রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মীরগাং গ্রামে তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে সাজানো ধর্ষণ মামলার নথিতে ডাক্তারি সনদ না থাকায় তদন্তকারি কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নাটিশ জারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে আগামি ২৭ নভেম্বর আসামী বিকাশ গাইনের জামিন শুনানীর দিনে তদন্তকারি কর্মকর্তাকে ডাক্তারি সনদ ও মামলার কেসডায়েরীসহ আদালতের কাঠগড়ায় হাজির থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. আব্দুল মজিদ (২) ন্যায় বিচারের স্বার্থে আসামীর ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন জানিয়েছেন। 

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে শ্যামনগরের মরাগাং গ্রামের দীলিপ গাইনের ঘর পোড়ানো মামলায় জামিন না’মঞ্জুর হওয়া আসামী জঙ্গল ভাংগী গত ২১ অক্টোবর আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিপক্ষকে ধর্ষণ মামলা দেওয়ার হুমকি দেন। তারা কারাগারে থাকাকালিন তার ভাড়াটিয়া লোকজন পুলিশের সহায়তায় ২৬ অক্টোবর ভোরে দীলিপ গাইনের ভাইপো বিকাশ গাইনকে আটক করে ঘরপোড়ানো মামলা তুলে নিতে রাজী না হওয়ায় ২৭ অক্টোবর কারাগারে থাকা এক আসামীর বিধবা মাকে দিয়ে ধর্ষণ মামলা সাজিয়ে আটকের ৩৩ ঘণ্টা পর আদালতে পাঠান।

এ মামলায় নিয়ম মাফিক আদালত থেকে ভিকটিমের ডাক্তারি সনদ চাওয়া হয়। সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মঙ্গলবার ছিল বিকাশ গাইনের জামিন শুনানীর দিন। জামিন শুনানীকালে নথিতে ডাক্তারি সনদ না থাকার বিষয়টি উপস্থাপন করেন আসামী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. নির্মলেন্দু জোয়ারদার ও অ্যাড. আব্দুল মজিদ (২)। এ সময় আসামীপক্ষের আইনজীবীরা ন্যয় বিচারের স্বার্থে কারাবন্দী আসামীর ডিএনএ টেষ্টের আবেদন জানান। শুনানী শেষ বিচারক মোঃ নজরুল ইসলাম আদালতে ডাক্তারি সনদ না পাঠানোয় মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবীর মোল্লাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ এর পাশাপাশি আগামি ২৭ নভেম্বর জামিন শুনানীর দিনে তাকে ভিকটিমের ডাক্তারি সনদসহ মামলার কেস ডায়েরীসহ হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।

প্রসঙ্গত, মরাগাং গ্রামের কালিপদ মণ্ডলের খাস হওয়া ১৪ বিঘা জমির এক একর বন্দোবস্তমূলে দাবি করাকে কেন্দ্র করে পঁচি ভাংগী ও দীলিপ গাইনের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে কয়েকবার শালিসি সভাও হয়। শালিসি সিদ্ধান্ত না মেনে গত ১৭ অক্টোবর রাত সাড়ে সাতটার দিকে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী জব্বার গাজী, আনারুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা, ইউনুস আলী, যুবদল নেতা মাহামুদুল ইসলাম ডনসহ ছাদেম চেয়ারম্যানের পক্ষের ৪০/৫০ জন দীলিপ গাইন ও তার ভাইদের ডিসিআরকৃত পুকুরসহ ৫০শতক জমি জবরদখলের চেষ্টা করে। পুলিশ আসছে এমন খবর পেয়ে তারা আত্মগোপন করলেও গভীর রাতে দীলিপ গাইনের বসত ঘর ও রান্না ঘর আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় দীলিপ গাইন ১৮ অক্টোবর থানায় মামলা করেন। ২১ অক্টোবর জঙ্গল ভাংগিসহ চারজন আদালতে হাজির হয়ে অঅবেদন করলে বিচারক তাদের জামিন না’মঞ্জুর করেন।

সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে জঙ্গল ভাংগী দীলিপ গাইন ও তারপক্ষের লোকজনদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দেওয়ার হুমকি দেন। পরদিন জঙ্গল ভাংগির ভাইয়ের পুত্রবধু প্রিয়ংকা মণ্ডল বাদি হয়ে আদালতে পলাশ গাইনসহ ১৫ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। যার প্রধান সাক্ষী বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার প্রতারণা মামলাসহ শ্যামগরের গত বছরের ২ আগষ্ট হত্যাচেষ্টা ও লুটপাটের মামলা মামলার আসামী মরাগাং গ্রামের জব্বার গাজী, যুবদল নেতা গত ১৫ অক্টোবর মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ও সিআর- ৪১/২৩ নং মামলার আসামী মাহামুদুল হাসান ডন ও ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি সাড়ে সাত কেজি হরিণের মাংসসহ গ্রেপ্তারের বন আইনে মামলার (আগামি ১৮ নভেম্বর যুক্তিতর্কের দিন) আসামী ইউনুস গাজী। ২৫ অক্টোবর দিবাগত রাত একটার দিকে বেড়া কেটে ঘরে ঢুকে প্রিয়ংকা মণ্ডলের ঢাকায় কর্মরত বিধবা শ্বাশুড়িকে ধর্ষণের অভিযোগে ২৬ অক্টোবর ভোর ৬টার দিকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে থানায় ৩৩ ঘণ্টা আটক রাখার পর ধর পোড়ানো মামলা তুলে নিতে অস্বীকার করায় পুলিশের সহায়তায় সাজানো ধর্ষণ মামলায় বিকাশ গাইন, তার চাচাত ভাই তুষার গাইন ও পলাশ গাইনের নামে মামলা দিয়ে বিকাশকে ২৭ অক্টোবর আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়।

ওই মামলার প্রধান সাক্ষী জব্বার গাজী, ১০ কিলোমিটার দূরের শ্যামনগর থানার মামলার চার্জশীটভুক্তও ডাকতির প্রস্তুুতকালে আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার উপর হামলা করে সরকারি কাজে বাধাদানকারি, অস্ত্র মাদক আইনের মামলার আসামী জেলেখালির আনারুল ইসলাম। এ ছাড়া উল্লেখিত ধর্ষণের সময়ের আধঘণ্টা পর প্রিয়াঙ্কা মণ্ডলের বাড়িতে কথিত আগুন লাগানোর অভিযোগে ২৬ অক্টোবর দায়েরকৃত মামলা করা হয় আদালতে। ওই মামলার প্রধান সাক্ষী জব্বার ও ইউনুস।

পরবর্তীতে ধর্ষণের সাজানো মামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ ও যুব পরিষদের ব্যানারে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন শেষ না হতেই প্রিয়াকা মণ্ডলকে দিয়ে বিকেলে এক সাংবাদিককে জড়িয়ে মিথ্যাচার করে শ্যামনগর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে কাল্পনিক অভিযোগ করা হয়। একপর্যায়ে সিরাজুলের সহায়তায় মামলার ভয় দেখিয়ে দুটি সংখ্যালঘু সংগঠণের কাছে অভিযোগ করে কৌশলে জমি দখলে নেওয়ার পায়তারা করে জঙ্গল ভাংগী ও তার সহযোগীরা।

(আরকে/এএস/নভেম্বর ১১, ২০২৫)