ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক : ডোনাল্ড ট্রাম্প বিবিসির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার হুমকি দিয়েছেন। তাঁর দাবি, এই মামলায় ক্ষতিপূরণ ১ বিলিয়ন থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যেই হতে পারে।

তিনি অভিযোগ করেন, বিবিসি ২০২৪ সালের নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে শুধুমাত্র ব্রিটেনে প্রকাশিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে তাঁর সম্পর্কে 'মিথ্যা, মানহানিকর, অবমাননাকর ও উসকানিমূলক' বক্তব্য প্রচার করেছে।

যে কোনো অভিজ্ঞ আইনজীবী বলবেন মানহানির মামলা করা নিজেই বিপজ্জনক। মামলার প্রচারই অভিযোগিত মানহানিকর বক্তব্যকে আরও ছড়িয়ে দেয়। আর সত্য মানহানি মামলায় সম্পূর্ণ প্রতিরক্ষা।
অস্কার ওয়াইল্ড এবং আলজার হিস দু’জনেই মানহানির মামলা করেছিলেন শেষ পর্যন্ত দু’জনকেই জেল খাটতে হয়েছিল।

ট্রাম্পের পরামর্শদাতা, কুখ্যাত আইনজীবী রয় কন তাঁর ক্লায়েন্টদের মানহানির মামলা না করতে বলতেন। 'হাউ টু স্ট্যান্ড আপ ফর ইয়োর রাইটস অ্যান্ড উইন' বইতে কন লিখেছিলেন, একটি মানহানির মামলা খুবই জটিল হতে পারে। মামলাটি প্রমাণের সামান্য সুযোগ থাকলেও আপনি বিপদে পড়তে পারেন।

ট্রাম্প মামলা করলে তা যুক্তরাজ্যে নয়, ফ্লোরিডাতেই করার সম্ভাবনা বেশি যেখানে তাঁর আইনগত বসবাস। যুক্তরাজ্যে মানহানির মামলা করার সীমা এক বছর, ফ্লোরিডায় তা দুই বছর।

বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু বিবিসি যেভাবে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে হামলার দিন ট্রাম্পের ভাষণ সম্পাদনা করেছিল। অভিযোগ, ভাষণের বিভিন্ন অংশ জোড়া লাগিয়ে ট্রাম্পকে সরাসরি উচ্ছৃঙ্খলতায় উসকানি দিয়েছেন এমন ধারণা সৃষ্টি করা হয়।

এক পর্যায়ে ট্রাম্প সমর্থকদের বলেন: আমরা ক্যাপিটলের দিকে হেঁটে যাব, আর আমিও তোমাদের সঙ্গে থাকব।

প্রায় এক ঘণ্টা পর তিনি বলেন: আমরা লড়াই করব। প্রাণপণ লড়াই করব। এই লড়াই না করলে আর দেশ থাকবে না। এর মিনিট কয়েক পরই ২ হাজারেরও বেশি সমর্থক ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালায়। বিবিসি এই ভুল স্বীকার করে। চেয়ারম্যান সামির শাহ 'মন্দ সিদ্ধান্তের' জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।

ডিরেক্টর জেনারেল টিম ডেভিও বলেন, আমরা ভুল করেছি, এটি সম্পাদকীয় নীতিমালা ভঙ্গ। দুর্বলতা টের পেয়ে ট্রাম্প আইনি পদক্ষেপের হুমকি দেন। তাঁর আইনজীবী দাবি করেন, বিবিসি ট্রাম্পের 'গুরুতর আর্থিক ও ভাবমূর্তির ক্ষতি' করেছে।

তবে এটি প্রমাণ করা কঠিন—কারণ প্রচারটির পরেই ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং বিপুল লাভবান হন তাঁর পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ক্রিপ্টো ব্যবসা থেকে।

তাঁর মামলার পথে নানা আইনগত ও বাস্তব বাধা রয়েছে। প্রথমত, প্রামাণ্যচিত্রটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রচারিতই হয়নি বলে মনে হয়। ফলে ফ্লোরিডার আদালত যুক্তরাজ্যকেই যথাযথ বিচারক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করতে পারে। এছাড়া ফ্লোরিডায় ট্রাম্প কীভাবে ক্ষতির শিকার হলেন, সেটিও প্রমাণ করা কঠিন।
এরপর আসে নিউ ইয়র্ক টাইমস বনাম সুলিভান নীতি, যা অনুযায়ী জনপরিচিত ব্যক্তিদের মানহানির মামলায় প্রমাণ করতে হয় স্পষ্ট ও দৃঢ় প্রমাণের মাধ্যমে যে বিবৃতি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা ছিল বা 'সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই বেপরোয়াভাবে' দেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্পকে আরও দেখাতে হবে যে বিবিসির সম্পাদনা ৬ জানুয়ারির ঘটনাকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে মৌলিকভাবে বদলে দিয়েছে। অথচ ইতোমধ্যেই নানা স্বাধীন তদন্তে, এমনকি মার্কিন কংগ্রেস ট্রাম্পকে 'বিদ্রোহে উসকানি' দেওয়ার অভিযোগে অভিশংসন করেছে।

ফ্লোরিডায় প্রামাণ্যচিত্রটি কেউ দেখেছেন এমন প্রমাণও এখনো নেই। আদালতের এখতিয়ার নির্ভর করবে এ তথ্যের ওপর।

ট্রাম্প পূর্বেও মার্কিন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের মামলা করেছেন, কিছু ক্ষেত্রে বড় অঙ্কে সমঝোতাও পেয়েছেন। বিবিসিও বাণিজ্যিক বা রাজনৈতিক কারণে সমঝোতায় যেতে পারে।

২০২৫ সালের জুলাইয়ে সিবিএসের মূল প্রতিষ্ঠান প্যারামাউন্ট ট্রাম্পকে ১৬ মিলিয়ন ডলার দেয় কমলা হ্যারিসকে নিয়ে ৬০ মিনিটস–এর সাক্ষাৎকার নিয়ে মামলায়।

এবিসি নিউজ ১৫ মিলিয়ন ডলার দেয় জর্জ স্টেফানপোলাস ভুলভাবে বলেছিলেন ট্রাম্প 'ধর্ষণের' দায়ে দায়ী হয়েছেন, যদিও প্রকৃত দণ্ড ছিল 'যৌন নির্যাতন'-এর জন্য।

ফ্রিডম অব দ্য প্রেস ফাউন্ডেশনের অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর সেথ স্টার্ন বলেন, 'ট্রাম্প জিতবেন কি হারবেন সে নিয়ে তাঁর চিন্তা নেই। লক্ষ্য হলো তাঁকে সমালোচনাকারীদের ভয় দেখানো ও শাস্তি দেওয়া।'

(আইএ/এসপি/নভেম্বর ২৭, ২০২৫)