মেলার স্টলে বিএনপি নেতার চাঁদাবাজির ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল
তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : মেলার স্টলে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ বিএনপি সুখরঞ্জন টাকা ওরফে ধলুর চাঁদাবাজির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ওই ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অনিমেশ গাইন এটিকে ন্যাক্কারজনক আখ্যা দিয়ে বলেন, মেলায় চাদাঁবাজির ভিডিও ফেসবুকে দেখেছি। সেখানে ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শুখরঞ্জন টাকা ওরফে ধলুকে দোকান থেকে টাকা তুলতে দেখা গেছে। উপজেলার সিনিয়র নেতাদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন ওই নেতা।
কার্তিক পূজা উপলক্ষে গত ১৮ নভেম্বর থেকে নৈয়ারবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মেলার আয়োজন করেন স্থানীয়রা। মেলার শেষ দিন আজ শুক্রবার (২১ নভেম্বর)। এদিকে বিদ্যালয় মাঠে মেলার আয়োজনে জেলা প্রশাসন বা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মেলায় চাঁদাবাজির ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্টল প্রতি ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করেছেন সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের নৈয়ারবাড়ি মেলা আয়োজন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শুখরঞ্জন টাকা ধলুর নেতৃত্বে ৬/৭ জনের একটি দল। এদিকে মেলায় জেনারেটরের জন্য দোকান প্রতি ৩০০ টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে শুখরঞ্জন টাকা ওরফে ধলুর ছেলে ছাত্রদল নেতা উত্তম টাকার বিরুদ্ধে।
মেলায় স্টল মালিকরা গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, এক প্রকার জোর করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা চাঁদার টাকা আদায় করছেন।
মেলার ফুচকা ও চটপটির স্টল মালিক কোটালীপাড়া উপজেলার শ্রীফলবাড়ি গ্রামের পুলিন মৃধা বলেন, আমি ও আমার ভাই দুটি চটপটির দোকান দিয়েছি। আমার কাছ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা ও ভাইয়ের দোকান থেকে ২ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছে। দোকান ভেদে তারা চাঁদা তোলে। চাঁদা না দিলে দোকানে হামলা চালায়। ভয়ে সবাই টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছে। মেলায় প্রায় দেড় শ’ দোকান রয়েছে। খুব খারাপ ব্যবহার করা হচ্ছে আমাদের সাথে। আমরা অসহায়। সারাবছর বিভিন্ন এলাকায় দোকান নিয়ে যাই। এভাবে কোথাও চাঁদা নেওয়া হয়না। যারা চাঁদা তোলে মেলায় তাদের কোন খরচ নাই। অথচ জিম্মি করে চাঁদা নিচ্ছে ।
মেলার কসমেটিকস স্টলের মালিক কলাবাড়ি গ্রামের আকাশ অধিকারী বলেন, আমি গত ২৬ বছর ধরে এই মেলায় আসি। আগে মেলার সময় এখানে অনুষ্ঠান হতো। তখন পুরস্কার ও অনুষ্ঠানের ডেকোরেশনের জন্য স্টল মালিকরা খুশি হয়ে কিছু টাকা-পয়সা দিত। এখন কোন অনুষ্ঠান হয় না। অথচ জোর করে ৫শ’ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্ন্তঠা চাঁদা আদায় করছেন বিএনপির নেতা ধলু , নৈয়ারাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক বাসুদেব টাকাসহ বেশ কয়েকজন।
এ মেলায় আনন্দ বিশ্বাস ও লক্ষ্মী বিশ্বাস দম্পতি চায়ের দোকান দিয়েছেন। লক্ষ্মী বিশ্বাস বলেন, আমি কান ধরেছি এ মেলায় আর কোনদিন আসবো না। এবারই প্রথম এসেছি। এখানে যে, অরাজকতা তা কোথাও নেই। সামান্য চায়ের দোকান থেকে ৫শ’৫০ টাকা চাঁদা নিয়েছে। আমাদের উপর চরম জুলুম করা হয়েছে। অন্যদিকে জেনারেটর ব্যবহারের জন্য ৩০০ টাকা দিতে হচ্ছে বিএনপি নেতা ধলু টাকার ছেলে উত্তম টাকাকে। টাকা না দিলে মালামাল নিয়ে যাওয়াসহ মারধরের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।
সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে মেলা আয়োজন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শুখরঞ্জন টাকা ধলু এবং মেলা কমিটির সভাপতি ও নৈয়ারবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক বাসুদেব টাকাসহ চাঁদা উত্তোলনকারীরা সটকে পড়ায় তাদের সাথে কথা বলা যায়নি। তাদের মোবাইলে কল করলেও কেউ কল রিসিভ করেন নি।
সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অনিমেশ গাইন সাংবাদিকদের বলেন, মেলায় চাদাঁবাজির বিষয়ে ফেসবুকে ভিডিওতে দেখেছি। সেখানে ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শুখরঞ্জন টাকা ধলুকে দোকান থেকে টাকা উঠাতে দেখা গেছে। খুবই ন্যাক্কারজনক ঘটনা এটি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নৈয়ারবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন বিশ্বাস বলেন, মেলা আয়োজনের জন্য আয়োজক কমিটি আমার কাছে আবেদন দিয়েছিল । তারা আমাকে জানিয়েছে পুলিশের কাছ থেকে তারা মেলার অনুমতি নিয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ইসমাইল হোসেন বলেন, স্কুলমাঠে মেলা আয়োজনের বিষয়ে আমার জানা নেই। স্কুল মাঠে মেলা বা সমাবেশ করতে হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমতি নিতে হয়। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হবে।
ভাঙ্গারহাট নৌ পুলিশ তদন্ত কেন্দের ইনচার্জ পরিদর্শক এমদাদুল হক বলেন, মেলার জন্য পুলিশের কাছ থেকে কোন অনুমতি নেওয়া হয় নাই। তবে প্রতিবছরই এখানে মেলা হয়ে আসছে। এ বছর মেলার চাঁদাবাজির কোন ঘটনা আমার জানা নেই। তবে কেউ চাঁদাবাজির শিকার হয়ে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগ না দিলে আমাদের কিছু করার নেই।
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাগুফতা হক বলেন, নৈয়ারবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে মেলা আয়োজনের জন্য কোন আবেদন পাইনি। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেলা বা সমাবেশ করতে হলে জেলা প্রশাসক স্যারের অনুমতি নিতে হয়। তারপরও মেলা ও চাঁদাবাজির বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
(টিবি/এসপি/নভেম্বর ২১, ২০২৫)
