পুরাতন তালিকায় ভোট গ্রহণের দাবি
সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন কমিশনারের অফিসে তালা
রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি অ্যাড. এম শাহ আলমকে বাদ দিয়ে পুরাতন ভোটার তালিকা অনুযায়ী ভোট গ্রহণের দাবিতে দরজায় তালা লাগানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপিপন্থী আইনজীবীসহ কিছু সাধারণ আইনজীবীদের উপস্থিতিতে জজ কার্টের পিপি অ্যাড. আব্দুস সাত্তার এ তালা লাগান।
সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, আগামি ২৭ নভেম্বর সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির বার্ষিক নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করা হয়। নির্বাচনের লক্ষ্যে অ্যাড. শফিকুল ইসলাম খোকনকে প্রধান করে সাত সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটি গঠন করা হয়। সে অনুযায়ী ৩ নভেম্বর ভোটারদের খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হয়। ৫ নভেম্বর ছিল আপত্তি দাখিলের দিন। ৬ নভেম্বর ৪৯১ সদস্যের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। ১০ নভেম্বর ছিল চূড়ান্ত ভোটার তালিকা দাখিলের বিরুদ্ধে আপত্তি দাখিলের দিন। মঙ্গলবার বিকেল তিনটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ছিল মনোনয়নপত্র সংগ্রহের দিন। মঙ্গলবার বিকেলে নির্বাচন অফিসে তালা লাগানোর ফলে কোন মনোনয়নপত্র বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. শাহারিয়ার হাসিব জানান, সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির গঠণতন্ত্রের ধারা ৭ (ক) এবং অযোগ্যতা সংক্রান্ত উপধারা ১ থেকে ৭ পর্যন্ত স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, কোন সদস্য যদি ডিফল্টার, ডিসবার বা বার কাউন্সিলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিচিারাধীন অবস্থায় থাকে তবে তিনি ভোটার হওয়ার অযোগ্য। বিশেষ করে ৭ (ক)/৩ ধারায় বলা হয়েছে যদি কোন নিয়মিত সদস্য অত্র সমিতি কর্তৃক ডিফল্টার ঘোষিত হন, তবে তিনি ভোটার হওয়ার অযোগ্য হবেন। তাছাড়া জেলা আইনজীবী সমিতির গঠণতন্ত্রের ২য় অনুচ্ছেদের ৪ (ড) ধারায় বলা হয়েছে কোন সদস্য অত্র সমিতির অর্থ আত্মসাৎ করিলে বা প্রাথমিকভাবে তাহার কোন প্রকার দূর্ণীতি সাধারণ সভায় কর্তৃক প্রমাণিত হইলে তার সদস্যপদ বাতিল হবে। এরই আলোকে জেলা আইনজীবী সমিতির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে তার বিরুদ্ধে কমপ্লেন্ট ১২/২২ মামলা করা হয়। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে ডিসবার করা হলে অ্যাড. এম শাহ আলম বার কাউন্সিলে ০২/২২ নং আপিল মামলা দায়ের করেন। তার পক্ষে কোন আদেশ এখনো পর্যন্ত বার কাউন্সিল দেয় নাই। বিষয়টি গত ৫ নভেম্বর জেলা আইনজীবী সমিতির মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বরাবর তারা অভিযোগ আকারে দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, বিগত আহবায়ক কমিটির মাধ্যমে গঠিত একটি উপকমিটি নিয়মিত ও অনিয়মিত হিসেবে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ব্যাপারে ১১৮ জন আইনজীবীর তালিকা প্রস্তুত করেন। কিন্তু অ্যাড. এম শাহ আলম নিজের পকেটের লোক হিসেবে ৫১ জনকে ভোটার তালিকায় রেখে ৬৭ জনকে গঠণতন্ত্র বহির্ভুতভাবে বাদ দেন। কার্যকরি কমিটির সদস্যদের সাথে সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদককে উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত করে গঠণতন্ত্র সংশোধনের জন্য সাধারণ সভা আহবান করার নিয়ম থাকলেও এম শাহ আলম তা অনুসরন না করে শুধু একটি সাধারণ সভাকে গঠণতন্ত্র সংশোধনের সভা হিসেবে ধরে নেওয়া গেলো বলে নিজের সুবিধামত গঠণতন্ত্র সংশোধন করেছেন ও করে যাচ্ছেন। এসব কারণে ক্ষুব্ধ সাধারণ আইনজীবীরা গত ৫ নভেম্বর অ্যাড. এম শাহ আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার পর প্রতিকার না পেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অফিসে মঙ্গলবার বিকেল তিনটার দিকে তালা লাগিয়ে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. এম শাহ আলম বলেন, আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ গ্রহণকালে দাখিলকৃত শিক্ষাসনদসহ বিভিন্ন কাগজপত্রে জালিয়াতি ধরা পড়লে বার কাউন্সিলে সে সংক্রান্ত মামলা থাকলে সদস্যপদ থাকবে না বা নির্বাচন করা যাবে না। এ ছাড়া গঠণতন্ত্র অনুযায়ি সাব কমিটি একটি প্রতিবেদন দেয়। ওই রিপোর্টে গঠণতন্ত্র অনুযায়ি ৬০ জনের তালিকা তৈরি করা হয়। যাহা গত ২০ সেপ্টেম্বরের সাধারণ সভায় উপস্থিত আইনজীবীদের সামনে পাস করা হয়। তখন কেউ আপত্তি না দেওয়ায় তাদেরকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তারা তালিকা দিতে পারেন। যারা কোর্ট গ্রাউণ্ডে উপস্থিত থেকেও প্রাকটিস করে না বা বাহিরের জেলায় আছেন তাদের কালো টাকার প্রভাব মুক্ত করতে সাধারণ সভায় ওই আইনজীবীদের নাম বাদ দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির ২৭ নভেম্বর নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাড. শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, নির্বাচন অফিসে তালা মারার বিষয়টি তিনি কার্যকর কমিটির সদস্যদের অবহিত করেছেন।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শামিনুল হক জানান, খবর পেয়ে নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখার জন্য আদালতে পুলিশ পাঠানো হয়।
(আরকে/এসপি/নভেম্বর ১২, ২০২৫)
