ঝুঁকিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবাগ্রহীতা
ঝিনাইদহে পাঁচ উপজেলায় জরাজীর্ণ ভবনে চলছে বিআরডিবি’র কার্যক্রম
শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের পাঁচ উপজেলায় জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)’র কার্যক্রম। বছরের পর বছর ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন এই দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ভবনের দেয়াল ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়া এখন নিত্যদিনের ঘটনা। এতে প্রায়ই আহত হচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশী ও দপ্তরের কর্মরতরা।
জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর, শৈলকুপা, মহেশপুর, কালীগঞ্জ ও কোটচাঁদপুর উপজেলায় বিআরডিবি’র অফিস ভবনগুলোর বেশিরভাগই দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারহীন। ভবনের দেয়াল, মেঝে,জানালা-দরজা ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়া এখন নিত্যদিনের ঘটনা। কোথাও কোথাও সিলিংয়ের বড় অংশ ভেঙে পড়েছে। ভেজা দেওয়ালে ফাটল তৈরি হয়েছে, অনেক স্থানে বৃষ্টির পানি ঢুকে কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
বিআরডিবি অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে নির্মিত ঝিনাইদহের ৬ উপজেলার মধ্যে ১টি উপজেলার কার্যালয় সংস্কার করা হয় ২০২১ সালে। বাকি ৫ টি উপজেলার ভবনগুলোতে ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছেন অন্তত ১৮০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
সেবা প্রত্যাশীরা বলছেন, ভবনের ভেতরে দাঁড়ানোই যেন আতঙ্কের বিষয়। আজ নয় কাল বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই ভয়ের মধ্যেই কর্মকর্তারা যেমন কাজ করছেন, সেবা প্রত্যাশীরাও তেমনি সেবা নিচ্ছেন।
মহেশপুরের স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এভাবে সরকারি দপ্তরে চলতে পারে না। দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে?’
স্থানীয় কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, ‘অফিসে ঢুকলেই মনে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসলাম। ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে প্রতিদিন। এখনই নতুন ভবন বা বড় ধরনের সংস্কার দরকার।’
সেবা নিতে আসা গৃহিণী শারমিন আক্তার বলেন, ‘অফিসে দাঁড়িয়ে থাকতে ভয় লাগে। কখন কোথা থেকে কি মাথায় পড়ে তা বলা যায় না। অথচ বছরের পর বছর পার হলেও কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, ‘একটা সরকারি দপ্তর এভাবে চলতে পারে না। যে দপ্তর মানুষকে উন্নয়নের পথ দেখায়, তাদের নিজের ভবনই যখন ভেঙে পড়ছে তখন বোঝা যায় ব্যর্থতা কোথায়। এখানে দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ ছাড়া উপায় নেই।’
সেবাপ্রত্যাশী নাজমুল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ভবনের ফাটল, ছাদ ভাঙা আর দেয়াল খসে পড়া প্রতিদিনই দেখি। শিশুবৃদ্ধ কেউই নিরাপদ নয়। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই ব্যবস্থা না নিলে সমস্যা হবে।’
স্থানীয় প্রবীণ শিক্ষক নূরুল ইসলাম বলেন, ‘বিআরডিবি গ্রামীণ উন্নয়ন কাজের প্রাণকেন্দ্র। অথচ এই অফিসগুলোর অবস্থা দেখলে কষ্ট লাগে। কর্মকর্তারা জীবন বাজি রেখে কাজ করছেন। কর্তৃপক্ষের উচিত জরুরি ভিত্তিতে ভবনগুলো সংস্কার করা।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)’র ঝিনাইদহের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মোক্তার হোসেন বলেন, ‘৫ উপজেলার মধ্যে ২টি উপজেলার ভবন সংস্কারের জন্য আবেদন পাঠানো হয়েছে। পাশ হলে আগামী মাসে একটি ও পর্যায়ক্রমে অন্যগুলো সংস্কার করা হবে।’
(এসআই/এসপি/নভেম্বর ২৪, ২০২৫)
