দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলা, বেকায়দায় পুলিশ
পটিয়ায় বাড়ির সীমানায় ‘মাটির দেয়াল’ নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ৪ জন চমেকে ভর্তি
জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের পটিয়ায় বসতবাড়ির সীমানা সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিত হামলায় অন্তত চারজন গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে গত ২ নভেম্বর বিকাল সাড়ে তিনটায় পটিয়া থানাধীন ৯ নং (ক) বড়লিয়া ইউনিয়নের মেলঘর এলাকায়।
পটিয়া থানায় ভুক্তভোগী মৃত মতিউর রহমানের ছেলে ছৈয়দ নুর (৪০) বাদি হয়ে ঘটনায় জড়িত চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন; মামলার জিআর নম্বর ০৫/৩৫৫।
মামলাটি তদন্ত করছেন পটিয়া থানার এসআই মো. ইমরুল হোসেন। পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে জানা গেছে, ঘটনার দিন সার্ভেয়ার দ্বারা সীমানার পরিমাপ চলাকালে অভিযুক্তরা ধারালো কিরিচ, লোহার রড ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় বাদি ছৈয়দ নুর, তার বড় ভাই মো. মফিজুল আলম ও ভাতিজা রায়হানকে মাথা ও হাতের আঙ্গুলে রক্তাক্ত করে প্রবলভাবে আহত করা হয়।
হামলার সময় ভাতিজা সাকিবুল ইসলাম বিপ্লবও লোহার রডে আঘাত পেয়েছেন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে পটিয়া উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে, অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরে তাদের চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বর্তমানে আহতরা চমেক হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন।
আসামিদের নাম— মো. ইয়াছিন (৩৫), মো. ইলিয়াছ প্রকাশ মন্নান (৪০), মো. ওয়াসিম (৩২) ও আব্দুর শুক্কুর (৫৫)। তারা সবাই বড়লিয়ার মেলঘর ও কাশিয়াইশ ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় আরও ৭–৮ জন অজ্ঞাতনামা হিসেবে দেখানো হয়েছে।
অন্যদিকে প্রতিপক্ষের পক্ষ থেকে একটি কাউন্টার মামলা (নম্বর ০৬/৩৫৬) দায়ের করা হয়েছে। সেখানে পটিয়া কুসুমপুরা ইউনিয়নের আবুল বশরের ছেলে মো. আরমান মিয়া অভিযোগ করেছেন যে, বাদী পক্ষের লোকজন তার খালার বাড়ির উঠানে ঘুষি মারার ও টানাহেঁচড়া করার অভিযোগ এনেছেন এবং ওই ঘটনায় তার খালাকে আঘাত করা হয়েছে। ওই মামলারও তদন্তকারী একই পুলিশ কর্মকর্তা।
স্থানীয়দের কাছে পাওয়া তথ্য ও মামলার নথি অনুযায়ী, বিরোধটি নতুন নয়— ২০১৯ সাল থেকে মৃত মতিউর রহমানের ছেলে ছৈয়দ নুরদের বিরুদ্ধে বরাবর হয়রানি, মামলা ও আক্রমণের অভিযোগ রয়েছে।
মূল দ্বন্দ্বটি বসতভিটার সীমানা ও পুরনো দেওয়াল সরিয়ে সীমানা নির্ধারণের চেষ্টা নিয়ে গড়ে উঠেছে। বিবরণে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ৩০ ফুটের একটি দেয়াল সরিয়ে সীমানা ঠিক করলে সমস্যা আর হবে না; কিন্তু উভয়পক্ষ তার চেষ্টায় না এসে বিরোধ গভীর করেছে।
ঘটনার সূত্রে আরও জানা যায়, ১৪৫ ধারার অমান্য করে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগে পূর্বে মো. ইয়াছিনের বিরুদ্ধে (থানা মামলা নম্বর-২০) এবং ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি ছৈয়দ নুর ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা হয়ে থাকলেও বিরোধ থামেনি। ২০২৩ সালের ১৭ মে একই পরিবারের ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি জিডি করার বিষয়টিও সঠিকভাবে সমাধান হয়নি বলে স্থানীয়রা জানান।
অভিযোগ করার পরে অভিযুক্ত মো. ইয়াছিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাঁর ফোনে ‘সুমন’ নামের একজন কল রিসিভ করে জানান, ইয়াছিন নেই এবং পরে ফোন লাইন বন্ধ পাওয়া গেছে। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. ইমরুল হোসেনকে ফোন করে মন্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও একাধিকবার কল করেও ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী ছৈয়দ নুর বলেন, “আওয়ামী লীগের প্রভাব দেখিয়ে তারা গত ৭–৮ বছর ধরে আমাকে ও পরিবারকে মামলা ও হামলার মাধ্যমে নির্যাতন করছে। আমাদের সীমানার বাইরে ঝুঁকিপূর্ণভাবে দেয়াল রেখে পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে, আর উল্টো আমাদেরকে মারছে।” তিনি এবং তাঁর আত্মীয়রাও এখনো চমেকে ভর্তি অবস্থায় পরস্পর দেখাশোনা করছেন।
প্রতিপক্ষের বাদি মো. আরমান মিয়ার বক্তব্য ছিল, “আমাদের খালার বাড়ির উঠানে জায়গা মাপতে গেলে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মেরে হামলা করেছে। দীর্ঘদিন জমির বিরোধ চলছিল—তার পরই এই পরিস্থিতি।” স্থানীয়রা যুক্তি দেন যে, পুরনো মাটির দেয়ালটি সরিয়ে সীমানা ঠিক করে দিলে সংঘর্ষ এড়ানো যেত। কিন্তু সে দিকে কেউ যাচ্ছে না।
পটিয়া থানার ওসি মো. নুরুজ্জামান বলেন, “ঘটনাটি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। একই ঘটনায় উভয়পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে এবং অনেকেই আহত। আমরা তদন্ত করে দ্রুত সঠিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।” তিনি তদন্তকারীদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান।
(জেজে/এসপি/নভেম্বর ১৩, ২০২৫)
