আদিবাসী ঢুডু সরেন হত্যাকাণ্ড, সব আসামিকে খালাস দেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ
শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের বহুল আলোচিত আদিবাসী ঢুডু সরেন হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায়ে সকল আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলন করেছে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ।
আজ সোমবার দুপুরে দিনাজপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ ইউনিয়নের বড় কচুয়া গ্রামের ঢুডু সরেনের ছেলে রবি সরেনের পাঠ করা লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলা হয়। এ সময় আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ২ আগষ্ট নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বড় কচুয়া গ্রাম, ঢুডুর মোড় খ্যাত এলাকার ঢুডু সরেনকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই সময়ে পত্র-পত্রিকায় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রকাশ হয়েছিল। বহুল আলোচিত ঢুডু সরেন হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় গত ১১ নভেম্বর ২৫ হয়েছে। আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম বহুল আলোচিত ঢুডু সরেন হত্যার সকল আসামী বেকসুর খালাস পেল। আমরা মনে করি এই রায়ের মধ্য দিয়ে বাদী রবি সরেন এবং তার পরিবার শুধু নয় পুরো সাঁওতাল সম্প্রদায় ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে এবং এই ঘটনার মধ্য দিয়ে অপরাধীরা আরো বেশি উৎসাহিত হলো।
ঢুডু সরেনের পূর্ব পুরুষদের মোট সম্পত্তি ৩৩ একর ১১ শতক। এই সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে ঢুডু সরেনের পিতা ফাগু সরেনকে হত্যা করে এবং সম্পত্তি দখল করে ভুমিদস্যু মহির উদ্দিন, গোলাজার হোসেন, হাজের উদ্দিন সরকার, ওমর আলী, তোফাজ্জল হোসেন, মোজাম্মেল হক। ২০১১ সালের ২৮ জুলাই ঢুডু সরেনের বড় ভাই গোসাই সরেনকে হত্যা করে। টাকার অভাবে মামলা চালাতে না পারায় মামলা খারিজ হয়ে যায় এবং হত্যাকারীরা যথারীতি পার পেয়ে যায়। ২০১৪ সালের ২ আগষ্ট ঢুডু সরেনকে হত্যা করে ডা. গাফফার আলী, যিনি ঢুডু সরেনের পিতা ফাগু সরেনের হত্যাকারী গোলজার হোসেনের ছেলে।
তিনি আও বলেন, আমরা দেখলাম ঢুডু সরেন হত্যা মামলার আসামী ডা. গাফফার আলী, আজাহার আলী, দেলোয়ার হোসেন, আব্দুল আলিম, সুজন আলী, স্বপন আলী ও সুমন ওরফে ছিব্বির আলীকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। কোন অপরাধের সঠিক বিচার না হলে অপরাধীরা উৎসাহিত হয় আর আক্রান্তরা আরও আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করতে থাকে। নওগাঁর আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেনের বিচার হয়নি, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে পুলিশের গুলিতে তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার হয়নি। রাজশাহীর গোদাগাড়ির সাঁওতাল হত্যারও বিচার মেলেনি। আজ যখন এই হত্যাকারীরা বেকসুর খালাম পেল তখন আমরা ঢুডু সরেনের পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। অন্যদিকে ঢুডু সরেনের পৈত্রিক সম্পত্তির ৩০ একর ৩৬ শতক যারা দখল করেছে মহির গং তাদের বিরুদ্ধে যে সিভিল মামলা চলছে সেটা নিয়েও নানা রকম হুমকী ঢুডু সরেনের ছেলে রবি সরেনদের উপর অব্যাহত আছে। দুই প্রজন্মের হত্যা হয়ে যাওয়া এবং অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ায় প্রতি মুহুর্তে আতঙ্ক নিয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে এই পরিবারের।
আদিবাসীদের পায়ের নিচের মাটি কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে কখনো রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে, কখনো ব্যক্তি পর্যায়ে। সবকিছুর মূলে রয়েছে আদিবাসীদের জমি হারানো। এ সময় আদিবাসীদের উপর হত্যা, নির্যাতন, জমি দখল, লুটপাট, মিথ্যা মামলা, হয়রানী, পুলিশী নির্যাতন বন্ধ করা, ভুমিদস্যুদের বিচার নিশ্চিত করা, ভুমি অফিসের ঘুষ, দূর্ণীতি, হয়রানী বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি শিবানী উড়াও, বাসদ দিনাজপুর জেলা সমন্বয়ক কিবরিয়া হোসেন, হত্যার শিকার ঢুডু সরেনের ছেলে মিলন সরেন, ভাইয়ের ছেলে সুখলাল সরেন, স্ত্রী ফুলমনি মার্ডি, আত্মীয় মঙ্গল মার্ডি, উপস্থিত ছিলেন।
(এসএস/এসপি/নভেম্বর ২৪, ২০২৫)
