‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ে ত্রুটি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান ছিল’
স্টাফ রিপোর্টার : সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থেকে সরে আসার রায়টি ‘ত্রুটিপূর্ণ ছিল বলে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে’—আদালতের বরাতে এমনটিই জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় অবৈধ ঘোষণা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিধান রেখে সংবিধানে যে ত্রয়োদশ সংশোধনী আনা হয়েছিল, সেটি এক যুগেরও বেশি সময় আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে বাতিল হয়ে যায়।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আবারও সংবিধানে পুনরুজ্জীবিত ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় হলো। তবে সেটি কার্যকর হবে চতুর্দশ জাতীয় নির্বাচন থেকে।
এদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়কে অবৈধ ঘোষণা করে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এ রায় দেন।
আপিল বিভাগের অপর ছয় সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।
আদালত ওই রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল ও পুনর্বিবেচনার আবেদন সর্বসম্মতিতে মঞ্জুর করে এ রায় দেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে সর্বোচ্চ আদালত বলছেন, আপিল বিভাগের রায়টি একাধিক ত্রুটিতে ত্রুটিপূর্ণ বলে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। এ রায় সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা হলো।
রায়ে আপিল বিভাগ আরও বলেন, সংবিধানের চতুর্থ ভাগের পরিচ্ছদ ২ (ক)-এর নির্দলীয় সরকার সম্পর্কিত বিধানাবলি, যা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী আইনের ৩ ধারায় সন্নিবেশিত হয়েছিল। আজকের এ রায়ের মাধ্যমে তা পুনরুজ্জীবিত ও সক্রিয় করা হলো। নির্দলীয় সরকার সম্পর্কিত বিধানাবলি শুধু ভবিষ্যৎ প্রয়োগযোগ্যতার ভিত্তিতে কার্যকর হবে।
রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে সংবিধানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরলেও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে অধীনে। চতুর্দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কার্যকর হবে বলে রায়ে বলা হয়েছে।
আপিল বিভাগের রায়কে আপিল বিভাগ ত্রুটিপূর্ণ বলতে পারে কি না- এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘হুম, বলতে পারেন। তবে, রায় প্রকাশিত হলে এ বিষয়ে আদালতের ব্যাখ্যা জানা যাবে।’
এ রায়ের বিরুদ্ধে আবারও রিভিউ পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) একবার নিষ্পত্তি হলে একই বিষয়ে আবার রিভিউ পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই।’
ত্রয়োদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ অন্যরা ১৯৯৯ সালে একটি রিট করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ রায় দেন। সেই রায়ে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল থাকে।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে আপিল করে রিটকারী পক্ষ। এই আপিলটি মঞ্জুর করে ২০১১ সালের ১০ মে রায় দেন আপিল বিভাগ। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে (৪: ৩) ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন।
এ রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী (২০১১ সাল) আনা হয়।
১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে দেশে সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে জাতীয় নির্বাচন হয়।
এর আগে ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচন হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার ভিত্তিতে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে। সেই সরকারের প্রধান ছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। তিনি তখন প্রধান বিচারপতির পদ ছেড়ে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
(ওএস/এএস/নভেম্বর ২০, ২০২৫)
