তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনিতে যুবক নিহতের ঘটনায় মামলা দায়েরকৃত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আতংকে ৪ গ্রাম পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। এ মামলায় পুলিশ এ পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। 

গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত থাকার মুকসুদপুর উপজেলার হাজিরবাগ, জানিবাগ, পশারগাতী ও কৃষ্ণাদিয়া গ্রাম পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া গরু চুরির ঘটনায় ৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এ মমলায় ৭ জন গ্রেফতার হয়েছে।

মামালার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মুকসুদপুর থানার এসআই আব্দুল হাকিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত ১১ নভেম্বর গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার হাজিরবাগ গ্রামে গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে শামীম মিয়ার (৩৬) মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের মা মেহেরুন নেছা ওরফে পাচি বেগম (৬০) ১২ নভেম্বর মুকসুদপুর থানায় ওই ৪ গ্রামের ৪৩ জনের নাম উল্লেখ ও ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নিহত শামীম মিয়া (৩৬) মুকসুদপুর উপজেলার পশারগাতি ইউনিয়নের বাহিরবাগ গ্রামের মৃত মুন্নু মিয়ার ছেলে। তিনি অটোভ্যান চালক ছিলেন বলে মামলার এজাহারে উল্রেখ করা হয়েছে।

মমলার বিবরণে আরো বলা হয়েছে, গত (১১ নভেম্বর) সোমবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে খাওয়া-দাওয়া শেষে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন শামীম। পরদিন সকালে তিনি বাড়িতে না থাকায় পরিবার মনে করে কাজে বের হয়েছেন। কিন্তু দুপুরে খবর আসে যে, মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শামীম মিয়া মারা গেছেন।

পরিবার হাসপাতালে গিয়ে তার মরদেহের শরীরে বিভিন্ন স্থানে জখম দেখতে পায়। পরে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, শামীমকে তার পরিচিত কয়েকজন ফারুক শেখ, সুমন হাওলাদার, লিটন সরকার, সোহাগ, ইলিয়াস, মোজাহিদ ও বিপ্লব রাতে ডেকে নিয়ে যান। পরে তারা কৃষ্ণাদিয়া এলাকায় গরু চুরি করে একটি মিনি ট্রাকে পালানোর সময় ধরা পড়ে। এসময় উত্তেজিত জনতা ধাওয়া দিলে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হাজারিবাগ গ্রামে রাস্তার পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায়। এরপর গ্রামবাসী তাদের আটক করে পিটুনি দেয়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় ৮ জনকে উদ্ধার করে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শামীম মিয়া মারা যান। পরে পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য গোপালগঞ্জ আড়াই শ’ বেড জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। ১২ নভেম্বর ময়না তদন্ত শেষে ওই যুবকের মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

নিহতের মা অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, মুকসুদপুর উপজেলার হাজিরবাগ, জানিবাগ, পশারগাতী ও কৃষ্ণাদিয়া গ্রামের ৪৩ জনসহ অজ্ঞাত আরও ১৫০ জন তার ছেলেকে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।

মলালার তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম জানিয়েছেন, এ ঘটনায় আহত বরিশাল জেলার সদর উপজেলার হাশেমের ছেলে লিটন (৩০), একই জেলার উজিরপুর থানার সকরাইল গ্রামের ইসমাইল হাওলাদারের ছেলে সুমন হাওলাদার (৩২), বাবুগঞ্জ থানার চর ফতেপুর গ্রামের আঃ লতিব সরদারের ছেলে মোঃ ইলিয়াছ সরদার (৩৫), বগুড়া জেলার সদর উপজেলার মালগ্রামের বাদশা শেখের ছেলে ফারুক শেখ (৪৫), একই জেলা ও উপজেলার রসুলপুর গ্রামের আকমলের ছেলে সোহাগ (৪১), নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী থানার পাথড়া গ্রামের বিনোদ সরকারের ছেলে বিপ্লব সরকার (৩২) ও কিশোরগঞ্জ জেলার নানদাইল থানার পূর্বধলা গ্রামের হোসেন মিয়ার ছেলে ফয়সাল মিয়াকে (৪৫) মুকসুদপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের গরু চুরি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ৩ জন এখনো ওই হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ সংক্রান্ত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।তাদের আদালতের মধ্যেমে জেলা কারগারে পাঠানো হয়েছে। আমরা ঘটনার তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করব।

প্রত্যক্ষদর্শী হাজিরবাগ গ্রামের ইদ্রিস আলী (৪৫), রহমত মিয়া (৫২), কালাম শরীফ (৪১) বলেন, ঘটনার সময় ৪ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিল। হাজিরবাগ গ্রামের প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক জুড়ে শধু মানুষ আর মানুষ ছিল। হত্যা মামলা দায়েরর খবর শুনে ৪ গ্রামের পুরুষরা গ্রেফতার আতংকে গা ঢাকা দিয়েছে। এ কারণে এলাকা পুরুষ শুন্য হয়ে পড়েছে।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার পশারগাতী ইউনিয়নের হাজীরবাগ গ্রামে গরু চুরি করে পালানোর সময় গণপিটুনিতে শামীম মিয়া (৪২) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরও সাতজন। পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে, যেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শামীম মিয়া মারা যান।

(টিবি/এসপি/নভেম্বর ১৫, ২০২৫)