স্টাফ রিপোর্টার : দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) গুলোতে বর্তমানে এমন কিছু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণুর বিস্তার বাড়ছে, যেগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো অ্যান্টিবায়োটিক নেই। নতুন এক গবেষণার তথ্যে জানা গেছে, ঢাকায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের হার দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি, যা একদিকে যেমন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে দেশের ভবিষ্যৎ চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য গভীর উদ্বেগ তৈরি করছে।

জাতীয় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) সার্ভিলেন্স এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আইসিইউ থেকে সংগৃহীত নমুনার ৪১ শতাংশে প্যান-ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট (পিডিআর) জীবাণু পাওয়া গেছে, যার মানে, কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই এখন কার্যকরী নয়। একই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের হাসপাতালে ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর হার বর্তমানে ৪৬ শতাংশ, আর ঢাকার আইসিইউতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৯ শতাংশ।

গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৫৭ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হচ্ছে শুধুমাত্র ঢাকা শহরে, যেখানে রোগীর সংখ্যা বেশি, বিশেষায়িত হাসপাতাল বেশি এবং স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য। এই পরিস্থিতি একদিকে যেমন চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির দিকে ইঙ্গিত করে, অন্যদিকে অপ্রতিরোধ্য জীবাণু প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বিপদজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, ঢাকায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের হার দেশের অন্যসব অঞ্চলের তুলনায় বেশিই। রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রংপুর এবং সিলেট এর পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে, তবে ঢাকার পরিস্থিতি সবচেয়ে উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছে গবেষকরা।

গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, বর্তমানে গুরুতর সংক্রমণে দায়ী ব্যাকটেরিয়াগুলো এমন প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করেছে, যে ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলেও রোগীকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ছে। আইসিইউ-তে বর্তমানে পিডিআর জীবাণু এর বিস্তার রোগীদের জন্য আশঙ্কাজনক পরিণতি বয়ে আনছেএবং অ্যান্টিবায়োটিক সংকটের দিকে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ সংক্রমণও মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

গবেষণায় আরো একটি উল্লেখযোগ্য তথ্য পাওয়া গেছে, তা হলো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ৬০ শতাংশ নারী রোগীদের মধ্যে দেখা গেছে। এই ৬০ শতাংশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সি তরুণ-তরুণীরা।

ই. কোলি (E. coli) জীবাণু ৩৫ শতাংশের জন্য দায়ী, পরবর্তীতে রয়েছে ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়া (K. pneumoniae), যা শনাক্ত জীবাণুর মধ্যে ১৯.২ শতাংশের জন্য দায়ী।

আইইডিসিআর-এর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন হাবিব সেমিনারে বলেছেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে আমরা দ্রুত একটি বিপজ্জনক 'পোস্ট অ্যান্টিবায়োটিক সংকট' এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এমন সংকট হলে সাধারণ চিকিৎসা ও সংক্রমণও রোগীদের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে।

অধিকাংশ অঞ্চলে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণ না থাকলে আগামীতে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও বেশি বিপন্ন হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

জাতীয় এএমআর সার্ভিলেন্সের এই গবেষণা ২০১৬ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান এর আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ১৩টি সেন্টিনেল সাইট এবং ২২টি বেসরকারি ও ২টি সরকারি মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবরেটরি থেকে ৯৬ হাজার ৪৭৭ রোগীর ক্লিনিক্যাল নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ২৫, ২০২৫)