রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুরে কুদ্দুস পীরের ওরশের দ্বিতীয় পর্বের বাকী তিন দিনের অনুষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় ওই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দুই শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রায় ৩০-৩৫ লক্ষ টাকা লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানিয়েন আয়োজক কমিটি ও উপস্থিত ব্যবসায়ীরা।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাত সাড়ে নয়টার দিকে দৈনিক বাংলা ৭১ কে এসব তথ্য জানান তারা। অনেক দোকানদার শুধুমাত্র ভাড়ার টাকা জোগার করার করতে না পাড়ায় এখনও পীরের আস্তানা ছড়তে পারেনি। এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে ফরিদপুর কোতয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল লতিফ মন্ডলের নেতৃত্বে থানা পুলিশের একটি দল উপস্থিত হয়ে আয়োজক কমিটি ও পীরের পরিবারকে দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান শুরুর আগেই বন্ধের অনুরোধ জানান।

এসময় ঘটনাস্থল থেকে এসআই আব্দুল লতিফ মন্ডল উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, স্থানীয় কিছু জনগণের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে, জননিরাপত্তা ও অদ্ভুত পরিস্থিতি এড়াতে, স্থানীয় প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ অর্ডারে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে এসেছেন।' এসময় এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল লতিফ জানান, 'এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে কোতয়ালি থানাকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (টিএনও)-এর লিখিত নির্দেশনা রয়েছে।'

ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও কোতয়ালি থানা পুলিশ সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হলেও, কাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কুদ্দুস পীরের ওরশের দ্বিতীয় পর্ব বন্ধ করেছে প্রশাসন সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এর আগে, ফরিদপুর পৌরসভা এলাকায় ফরিদপুর -মাগুরা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত দিগনগর গ্রামের কুদ্দুস পীরের বাড়িতে পীরের খানকা ভেঙ্গে ফেলা ও ৩১তম ওরশ শরীফের দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান বন্ধ করার হুমকি দেয় স্থানীয় তৌহিদি জনতা। রবিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল নয়টার দিকে এ হুমকির ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে ভুক্তভোগীরা জানান, 'স্থানীয় 'তৌহিদি জনতা' নামে হুমকি দিয়েছেন- 'কানাইপুর ইউনিয়ন ও কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন ঈমাম কল্যাণ ফাউন্ডেশন' এর কিছু মসজিদের ইমামগণ, যারা প্রায় সকলেই জামায়াত, হেফাজত ও অন্যন্য সমমনা কয়েকটি ইসলামিক রাজনৈতিক দলের সদস্য। হুমকিদাতারা ২০-২৫ জন নেতাকর্মী ১০-১২টি মোটরসাইকেল যোগে পীরের বাড়ি দিগনগরে এসে এমন হুমকি দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন পীর হযরত শাহ সৈয়দ কুদ্দুস আলম সোহরাওয়ার্দী সহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনসাধারণ।

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে সরাসরি অস্বীকার করেন জামায়াত, হেফাজত ও কানাইপুর ইউনিয়ন ইমাম ফাউন্ডেশনের স্থানীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। তারা বিষয়টিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পীরের দরবারে আগত জনগনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানান। এছাড়া, স্থানীয় ইসলামিক নেতারা উদারপন্থী ইসলামিক মানসিকতা ধারণ করেন জানিনে, ওসব কাজ কারা করেছেন সে সম্পর্কে তারা অবগত নন বলেও জানান নেতৃবৃন্দ।

এদিকে, পীরের ওরশ শরীফের দ্বিতীয় পর্ব (বিচার গান ও বাউল গান) পণ্ড হওয়ায় লোকসানের সম্মুখীন হওয়া আশাহত ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়েছেন, হতাশ হয়েছেন আয়েজক কমিটি ও পীরের পরিবারের সদস্যবৃন্দও।

(আরআর/এএস/নভেম্বর ২০, ২০২৫)