সাতক্ষীরায় দলিল লেখকদের অনির্দিষ্টকালের কলম বিরতি শুরু
রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : জেলা রেজিষ্টার হাফিজা হাকিম (রুমা) ও অফিস সহায়ক মহসীন খাঁনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দূর্ণীতি ও দলিল লেখকদের সাথে অসদাচরনের অভিযোগে কলম বিরতি শুরু হয়েছে। রবিবার সকাল ১০টা থেকে দলিল লেখকরা সমিতির কার্যালয়ে অবস্থান করে অনিদ্দিষ্টকালের জন্য এ কলম বিরতি শুরু করেন।
কর্মবিরতি পালনকালে সাতক্ষীরা সদর দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শেখ মাহাবুব উল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, সদর সাব রিজিষ্ট্রি অফিসের অফিস সহায়ক মহসীন খাঁন ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার মেহারী ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের মিসরাইল গ্রামের আবু নাসির খাঁনের ছেলে। চাকুরিতে যোগদানকালিন জমাকৃত জন্মনিবন্ধন অনুযায়ি তার জন্ম তারিখ ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি। ২০১৪ সালে শিমরাইল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৪ দশমিক ১৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
২০১৮ সালের জুন মাসে তিনি কলারোয়া সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের অফিস সহায়ক হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে এক বছর চাকুরি করার পর সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে যোগদান করেন। তৎকালিন আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছের লোক হওয়ার সুবাদে তিনি দলিল লেখকদের হাত করে সদর সাব রেজিষ্টারকে ম্যানেজ করে ১৭ বছরে এসএসসি পাশ দেখিয়ে ১৮ বছর বয়স পূর্ণ না হতেই চাকুরি নিয়ে দলিল রেজিষ্ট্রির পূর্ব কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্নীতি শুরু করেন। যা আজো চলমান। এসবের প্রতিবাদে তিনিসহ দলিল লেখকগণ জেলা রেজিষ্টার বরাবর গত ২৮ অক্টোবর অভিযোগ দাখিল করেন। গত ১৭ নভেম্বর জেলা রেজিষ্টার হাফিজা হাকিম (রুমা) তাকে ও দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিনকে মেীখিকভাবে জানান যে, আইআরও (পরিদর্শক খুলনা বিভাগীয় রেজিষ্ট্রি অফিস) মহসীন খাঁনকে বদলী না করার জন্য তাকে বলেছেন।
সে অনুযায়ি ১৮ নভেম্বর দুপুর ১২টায় দলিল লেখক সমিতি এক জরুরী সভা ডেকে জেলা রেজিষ্টারের কাছে পূণরায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১০০ জনের মধ্যে সভায় উপস্থিত ৮৬জন দলিল লেখক জেলা রেজিষ্টারের অফিসের সামনে হাজির হন। এ সময় তিনিও সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন জেলা রেজিষ্টারের অফিসের মধ্যে গেলে তিনি দূর্ণীতিবাজ মহসিন খানের পক্ষ নিয়ে তাদেরকে গালিগালাজ করে বের করে দেন। সে কারণে সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ি জেলা রেজিষ্টার হাফিজা হাকিম (রুমা) ও অফিস সহায়ক মহসীন খাঁনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও বদলী না করা না হলে অনিদ্দিষ্টকাল পর্যন্ত দলিল লেখা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে।
এদিকে কর্মবিরতি পালনকালে কয়েকজন দলিল লেখক ও সেবা গ্রহীতা জানান, সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিষ্টার অমায়িক বাবু’র সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে অফিস সহায়ক মহসীন খাঁন, ভলিউম রাইটার শামীমা আক্তার দীপা, দলিল লেখক হাবিব ও বাচ্চুসহ একটি চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। প্লট ঘোষণা দিয়ে জমি রেজিষ্ট্রি করলে ৫ শতাংশ রাজস্ব বেশি আদায় হওয়ার নিয়ম থাকায় ওই চক্রটি দলিল লেখকদের সঙ্গে কথা বলে প্লট উল্লেখ না করার কথা বলে আসছেন। এতে সরকারের কম রাজস্ব আদায় হলেও দাতা, গ্রহীতাসহ ওই চক্রটি লাভবান হচ্ছেন। মহসিন খাঁন কাগজপত্র পরীক্ষার নামে দলিলে পর্চার ফটোকপি পেলে দলিল প্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা, পাওয়ারনামা থেকে দলিল করলে ১০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন দাতা ও গ্রহীতাদের কাছ থেকে। এ ছাড়া অসুস্থ দাতা বা গ্রহীতার ৩৮ ধারায় আবেদন করলে সরকারি নিয়মে কিলোমিটার প্রতি সাব রেজিষ্টারকে ২০ টাকা ও পিওনকে ১২ টাকা ও দরখাস্ত ফি ৩০০ টাকা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও উপজেলার মধ্যে, উপজেলা থেকে উপজেলায় যাওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকগুন টাকা আদায় করে থাকেন।
এ ছাড়া ঢাকায় যেতে হলে সাব রেজিষ্টার দলিল পিছু তিন থেকে চার লাখ টাকা দাতা বা গ্রহীতার কাছ থেকে কমিশন বাবদ আদায় করে থাকেন। তবে কমিশনের ক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যোগাযোগের মাধ্যম হলে ভলিউম লেখক রুপে গুনে গুনান্বিত শামীমা আক্তার দীপা। যোগাযোগকারি হিসেবে তিনি মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে করেছেন গফুর সাহেবের বাগানবাড়ি এলাকায় সুসজ্জিত তিন তলা বাড়ি। অনিয়ম ও দূর্ণীতির টাকা সদর সাব রেজিষ্টারসহ ওই চক্রটি ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে থাকেন।
তবে কয়েকজন দলিল লেখক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রফিকুল ইসলাম ও হাফিজুর রহমান নামে দুই দলিল লেখক কাম সাংবাদিক দলিল প্রতি ১০০ টাকা তুলে লুটে পুটে খাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের ভলিউম রাইটার শামীমা আক্তার দীপা সদর সাব রেজিষ্টার অমায়িক বাবুকে একজন সৎ অফিসার দাবি করে বলেন, তিনি একজন প্রতিবাদী। একারণে একটি মহল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। সাংবাদিকরা ভাল করে অনুসন্ধান করলে তার বক্তব্যের সত্যতা খুঁজে পাবে।
এ ব্যাপারে রবিবার বিকেলে সদর সাব রিজিষ্ট্রি অফিসের অফিস সহায়ক মহসীন খাঁনের সঙ্গে বার বার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিষ্টার অমায়িক বাবু জানান, মহসীন খাঁনকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র যাচাঁই করে নিয়োগ দিয়ে পদায়ন করেছে। সেক্ষেত্রে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর করতে হবে। তার বদলীর বিষয়টি প্রশাসনিক। মহসীন খাঁনকে বদলী করে অফিসের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে হলে অন্য একজনকে পদায়ন করতে হবে। তবে তিনি তার বিরুদ্ধে কোন প্রকার অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে হলে লিখিতভাবে করতে হবে। সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে মহসীন খান বেশিদিন সাতক্ষীরা সদরে চাকুরি করছেন।তাই বদলীর ব্যাপারে জেলা রেজিষ্টার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন মর্মে তিনি জেনেছেন।
এ ব্যাপারে জেলা রেজিষ্টার হাফিজা হাকিম (রুমা) এর সঙ্গে তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।# সাতক্ষীরা প্রতিনিধি। তাংÑ ২৩.১১.২৫ ছবি আছে মহসীন খাঁন ও কলম বিরতিকালে দলিল লেখক সমিতির কর্মকর্তাদের।
(আরকে/এএস/নভেম্বর ২৩, ২০২৫)
