। তবে, তাঁকে গ্রেপ্তারের সময় আমি একটু বাইরে গিয়েছিলাম।' তিনি জানান, 'ফারুক হোসেন তাঁর প্রায় ৫০ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের চার ভাগের এক ভাগই প্রায় তিনি জেলে কাটিয়েছেন। আমি অনেক কষ্ট করে আমার বাচ্চা দু'টিকে মানুষ করেছি। আমার সৌভাগ্য যে আমার বাচ্চাদের বিয়ের সময় তাঁকে আমি পাশে পেযেছি।' শাহানা আরও বলেন, 'শত কষ্টেও আমার স্বামীর প্রতি আমার কোনো রাগ বা অভিমান হয়নি, কারণ আমি তাঁকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি এবং বিয়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ অটুট রয়েছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দুঃসময়ে সব সময় আমি তাঁর পাশে ছিলাম, এখনও আছি।' শাহানা ফারুক জানান, 'রাজনৈতিক কারণে দেশের স্বার্থে তাঁর শত জেল-জুলুম আমি মেনে নিতে পারবো। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য তাঁর যে কোনো আত্নত্যাগ আমি মেনে নিতে পারবো, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা ও তাঁর চরিত্র হননের অপচেষ্টা মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সত্যি ই খুব কষ্টকর। আমি এসবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।'
যারা তাঁর চরিত্রহননের চেষ্টা করছেন, কোন স্বার্থে করছেন, বা কোন উদ্দেশ্য এসব করছেন প্রশ্ন রেখে গ্রেপ্তারকৃত ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগনেতা মো. ফারুক হোসেনের সহধর্মিণী শাহানা ফারুক শানু আরও জানান, 'যারা এসব করছেন তাদের প্রতি সম্মান রেখেই বলতে চাই, আমরা একটি সভ্য সমাজে বাস করি। যে মেয়েটাকে জড়িয়ে রসালো গল্প বানাচ্ছেন তা একজন নারীর জন্য কতোটুকু মানহানীকর একটু মন থেকে ভাবুন। এছাড়া, ফারুক হোসেন এতো বছর ফরিদপুর তথা দেশের মানুষের জন্য কত শত কাজ করেছেন। কত হাজার হাজার মানুষের কাছে তিনি একজন আদর্শবান নেতা। তাঁর চরিত্র হননের অপচেষ্টা কতোটুকু যুক্তিযুক্ত একটু ভাবুন।'
পরে শাহানা ফারুক, ফরিদপুরবাসী ও দেশবাসীর কাছে তাঁর মুক্তির জন্য দোয়া ও প্রার্থনা কামনা করেন এবং শুধুমাত্র রাজনীতি করার কারণে ফারুক হোসেনকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা জেলে পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করেন।
এর আগে, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ফারুক হোসেনের গ্রেপ্তারের বিষয়টি, স্থানীয় সংবাদকর্মীদের অবহিত করতে একটি প্রেস ব্রিফিং-এর আয়োজন করেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আব্দুল জলিল মোল্লা (পিপিএম)। ওই প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্য বিষয়ের সাথে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার জানান, গ্রেপ্তারকৃত নারী (জেলা যুব মহিলা লীগ নেত্রী) আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হোসেনের সঙ্গে কেবল রাজনৈ'তিক পরামর্শের জন্যই দেখা করেছিলেন। তাঁর সাথে ওই নারীকে আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়া যায়নি এবং তাঁদের গ্রেপ্তারের পর পুলিশের পক্ষ থেকে ওই ধরণের কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি।'
মঙ্গলবার (১১ নমেম্বর) রাত নয়টায় এই রিপোর্ট লেখার সময় জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগনেতা ফারুক হোসেনকে রাত সাড়ে আটটার দিকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। ফারুক হোসেনের স্ত্রী শাহানা ফারুক, কোতয়ালি থানা পুলিশ ও ফরিদপুর আলাদত সূত্রে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে, সোমবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ফারুক হোসেনের গ্রেপ্তারের খবর ফরিদপুর সহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে করা পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের পাশাপাশি তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়। বিশেষ করে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ সমমনা বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি, রাজনীতিবিদ ফারুক হোসেনের হিতাকাঙ্ক্ষী ও সমর্থকদেরও এসময় তাঁর গ্রেপ্তারের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
(আরআর/এএস/নভেম্বর ১১, ২০২৫)
