যুক্তরাষ্ট্রে বিচারকের আদেশ অমান্য করে অভিবাসীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত স্বরাষ্ট্র সচিবের
ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক : মার্কিন বিচার বিভাগ (ডিওজে) দাখিল করা নতুন নথি বলছে, বিচারকের আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরিয়ে নেওয়া একশর বেশি ভেনেজুয়েলান পুরুষকে এল সালভাদরের হেফাজতে পাঠানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি নেন স্বয়ং স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা (ডিএইচএস) সচিব ক্রিস্টি নোয়েম—যেখানে তাদের কারাবন্দি করা হয়।
এ তথ্য এসেছে সেই চলমান তদন্তে, যেখানে বিচারকের মৌখিক নির্দেশ অমান্যকারী ট্রাম্প প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তাকে আদালত অবমাননার দায়ে দোষী করা হবে কিনা, তা বিবেচনা করা হচ্ছে।
মার্চে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযোগযুক্ত ভেনেজুয়েলান গ্যাং সদস্যদের 'অ্যালিয়েন এনেমিস অ্যাক্ট' (এইএ) ব্যবহার করে বহিষ্কারের অনুমোদন দেন। এরপরই প্রশাসন দ্রুত এই লোকজনকে এল সালভাদরের একটি মেগা-জেলে পাঠানোর চেষ্টা শুরু করে।
ডিওজে লিখেছে, সেই আইনি পরামর্শ পাওয়ার পর সচিব নোয়েম নির্দেশ দেন যে আদালতের আদেশ জারির আগে যেসব এইএ-আটকযুক্ত ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তাদের এল সালভাদরের হেফাজতে হস্তান্তর করা যেতে পারে। নিচে ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্ত আইনসঙ্গত এবং আদালতের আদেশের যৌক্তিক ব্যাখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ডিএইচএস মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, বিচারক জেমস বোয়াসবার্গের মৌখিক নির্দেশ মানার কোনো বাধ্যবাধকতা তাদের ছিল না।
ডিওজে মঙ্গলবার লিখেছে,সরকারের অবস্থান হলো তাদের কর্মকাণ্ড আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করেনি অন্তত এতটা স্পষ্টভাবে নয় যে তা ফৌজদারি আদালত-অবমাননার পর্যায়ে পড়ে। তাই আর কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন বা যৌক্তিকতা নেই।
ভেনেজুয়েলান পুরুষদের পক্ষের আইনজীবী, এসিএলইউ’র লি গেলান্ট এ যুক্তিকে 'অমূলক' বলে মন্তব্য করেন।
তিনি ইমেলে লিখেছেন,সরকারের নথিতে প্রথমবারের মতো যেসব কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা ছিল তা শনাক্ত হলেও, এটি উত্তর দেওয়ার চেয়ে প্রশ্নই বেশি তোলে। সরকারের দাবি যে বিচারকের আদেশটি অস্পষ্ট ছিল তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
এর আগে বিচারক বোয়াসবার্গ আদালত অবমাননার কার্যক্রম শুরু করার ‘যথেষ্ট সম্ভাব্য কারণ’ আছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। তবে আপিল আদালত গত সপ্তাহে এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি স্থগিত ছিল।
মঙ্গলবার রাতের দাখিল করা নথিগুলো আসন্ন শুনানির ইঙ্গিত দিচ্ছে বোয়াসবার্গ অন্তত দুই সাক্ষীর জবানবন্দি শুনতে চান: সাবেক ডিওজে আইনজীবী এবং হুইসলব্লোয়ার এরেজ রেউভেনি (যাকে এপ্রিল মাসে বরখাস্ত করা হয়) এবং ডিওজে আইনজীবী ড্রিউ এনসাইন।
রেউভেনির দাবি, ডিওজে-র তৎকালীন তৃতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা এমিল বোভে (বর্তমানে ফেডারেল আপিল আদালতের বিচারক) আদালত সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা জারি করলে তা অমান্য করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং প্রশাসন আদালতকে ‘*** তোমাকে’ বলতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন।
এছাড়া তিনি এনসাইনকে উল্লেখ করে বলেন, এনসাইন শুনানিতে দাবি করেছিলেন যে তিনি জানেন না পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় ফ্লাইট ছাড়বে কিনা। রেউভেনি তার পাঠানো টেক্সট বার্তায় সহকর্মীকে জানান, এনসাইন ফ্লাইট-সংক্রান্ত সব তথ্যই জানতেন।
তিনি লিখেছিলেন, সে জানে এদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে… সে ফ্লাইট প্রসঙ্গে জানে। সহকর্মীও এতে সম্মত হয়ে জানতে চান, এনসাইন কি শাস্তি ছাড়া এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে যেতে পারবেন?
ট্রাম্পের ‘অ্যালিয়েন এনেমিস অ্যাক্ট’ ব্যবহারের বৈধতা নিয়ে মূল মামলা এখনও বোয়াসবার্গের অধীনে চলমান। যেসব অভিবাসী সালভাদরের সিসটট নামে পরিচিত মেগা-কারাগারে পাঠানো হয়েছিল, পরে তাদের মুক্ত করে ভেনেজুয়েলায় ফেরত।
(আইএ/এসপি/নভেম্বর ২৭, ২০২৫)
