টাঙ্গাইল-আরিচা আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণে কচ্ছপ গতি
ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ৩৫ কিলোমিটারে জনদুর্ভোগ চরমে
সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : কচ্ছপ গতিতে এগিয়ে চলছে টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগাধীন আরিচা-ঘিওর-দৌলতপুর-নাগরপুর-টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ যজ্ঞ। যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প শুরু হয় ১ লা জানুয়ারী ২০২২ সালে। চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণ কাজ চলতি বছরেরই শেষ হবার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা, এলাইমেন্ট নকশা প্রনয়ণে জটিলতা, বনবিভাগ কর্তৃক গাছপালার মূল্য নির্ধারণে অসহযোগিতা ও পল্লীবিদ্যুতের অসহযোগিতায় থমকে আছে আঞ্চলিক এ মহাসড়কের কাজ। এরই মধ্যে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে মাটি ভরাট, পুরাতন রাস্তায় খানাখন্দের সৃষ্টি ও নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখায় জনদূর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
টাঙ্গাইল জেলার সাথে সদর উপজেলাসহ দেলদুয়ার ও নাগরপুরের একমাত্র এ আঞ্চলিক মহাসড়কটি ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় জরুরি স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন জরুরি কাজে জেলা শহরে আসা হাজার হাজার নাগরিক ভোগান্তিতে পড়ছেন প্রতিনিয়ত। খানাখন্দভরা এ আঞ্চলিক মহাসড়কের গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যানবাহনের মেইনটেইন খরচ বেড়েছে বহুগুণ।
টাঙ্গাইল জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখা হতে জানা যায়, আঞ্চলিক এ মহাসড়কের ভূমি অধিগ্রহণে জেলার টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলার ৪৬ টি মৌজায় ২৪৫.৫৫৭৭ একর জমি ২০ টি এলএ কেস পর্যবেক্ষণ পূর্বক জমির সঠিক মালিকানা নিশ্চিতে কাজ করছে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ কার্যালয়। এর মধ্যে বিভিন্ন জটিলতা কাটিয়ে কেস নং ৩২,৩৩ ও ৩৪ এর অন্তর্ভুক্ত মৌজা সূমহের সঠিক জমির মালিকদের মধ্যে ক্ষতিপূরণ কার্যক্রম চলমান আছে। কেস নং ৩১ অলোয়া, বরটিয়া ও ভবানী অংশে ৮ ধারা নোটিশ প্রদানের কার্যক্রম চলমান। শীঘ্রই জমির মালিকদের মধ্যে প্রাপ্ত টাকা বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। বাকী ১৬ টির মধ্যে কেস নং ২৮, গোমজানী, বান্ধাবাড়ি ও ভুড়ভূড়িয়ায় মৌজায় ৭(১) ধারা নোটিশ প্রস্তুত ও কেস নং ২২, ২৩, ২৫,২৬ ও ৩০ সহবতপুর, নলসন্ধ্যা, ভাটপাড়া, বাদে নলসন্ধ্যা, সানবাড়ি, পাছ এলাসিন সাকোইজোড়া, বিন্যাওরী ও সন্তোষ মৌজাসূসহে আপত্তি সমূহ সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক আপত্তি নিস্পত্তি কল্পে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।
অপরদিকে সংশ্লিষ্ট সাব- রেজিস্ট্রি অফিস হতে জমির মূল্যহার পাওয়া যায়নি চাষাভাদ্রা, সাটিয়াগাজী, আররা কুমেদ, ভাদ্রা, টেংরীপাড়া মৌজার। সড়ক বিভাগ টাঙ্গাইলের এলাইমেন্ট নকশা জটিলতায় আটকে আছে দুয়াজানি, বাড়াপুষা, কাঠুরি, বাবনাপাড়া, ঘিওরকোল ও ডাঙ্গা মৌজার ভূমি অধিগ্রহণ। কেস নং ১৫ ও ২৪ মৌজা চাষাভাদ্রা, সাটিয়াগাজী, লক্ষিকোট ও আগ এলাসিন মৌজায় বন বিভাগ কর্তৃক গাছপালার মূল্য নির্ধারনের কার্যক্রমে ধীরগতিতে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম স্থবির হয়ে গেছে। কেস নং ১৬, ১৭ ও ১৯ আররা কুমেদ, ভাদ্রা, ভাদ্রা বিকন, টেংরীপাড়া, ধুবড়িয়া, মাইঝাল, অলোয়াতারিনী, বান্ধাবাড়ি ও ভুড়ভুড়িয়া মৌজা সূমহে প্রাক্কলন প্রস্তুতি ও প্রেরণের কার্যক্রম চলমান আছে।
তবে সম্প্রতি সড়ক বিভাগ টাঙ্গাইল অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সওজ ঢাকা জোন বরাবর প্রকল্পের ব্যায় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ আগামী দুই বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রেরণ করেছে। এর ফলে আগামী দুই বছরের মধ্যে আঞ্চলিক এ মহাসড়কের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হতে পারে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারন করা হয় ১৬৩৫ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে টাঙ্গাইল অংশে ১১৩৫ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারন করা হয়েছে।এতে চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিয়েনকো, হাসান টেকনো,মীর ব্রাদার্স ও এনডিই প্রকল্প কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ শুরু করে।
এ আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচলকারী সিএনজি অটোরিকশা যাত্রী জাহানারা আক্তার বলেন, প্রায় ৫ বছর ধরে আমরা এ পথে বিভিন্ন কাজে জেলা শহরে যাতায়াত করি। আমাদের ভোগান্তির শেষ নাই। সুস্থ মানুষ এ পথে গাড়ির ঝাকুনিতে অসুস্থ হয়ে যায়। খানাখন্দভরা এ পথে সময়ের অনেক অপচয় হয়। খুব বিপদে না পড়লে আমরা টাঙ্গাইল শহরে যাতায়াত করি না। দ্রুত রাস্তাটি চলাচল উপযোগী করার অনুরোধ করছি।
নাগরপুর থেকে ছেড়ে আসা পণ্যবাহী ট্রাক চালক শহীদ মিয়া বলেন, এ রাস্তায় চললে গাড়ির হায়াত কমে। বড় বড় গর্তে ভরা এ সড়ক। এতে দূর্ঘটনা যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে গাড়ির মেইনটেইন খরচও। দ্রুত এ রাস্তাটি চলাচলের উপযোগী করার জোর দাবি জানাই।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনডিই এর প্রজেক্ট ম্যানেজার মোঃ আবু তালিব ফাহমিদুর রহমান বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় শুধু সাধারণ মানুষের দূর্ভোগ হয়নি বরং আমাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শ্রমিকের মজুরি, যানবাহনের মেরামত ও ভাড়াসহ বিভিন্ন ভাবেই ক্ষতির সম্মুখীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এখনো পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারলে ক্ষতি কিছুটা লাঘব হয়।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ডিসি স্যারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় দ্রুত সময়ে সকল জটিলতা কাটিয়ে উঠে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে টাকা প্রদান করা সম্ভব হবে।
টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. সিনথিয়া আজমিরী খান জানান, দেশের পট পরিবর্তন, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা সহ বিভিন্ন কারনে এ আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ কিছুটা স্থবির এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। এতদ কারণে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে কাজের মেয়াদ আরো দুই বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। আশা করছি, এ সময়ে মধ্যে সকল সমস্যার সমাধান করে আমরা অত্র এলাকাবাসীকে চলাচল উপযোগী ও নিরাপদ একটি আঞ্চলিক মহাসড়ক উপহার দিতে পারবো।
(এসএম/এসপি/নভেম্বর ১৩, ২০২৫)
