শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় ও চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশের হাতে তুলে দেয়া রহস্যময়!
শিতাংশু গুহ
শেখ হাসিনা’র মৃত্যুদন্ড হয়েছে। রায়ের পর ডিফেন্স এটর্নি’র একটি হাসোজ্জল ছবি মিডিয়ায় এসেছে। এ ছবি বলে দেয় যে, সরকার, সরকারি কৌঁসুলি, ডিফেন্স, জামাত সবাই মিলেই আগেভাগে এ রায় রেডি করেছে, সোমবার ১৭ নভেম্বর ২০২৫ এটি ঘোষণা হয়েছে মাত্র। এনসিপি চেয়েছিলো নির্বাচনের আগে একটি রায়, ড. ইউনুস তাঁদের খুশি করলেন। জামাতের এক নেতা ক’দিন আগে বলেছিলেন ৫৪ বছরের প্রতিশোধ চাই; বাংলাদেশে এখন জামাত যা চায় তাই হচ্ছে, তাই এটি প্রতিহিংসা-মূলক রায়, জামাত চেয়েছে তাই হয়েছে। ক্যাঙ্গারু কোর্টের এ রায় বিশ্ব দরবারে রাজনৈতিক প্রহসন হিসাবেই স্বীকৃতি পাবে। এ রায় প্রমান করে বাংলাদেশে আদালত পরাধীন।
বিচারটি অত্যন্ত তাড়াহুড়া করে হয়েছে, এটি এই রায়কে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এতে বিবাদী পক্ষ আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ পায়নি। ডিফেন্স এটর্নী নিজে জামাত, সরকার যা বলেছে তিনি তাই করেছেন। অর্থাৎ সরকারি উকিল, বিবাদী’র উকিল, বিচারক-সরকার-জামাত মিলে মক্কেল শেখ হাসিনা’র ফাঁসী দিয়ে দিয়েছেন। বিচারটি যে স্বচ্ছ হবেনা তা সবাই জানে। এজন্যে শেখ হাসিনা বারবার তাঁর বিচারটি বিদেশে আন্তর্জাতিক আদালতে চেয়েছেন, কারণ তিনি জানতেন তিনি সুবিচার পাবেন না। এরই মধ্যে এনসিপি নেতা নাহিদ বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে এক মাসের মধ্যে রায় কার্যকর করতে হবে। মামার বাড়ীর আবদার।
রায়ের পর ভারত সামান্যই প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে। সবাই মোটামুটি জানে, ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবেনা। প্রশ্নই ওঠেনা। ভারত একটি দায়িত্বশীল দেশ, ভারত একটি প্রহসনের বিচারের রায়কে বাস্তবায়ন করতে দিতে পারেনা। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধী বিনিময়ে চুক্তি আছে তা ঠিক। কিন্তু চুক্তিতে এমন ধারাও আছে যে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা-মূলক কোন বিচারের শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কোন দেশ ফেরত পাঠাতে বাধ্য নয়? ড. ইউনুস সেটি জানেন, তবু মুখ রক্ষায় চিঠি পাঠাবেন, জঙ্গীরা কিছুটা লোক দেখানো হৈচৈ করবে বটে। শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন, ‘ইউনুস আমাকে কি ফাঁসি দেবে, আমি অরে ফাঁসী দেব, মানুষের দাবি তেমনই’।
বাংলাদেশের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত কোন মহিলার ফাঁসিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়নি। এই রেকর্ড অটুট থাকবে। একজন ঠাট্টা করে বলেন, শেখ হাসিনা নেই, তার বদলে তাঁর জামাতী উকিলকে দিয়ে রায় কার্যকর করা যায়না? কলকাতার একজন সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন রেখেছেন, শেখ হাসিনা’র বদলে মমতা ব্যানাজীকে দিয়ে রায় কার্যকর করা যায়না? ঠাট্টা তো ঠাট্টাই। শেখ হাসিনার এ রায় কার্যকর হবার জন্যে নয়, এটি দেয়া হয়েছে যাতে শেখ হাসিনা তড়িৎ দেশে ফিরতে না পারেন। পৃথিবীর তাবৎ বড় বড় মিডিয়া এ রায় নিয়ে সাদামাটা নিউজ করেছে। হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ সুষ্ঠূ বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।
শেখ হাসিনা’র রায়ের দিন, অর্থাৎ সোমবার ১৭ই নভেম্বর ২০২৫ জনগণকে ব্যস্ত রেখে সরকার চুপিসারে চট্টগ্রাম বন্দর ৩০ বছরের জন্যে বিদেশের হাতে তুলে দিয়েছে। এবং এ চুক্তির শর্তগুলো প্রকাশ করা হয়নি। উপমহাদেশে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্রোকে ইয়াহিয়া খান জোরজবরদস্তি ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা স্বচ্ছ ও সুষ্ঠূ বিচার করে যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের ফাঁসির রায় কার্যকর করেছেন, ক্ষমতায় এখন পাকিস্তানপন্থী রাজকার, সুযোগ পেয়ে ওঁরা শেখ হাসিনাকে ফাঁসির রায় দিয়েছে। একাত্তরে পাকিস্তান বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির রায় দিয়েছিলো, বিশ্ব নেতারা সেটি হতে দেয়নি। অনুরূপভাবে শেখ হাসিনা’র ফাঁসি কার্যকর করার ক্ষমতা কারো নেই!
লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।
