মাদারীপুর প্রতিনিধি : অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার পথে মাদারীপুরের দুই যুবক লিবিয়ার সাগরে ডুবে মারা গেছেন। ১৯ দিন পর মৃত্যুর খবর জানতে পারেন পরিবার। দুই যুবকের মৃত্যুর সংবাদে পরিবারের চলছে শোকের মাতম। পাড়া প্রতিবেশিও এসে ভীর করছেন নিহতদের বাড়িতে।

নিহতরা হলেন- মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের চর বাজিতপুর গ্রামের লাল মিয়া বেপারীর ছেলে জাফর বেপারী (৪৫)। অপর নিহত হলেন একই গ্রামের হামেদ আলী হাওলাদারের ছেলে সিরাজুল হাওলাদার (২৫)। এদিকে নিহতের ঘটনা জানান পর এই গ্রামের অভিযুক্ত দালাল চান্দু সরদারের ছেলে লোকমান সরদার পালিয়েছেন।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর উন্নত জীবন যাপনের আশায় আর ভাগ্যের চাকা পরির্বতনের জন্য অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন দুই যুবক জাফর বেপারী ও সিরাজুল হাওলাদার। কয়েকটি দেশ ঘুরে লিবিয়ায় যান তারা। লিবিয়ার দালালদের মাধ্যমে ১৪ অক্টোবর ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ওঠেন জাফর বেপারী ও সিরাজুল হাওলাদারসহ অর্ধশত যুবক। মধ্য সাগরে নৌকার তেল শেষ হয়ে যায়। পরে নৌকাটি ভাসতে থাকে সাগরে।

একসপ্তাহ ভাসমান থাকার পর তীব্র শীতে সাগরেই মৃত্যু হয় জাফর ও সিরাজুলসহ বেশ কয়েকজন যুবকের। প্রথমে বিষয়টি দালালচক্র গোপণ রাখেন। পরে ব্যাপারটি জানাজানি হয়। এরপর মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাতে লিবিয়ার দালালদের মাধ্যমেই দুই যুবকের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন নিহতের পরিবার। মৃত্যুর খবরে দুই পরিবারের চলছে শোকের মাতম।

পারিবারিক সূত্রে আরো জানা যায়, মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য চর বাজিতপুর গ্রামের চান্দু সরদারের ছেলে লোকমান সরদার প্রলোভন দেখিয়ে দুটি পরিবারের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নেই। কোন প্রকার ঝুকি না নিয়ে সরাসরি ইতালি পৌছে দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু দালাল চক্র তা করেননি। ছোট নৌকায় করে জীবনের ঝুকি নিয়ে ইতালীতে যাবার পথে তারা প্রাণ হারিয়েছেন। কয়েক মাস আগে দালাল লোকমানের দুই ছেলে সুজন ও সুমন অবৈধভাবে ইতালি যান। এরপর থেকে তিনি এলাকার মানুষকে খুব সহজে ইতালি নেয়ার প্রলোভন দেখায়। আর এতে করে অনেকেই এই ফাদে পা বাড়ান।

নিহত জাফরের বাবা লাল মিয়া বেপারী বলেন, জাফরের এই মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। দালাল লোকমান একসাথে আমাদের পরিবার থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। তখন দালাল বলেছিলেন কোন ঝুকি ছাড়াই জাফরকে ইতালি পৌঁছে দিবেন। কিন্তু সাগরেই মৃত্যু হলো আমার ছেলে জাফর আর ওর সাথে থাকা আরেকজন একই গ্রামের সিরাজুলের। এই ঘটনায় জড়িত লোকমান ও তার পরিবারের সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

অভিযুক্ত দালাল লোকমানের ভাবী ঝর্ণা আক্তার বলেন, আমার ভাসুর কোন দালাল নন, তার দুই ছেলে ইতালি যাওয়ার পর এলাকার অনেকেই তার কাছে আসেন। এতে তার কোন দোষ নেই। অন্য এক বড় দালাল আছেন, তিনিই সব জানেন। তার পরিচয় আমরা জানি না। তবে, লোকমান ভাই জানেন।

ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত দালাল লোকমান পলাতক থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ইতালি যাওয়ার পথে লিবিয়ায় দুই যুবকের মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছি। তবে এখনও পরিবার থেকে কেউ জানায়নি। এই ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এএসএ/এসপি/নভেম্বর ১২, ২০২৫)