নিরবচ্ছিন্নভাবে কম দামে মিলবে রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎ
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : দেশের প্রথম রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে কম দামে পাওয়া যাবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ । যা অন্য কোন উৎস থেকে পাওয়া সম্ভব নয়। এছাড়াও পারমাণবিক বিদ্যুৎ নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব হবে বলে জানিয়েছেন নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানীর (এনপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জায়েদুল হাসান। রবিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে প্রকল্পের কাজের সর্বশেষ অগ্রগতির বিষয় নিয়ে কথা বলার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, মূল্যসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বিশ্ব জ্বালানি মিশ্রণে পারমাণবিক শক্তি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে জানিয়ে এনপিসিবিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জায়েদুল হাসান এসময় বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্লান্ট রণাবেণ ও পরিচালনা ব্যয় যে কোনো জীবাশ্ম জ্বালানির প্লান্টের চেয়ে অধিক সাশ্রয়ী। উপরন্তু পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্লান্টের আয়ুষ্কাল ৬০ বছর এবং পরবর্তী সময়ে তা ৮০ বছর এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০০ বছর পর্যন্ত বর্ধিত করা যায়। যেখানে জীবাশ্ম জ্বালানির বিদ্যুৎ প্লান্টের আয়ুষ্কাল সর্বোচ্চ ২৫ বছর। যেকারণে বলা যায়, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণে ইনিশিয়ালি ব্যয় অধিক হলেও শত বছরের হিসাবে বিদ্যুৎপ্রাপ্তির বিষয়টি বিবেচনা করলে পারমাণবিক উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনই লাভজনক।
জ্বালাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন বর্তমানে প্রায় ৪৩৩ কিলোওয়াট-আওয়ার। উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশের মর্যাদা লাভ করতে হলে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০০ কিলোওয়াট-আওয়ার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ১ হাজার ৫০০ কিলোওয়াট-আওয়ারে বৃদ্ধি করতে হবে। কারণ আমরা কতটা উন্নত, তা নির্ভর করছে মাথাপিছু বিদ্যুৎশক্তি ব্যবহারের ওপর। যেহেতু বিদ্যুৎশক্তির ব্যবহার আমাদের জীবনযাত্রার সব ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলে। ফলে উন্নয়নের সূচকগুলো গতিশীল হওয়ার অনুঘটকই হচ্ছে বিদ্যুৎশক্তি এবং তাই বিদ্যুৎশক্তির নিরবচ্ছিন্ন ও সস্তায় প্রাপ্তিই উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রাণভোমরা।
এই বিষয়ে ঢাকাস্থ পারমাণবিক তথ্য কেন্দ্রের ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার তীর্থ দাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব শক্তি হিসেবে সৌরশক্তি বিকল্প বটে। তবে একমাত্র উৎস হিসেবে বিবেচনা করার অবকাশ নেই। যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদনে সৌরশক্তি ব্যবহারের দক্ষতার তাত্ত্বিক সীমা ৩৩.১৬ শতাংশ। বাস্তবে সেটা আরও কম। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনার জন্য যে পরিমাণ জায়গা ব্যবহার হয়েছে, সেই পরিমাণ জায়গায় যদি সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল বসানো হয়, তাহলে মাত্র ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। পক্ষান্তরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ২,৪০০ মেগাওয়াট। শক্তি উৎপাদন ও জমি ব্যবহারের অনুপাত বিবেচনায় এ দুটি উৎস একেবারেই তুলনীয় নয়। সৌর প্যানেলগুলোর কার্যকারিতা আমাদের পরিবেশে দ্রুত কমতে থাকে। কারণ ধুলা, ধোঁয়া, শিলাবৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝা আর সূর্যকিরণের অতিবেগুনী রশ্মি প্যানেলগুলোর কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। প্যানেলগুলো যখন অকেজো হয়ে পড়ে, তখন সেগুলোকে যথাযথভাবে ফেলার ব্যবস্থা নেই। ফলে সেখান থেকে ক্যান্সার উৎপাদনকারী বিষাক্ত দ্রব্য পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অন্যদিকে বিশেষত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে পরিবেশ-প্রতিবেশের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়, তা পুষিয়ে নিতে বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি আরও বেড়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লাান্ট নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় অধিক হলেও শত বছরের হিসাবে বিদ্যুৎ প্রাপ্তির বিষয়টি বিবেচনা করলে পারমাণবিক উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনই লাভজনক।
(এসকেকে/এএস/নভেম্বর ২৩, ২০২৫)
