বিশ্বজিৎ সিংহ রায়, মহম্মদপুর : তুলসী গাছ ঘরোয়া চিকিৎসায় একনির্ভরযোগ্য ভেষজ।বাঙালির আঙিনা, বাড়ির উঠান কিংবা মাটির টবে-তুলসী গাছ যেন শতবর্ষের ঐতিহ্য। ধর্মীয় বিশ্বাস, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা এবং সব ক্ষেত্রেই তুলসী এক অনন্য ভেষজ সম্পদ। 

সহজে চাষযোগ্য, দুর্গন্ধনাশক, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ হওয়ায় তুলসী গাছের মূল্য আজ পৃথিবীতে স্বীকৃত। তুলসীর রং ও গঠন তার জাত অনুযায়ী আলাদা। সাধারণত দু’টি জাত বেশি পরিচিত-

উজ্জ্বল সবুজ পাতা, সুগন্ধ বেশি, ডাঁটা কোমল সবুজ। পাতার রং গাঢ় বেগুনি বা কালচে,ডাঁটা বেগুনি।ঔষধি গুণের জন্য অনেকের কাছে বেশি জনপ্রিয়।উভয় ধরনের তুলসীই ১ থেকে ৩ ফুট পর্যন্ত বাড়ে এবং পাতার ভেতরকার সুগন্ধী তেলই এই গাছের ভেষজ শক্তির মূল উপাদান।

শ্বাসকষ্ট, সর্দি, কাশি, ফ্লু, অ্যাজমা বা ব্রঙ্কাইটিস-তুলসী দীর্ঘদিন ধরে এসব রোগের ঘরোয়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পাতার রস শ্বাসনালি পরিষ্কার করে এবং কফ কমায়।

তুলসীতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও এসেনশিয়াল অয়েল রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়িয়ে শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত তুলসী পাতা খেলে সর্দি-কাশির ঝুঁকি কমে।

অম্বল, গ্যাস, অজীর্ণতা দূর করতে তুলসী দারুণ কাজ করে। সকালে ৪–৫টি পাতা খেলে হজমশক্তি স্বাভাবিক থাকে। তুলসী প্রাকৃতিক স্ট্রেস-রিলিভার হিসেবে পরিচিত। এর সুগন্ধ স্নায়ু শান্ত করে, ক্লান্তি ও মানসিক অস্থিরতা দূর করে।

তুলসীর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ ব্রণ প্রতিরোধ করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। চুলের খুশকি, সংক্রমণ ও চুল পড়া কমাতে তুলসীযুক্ত তেল ও মাস্ক ব্যবহৃত হয়।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে তুলসীর ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। তুলসী শরীরের গ্লুকোজ বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করতে সহায়তা করে।

বিদেশি রান্না-সালাদ,পাস্টা,সুপ (বেসিল হিসেবে ব্যবহৃত),তুলসী গাছ বাতাসের জীবাণুনাশক ক্ষমতা বাড়ায়,পরিবেশকে সুগন্ধী রাখে এবং মশা-পোকামাকড় দূর করে।পাশাপাশি ধর্মীয় বিশ্বাসে তুলসী পবিত্রতার প্রতীক-যা বাড়ির পরিবেশকে শান্ত রাখে বলে মনে করা হয়।

অত্যন্ত সাধারণ, কিন্তু অমূল্য; তুলসী গাছের গুণাগুণ শেষ করা কঠিন।প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্রে যার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম,আধুনিক বিজ্ঞানও আজ সেই পথেই হাঁটছে। স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য, রান্না, পরিবেশ-সর্বত্র তুলসীর এক অনন্য উপস্থিতি।একটি বাড়ির কোণেও যদি একটি তুলসী গাছ থাকে সেটিই হতে পারে পরিবারের প্রাকৃতিক স্বাস্থ্য-রক্ষাকারী।

(বিএসআর/এএস/নভেম্বর ২৬, ২০২৫)