গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে  নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ২ যুবক প্রাণ হারিয়েছেন। একই উপজেলার আরও  ৫ জন যুবক এখনো  নিখোঁজ রয়েছে । পরিবারগুলোর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। নিহতদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।

দালালের মাধ্যমে প্রায় ২১ লাখ টাকা করে দিয়ে গত অক্টোবরে ইতালির উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে লিবিয়া যান মুকসুদপুর উপজেলার ননীক্ষীর ইউনিয়নের পশ্চিম লখন্ডা গ্রামের ইয়াকুব আলী শেখের ছেলে এনামুল শেখ (২৭), একই গ্রামের জাহিদ শেখের ছেলে আনিস শেখ (৩৫)।

গত ১৩ নভেম্বর রাতে ভূমধ্যসাগরের লিবিয়ার আল-খুমস উপকূলে দুটি নৌকা ডুবে যায়। এর একটিতে ছিলেন বাংলাদেশের ২৬ নাগরিক। ঘটনার পর ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করে উদ্ধার কর্মীরা ।

এ ঘটনায় হতাহতের ৬ জনের বড়ি ওই ইউনিয়নের পশ্চিম লখন্ডা গ্রামে। আর ১ জনের বাড়ি মুকসুদপুর উপজেলার পশারগাতী ইউনিয়নের গুনহার গ্রামে। নিহতরা হলেন পশ্চিম লখন্ডা গ্রামের ইয়াকুব আলী শেখের ছেলে এনামুল শেখ (২৭) ও ননীক্ষীর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বর এবং পশ্চিম লখন্ডা গ্রামের জাহিদ আলী শেখের ছেলে আনিস শেখ (৩৫)।

নিখোঁজ রয়েছে পশ্চিম লখন্ডা গ্রামের আওলাদ শেখের ছেলে ইব্রাহিম শেখ, খালেক মোল্লার ছেলে হাবিবুল্লাহ মোল্লা সোহেল, হায়দার মিনার ছেলে আশিক মিনা, ইকরাম মিনার ছেলে দুলাল মিনা ও পাশ্ববর্তী গুনহার গ্রামের হাফিজ মিনার ছেলে নিয়াজ মিনা।

ওই নৌকা দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া পশ্চিম লখন্ডা গ্রামে হায়দার শেখের ছেলে প্রত্যক্ষদর্শী আবুল শেখ ধলা (৩০) ভিডিও কলে পরিবারের সদস্যদের সাথে ১৬ নভেম্বর কথা বলেছেন । তিনি তখন নৌকা ডুবিতে এনামুল ও আনিসের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে । এ ঘটনায় নিহত এনামুল শেখ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া আবুল শেখ ধলার আপন চাচাত ভাই।

ভিডিও কলে ধলা বলেন, আমাদের নৌকার ঠিক মাঝে অরেকটি নৌকা উঠে যায়। নৌকার মাঝে এনামুল ও আনিস বসে ছিল । মাঝে যারা ছিল তারা সবাই মারা গেছে। নৌকার সামনে যারা ছিল তাদের তেমন ক্ষতি হয়নি। আমি পেছনে ছিলাম। পেছনের সবার শরীর কেটে ছিড়ে গেছে। অনেকে সাগরে ভেসে গেছে। আবার অনেকে লাইফ জ্যাকেট নিয়ে সাগরে ভেসে ছিল। উদ্ধার কর্মীরা তাদের উদ্ধার করেছে। সবার শেষে তারা আমাকে উদ্ধার করে।

ঘটনার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্বজন, প্রতিবেশি ও গ্রামবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। মুষড়ে পড়েছে নিহত ও নিখোঁজ পরিবারের সদস্যরা ।

এ ঘটনার পর স্থানীয়রা প্রশাসনের কঠোর নজরদারি দাবি করেছেন। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে দালালচক্র প্রতারণা করে এলাকার অসহায় মানুষকে অবৈধ পথে ইটালী পাঠাচ্ছে।আর এমন মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চলেছে।

ননীক্ষির ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য আলমগীর মোল্যা বলেন, “লাখ লাখ টাকা খরচ করে যুবকদের বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। পরিবারগুলো ধার দেনা, গচ্ছিত ও জমি বিক্রির টাকা দালালদের হাতে তুলে দিচ্ছে। অবৈধ সমুদ্র পথে যাওয়াই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তবুও বেকারত্ব ঘুঁচিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই তাদের এ কাজে বাধ্য করছে। এ যাত্রায় আমার ওয়ার্ড থেকে ৭ জন লিবিয়া গেছে। নৌকায় ইটালী যাওয়ার পথে তারা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এটি বন্ধ হওয়া দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন। ”

মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, “নিহত দুইজন ও নিখোঁজদের বিষয়ে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উচ্চ পর্যায়ে তথ্য পাঠানো হয়েছে।”

নওখন্ডা গ্রামের শাহজালাল মিয়া ও ইমাম হোসেন বলেন, বিদেশগমন সংক্রান্ত সচেতনতার পাশাপশি, দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া বিদেশে বৈধ অভিবাসন সুযোগ বাড়ানো ছাড়া এ মৃত্যুর মিছিল থামানো যাবে না।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান অধিদপ্তরে গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ষষ্টীপদ রায় বলেন, বৈধ অভিবাসন সুযোগ সরকার সৃষ্টি করেছে । সরকারিভাবে বৈধ পথেই ইটালী যাওয়া যায়। এ ব্যাপারে আমরা জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে জনসচেতনতামূলক সভা-সমাবেশ করছি। তারপরও মানুষ অবৈধ পথে ইটালী যাচ্ছে । মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এটি দুঃখজনক। আমার বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।

(টিবি/ওএস/নভেম্বর ১৯, ২০২৫)