পারিবারিক বাগানে মিলছে পুষ্টি ও অর্থ
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : সারা বছর পারিবারিক পুষ্টি বাগনে ফলছে শাক ও সবজি । এ সব ফসল থেকে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পুরণ হচ্ছে। বাড়তি সবজি বাজারে বিক্রি করে মিলছে অর্থ।দেড় শতাংশের পারিবারিক পুষ্টি বাগান থেকে বছরে উৎপাদিত হচ্ছে ৫শ’ ৫০ কেজি সবজি । প্রতি কেজি সবজির মূল্য ৩০ টাকা হিসাবে এ সবজির বিক্রি মূল্য দাড়ায় ১৬ হাজার ৫শ’ টাকা। এ ফসল উৎপাদনে খরচ হয় মাত্র ৩ হাজার ৫শ’ টাকা। পারিবারিক পুষ্টিবাগানের কারণে কৃষক পরিবারে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাক সবজির পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে । পারিবারিক পুষ্টিবাগানের শাক-সবজি দিয়ে পরিবারের ৬০% পুষ্টির চাহিদা পূরন হচ্ছে। পাশাপাশি বছরে পরিবার প্রতি আয় বেড়েছে অন্তত ৫ হাজার টাকা।
এসব তথ্য জানিয়েছেন, কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায়। ওই কর্মকর্তা বলেন, চলতি অর্থ বছরে কোটালীপাড়া উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় মোট ৩শ’ ৭১ টি পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন করা হয়। কৃষকদের মধ্যে পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপনের উপকরন, ১৩ প্রকার শাক-সবজির বীজ ও জৈব সার বিতরণ করা হয়। এটি স্থাপনে কৃষককে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে । পরে কৃষকরা অনাবাদী পতিত জমি ও বসত বাড়ির আঙ্গিনার জমিতে পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন করেন। গত ৬ বছর ধরে কোটালীপাড়া উপজেলায় পারিবারিক পুষ্টিবাগান প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ বাগানে সারাবছর কৃষক লাল শাক, ডাটা শাক, বারবটি, পুইশাক, গিমাকলমি, পাটশাক, শসা, লাউ, মিস্টিকুমড়া, করলা, টমেটো, চালকুমড়া, ঢেঁড়শ ফলাচ্ছেন । এ বাগানের শাক সবজি খেয়ে কৃষক পরিবারগুলো সিংহভাগ চাহিদা পুরণ করছেন। এছাড়া বাড়তি শাকসবজি বিক্রি করে আয়ের সুযোগ পেয়েছে ।
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মুক্তা মন্ডল বলেন, পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো পরিবারের জন্য বছরব্যাপী তাজা, নিরাপদ ও পুষ্টিকর শাকসবজি ও ফলমূল সরবরাহ নিশ্চিত করা। এটি পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল ও অন্যান্য পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। এর মাধ্যমে অব্যবহৃত জমি কাজে লাগানো সম্ভব হয় । কৃষকের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। বাগানের অতিরিক্ত ফসল বিক্রি করে পরিবারের আয় বেড়েছে । এ চাষাবাদ পরিবেশ বান্ধব । কারণ রাসায়নিক সার ও কীটনাশক পরিহার করে জৈব পদ্ধতিতে পারিবারিক পুষ্টিবাগানে চাষাবাদ করা হয়।এতে মানবদেহের জন্য নিরাপদ শাক-সবজি উৎপাদিত হয়। এছাড়া এ চাষাবাদ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে । তাই প্রতি বছর পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপনে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে ।
কোটালীপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ী ইউনিয়নের হরিনাহাটি গ্রামের ইসমাইল হাওলাদার বলেন, এটি চমৎকার একটি প্রকল্প । মাত্র দেড় শতাংশ জমিতে সারাবছর সাক-সবজি ফলাচ্ছি। বিগত ৬ বছর ধরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তা ও পরামর্শে এটি করে আসছি। এখানে উৎপাদিত শাক-সবজি নিজেরা খাচ্ছি। আবার বাড়তি সবজি বাজারে বিক্রি করছি। এতে পুষ্টি ও অর্থ মিলছে । সংসারে বছরে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা বাড়তি আয় হচ্ছে। এত অল্প জমিতে সারাবছর ১৩ রকমের ফসল ফলিয়ে আমরা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারছি। সেই সাথে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছি।
কুশলা ইউনিয়নের মান্দ্রা চৌরখুলি গ্রামের কৃষক মিলন শেখ বলেন, পারিবারিক পুষ্টিবাগান উত্তম কৃষি চর্চার একটি অন্যতম অংশ। এ চাষাবাদে আমরা রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করি না।এখানে জৈব সার ব্যবহার করি। পোকা মাকড়ের আক্রমন প্রতিরোধে বিভিন্ন রকম ফাঁদ ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করি। তাই এ বাগানে উৎপাদিত সবজি মানবদেহের জন্য নিরাপদ।
হিরণ ইউনিয়নের মাঝবাড়ি গ্রামের কৃষক মাসুদ দাড়িয়া বলেন, আমার পারিবারিক পুষ্টি বাগানে উৎপাদিত সবজি বিষমুক্ত ও নিরাপদ। এটি খেতে সুস্বাদ।তাই বাজারে এ সবজি একটু বেশি দামে বিক্রি করতে পারি।
কুশলা ইউনিয়নের মান্দ্রা চৌরখুলি গ্রামের কৃষাণী হাসি বেগম বলেন, গৃহস্থালী কাজের পাশাপাশি পারিবারিক পুষ্টিবাগানে শাক-সবজি রোপন ও পরিচর্যা করি। এখান থেকে উৎপাদিত ৪৫ থেকে ৫০ ভাগ সবজি আমরা খাই। বাদবাকী সবজি বিক্রি করি। এ থেকে যে আয় হয়, তা দিয়ে সংসারের অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে পারি। এ বাগান আমাদের আয়ের পথ সুগম করেছে। এজন্য আমি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগকে ধন্যবাদ জানাই।
(টিবি/এএস/নভেম্বর ১৫, ২০২৫)
