ড্রেজার দিয়ে খাল খনন
গোপালগঞ্জে সড়ক ভেঙে খালে, দুর্ভোগে শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া-পয়সারহাট খাল ড্রেজার দিয়ে খনন করা হচ্ছে। খালপাড়ের কোটালীপাড়া উপজেলার বঙ্কুরা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রম সড়ক রবিবার (২৩ নভেম্বর)রাত থেকে ভেঙে খালে পড়তে শুরু করেছে। এতে ওই সড়কে চলাচলকারী শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
বঙ্কুর গ্রামের আলামিন শেখ, রুহুল আমিন, জাফর শেখ অভিযোগ করে বলেন , পানি সেচ দিয়ে খালের মাটি তুললে সড়ক ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি কম থাকতো।কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চুক্তি অনুযায়ী নিয়ম না মেনে পানিভর্তি খালে ড্রেজার বসিয়ে কাজ করায় দিন দিন সড়কে ভাঙন বাড়ছে ।
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ২০২৪ সালে ১৫ কোটি ৪৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা ব্যয়ে গোপালগঞ্জ-পয়সারহাট খাল পুনঃখননের কাজ শুরু হয়। প্রথমে খালের পানি সেচ দেওয়ার শর্ত ছিল। তারপর খাল খননের কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আতাউর রহমান খান লিমিটেড তা অনুসরণ করেনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, হিরণ ইউনিয়নের বঙ্কুরা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রম সড়কের বড় অংশ ভেঙে খালে পড়ে গেছে।এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ৬১ নম্বর মাঝবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বঙ্কুরা মাদ্রাসাসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও মাঝবাড়ি বঙ্কুরা, তাড়াশী, ধুরাইল সহ ছয় গ্রামের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
বংকুরা মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম জানান, “এই রাস্তা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। কালকে রবিবার (২৩ নভেম্বর) রাতেই গাছসহ বড় অংশ ভেঙে খালে পড়েছে। হাঁটা আর সাইকেল নিয়ে যাওয়া খুব ভয় লাগে।”
স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, “চুক্তির নিয়ম না মেনে লোক দেখানো কাজ করছে ঠিকাদারেরা। কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হলেও কাজের মান নেই। জবাবদিহিতা না থাকায় এই অবস্থা।”
এদিকে চলতি অর্থবছরে উপজেলার আরও নয়টি খাল পুনঃখননের কাজ পানি সেচ ছাড়া পানির মধ্যেই এস্কেভেটর দিয়ে করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আতাউর রহমান খান লিমিটেডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজবাউদ্দিন বলেন, “সেচ দিলে রাস্তার ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, তাই ড্রেজার দিয়ে কাজ করছি। রাস্তা যেখানে ভাঙবে, আমরা তা মেরামত করে দেব।”
এ বিষয়ে প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, “ভৌগোলিক কারণে পানি সরানো সম্ভব হয়নি। সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি জেনেছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাগুপ্তা হক বলেন, “বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
মাঝবাড়ি গ্রামের মোহর আলী শেখ বলেন, মানসম্পন্ন ও নিয়ম মেনে কাজ না হলে শুধু রাস্তা নয়, পুরো এলাকা নতুন বিপদে পড়বে। তিনি দ্রুত পরিস্থিতি সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
(টিবি/এএস/নভেম্বর ২৪, ২০২৫)
