স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চলতি মাসেই দেশে ফিরতে পারেন বলে দাবি করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। তবে, কীভাবে তিনি দেশে ফিরবেন, তা নিয়ে এখনও রয়ে গেছে প্রশ্ন। কারণ, এই মুহূর্তে বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেই তার কাছে। এখন পর্যন্ত আবেদনও করেননি তিনি।

মূলত, তারেক রহমান বাংলাদেশের বৈধ পাসপোর্ট নিয়ে ২০০৮ সালে যুক্তরাজ্যে গেলেও পরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার পাসপোর্ট আর নবায়ন হয়নি। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, তারেক রহমান ও তার স্ত্রী-মেয়ে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ‘সারেন্ডার’ করেছেন। ব্রিটিশ হোম অফিস বাংলাদেশ হাইকমিশনে সেই পাসপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছে।

তখন বিএনপি আবার তার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিল, তারেক রহমান যদি পাসপোর্ট ফেরতই দিয়ে থাকেন তাহলে তা যেন সরকার দেখায়। তখন সরকারের পক্ষ থেকে তারেক রহমানের পাসপোর্ট দেখানো হয়নি।

তবে, নবায়ন না হওয়ায় তারেক রহমানের হাতে বাংলাদেশের বৈধ পাসপোর্ট নেই এখন। ফলে তাকে নতুন করে পাসপোর্ট নিতে হবে।

অবশ্য খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে ফেরার ক্ষেত্রে তারেক রহমানের জন্য পাসপোর্ট কোনও বড় বাধা নয়। বিকল্প উপায়ও আছে; আর তা হলো— ট্রাভেল পাস।

এই ট্রাভেল পাস হলো একটি অস্থায়ী ভ্রমণ নথি, যা বিদেশে অবস্থানরত পাসপোর্টহীন কোনো বাংলাদেশিকে শুধু একবার বাংলাদেশে ফিরতে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়।

বিদেশে থাকা অবস্থায় পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে ট্রাভেল পাস দেওয়া হয়। এছাড়া দীর্ঘদিন বিদেশে আছেন, কিন্তু পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ এবং নতুন পাসপোর্ট তৈরি সম্ভব নয়; এমন ব্যক্তি এই পাস পান। নাগরিকত্ব প্রমাণিত কিন্তু পাসপোর্ট নেই (যেমন— শিশু) তাদেরকেও দেওয়া হয় ট্রাভেল পাস। এছাড়া, বিদেশে অবৈধ অবস্থানে থাকা বাংলাদেশি শ্রমিক কিংবা আটক বা ডিটেনশনে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকরাও পেতে পারেন ট্রাভেল পাস।

বাংলাদেশে আসার ট্রাভেল পাস পাওয়ার জন্য শুধু দরকার বাংলাদেশি নাগরিক হওয়ার প্রমাণ। যেমন: জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, পুরোনো পাসপোর্ট (যদি থাকে), কোনো আত্মীয়ের হলফনামা, স্কুল-কলেজের সনদ, প্রবাসে আটক হলে স্থানীয় পুলিশের কাগজপত্র।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহির্গমন অনুবিভাগ শাখা সূত্রে জানা যায়, তারেক রহমান চাইলে খুব সহজে দেশে ফিরতে পারবেন। এক্ষেত্রে তার কাছে পাসপোর্ট থাকার প্রয়োজন নেই। তিনি লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ট্রাভেল পাস নিয়ে বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদও জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে ফিরেছেন এই ট্রাভেল পাস ব্যবহার করেই। ২০১৫ সালে গুম হওয়ার পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যে যখন তাকে পাওয়া গিয়েছিল, তখন তার সঙ্গে কোনো পাসপোর্ট ছিল না। অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাকে, এমনকি যেতে হয়েছিল কারাগারেও।

মামলার দায় থেকে মুক্ত হওয়ার পর ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে ট্রাভেল ডকুমেন্ট জোগাড় করেন সালাহউদ্দিন। পরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূল দেখে দেশে ফেরেন তিনি।

ফলে তারেক রহমান যদি দেশে ফিরতে চান, তবে পাসপোর্ট এখানে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।

এমনকি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফিরতে চাইলে, সেক্ষেত্রে সহায়তারও প্রতিশ্রুতি এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে চাইলে সরকার ভ্রমণ বিষয়ক কাগজপত্র দিয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে। তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিজস্ব সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তবে যখনই প্রয়োজন হবে, তার ভ্রমণ নথি বা পাসপোর্ট সম্পর্কিত বিষয়গুলো আমরা দেখবো।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহির্গমন অনুবিভাগ শাখার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রাভেল পাস আন্তর্জাতিক নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রতিটি দেশ নিজ নাগরিককে নিজের ভূখণ্ডে ফিরিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নিতে বাধ্য।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ২০, ২০২৫)