রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুরে বিদেশে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতিনিয়ত জনগণের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বেশ কয়েকটি প্রতারকচক্র। যার মধ্যে অন্যতম একটি বড় প্রতারণা চক্রের সিন্ডিকেট প্রধানের নাম আতিয়ার রহমান। মিষ্টি ভাষা ও নিজ পরিবারের সদস্যদের সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে ব্যবহার করা আতিয়ার ফরিদপুর জেলাসহ এর আশেপাশের কয়েকটি জেলার প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষের সাথে সরাসরি প্রতারণা করেছেন। তারা প্রায় প্রত্যেকেই হত দরিদ্র শ্রেনীর জনগণ। যারা আতিয়ার সিন্ডিকেটের দালালদের খপ্পরে,  বিশেষ করে আতিয়ার ও তার পরিবারের সদস্যদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন এবং হচ্ছেন। এসব দরিদ্র মানুষগুলো বিদেশে যাওয়ার জন্য ঋণ করে আতিয়ারের কথামতো তার পরিবারের সদস্য, দালাল বা এজেন্সির কাছে টাকা দিলেও সময়মতো অনেকে বিদেশ যেতে পারেন না। আবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদেশে নিয়ে গেলেও কাজের অনুমতি পান না কেউ। অনেকে ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া দিনে ১৫ থেকে ২০ ঘন্টা কাজ করেও পান না বেতন। এছাড়া, বিদেশের নিয়ে কাজের অনুমতিপত্র রেডি করে কাজ পাইয়ে দেওয়া পর্যন্ত কনটাক্ট থাকলে বিদেশে পৌছে দিয়েই ওসব প্রবাসীদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন আতিয়ার। যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে তাদের মধ্যে কেউ কেউ বাড়ি থেকে, কেউ আমার প্রবাসী আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে এবং আরও দেড় থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে পরিচিত বা সাহায্যকারী কোনো প্রবাসী বাঙালীর মাধ্যমে কাজের অনুমতিপত্র তৈরি করে, কোনোমতে কাজ জোগার করে চলছেন একান্তই নিরুপায় হয়ে। কেউ কেউ টাকা না নিতে পেরে ও কাজকর্ম করতে না পারায় অনেকে অমানবিক  মানবতার জীবন যাপন করছেন। আবার কাউকে কাউকে পুলিশের হাতে ধরা খেয়ে নয় জেলে অথবা প্রবাস স্বপ্নের সমাপ্তি ঘটিয়ে বাধ্যতামূলকভাবে দেশে চলে আসতে হয়েছে। এছাড়া, সবচেয়ে বড় যে অভিযোগটি আতিয়ারের বিরুদ্ধে এসেছে তা হচ্ছে প্রবাসে থেকে কেউ তার নামে নালিশ করলে বা তার প্রতারণার কথা তুলে ধরলে অমানবিক নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয়।

আতিয়ার রহমান ফরিদপুর সদর উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের কারুন্যপুর (বড়ঘাট ব্রীজ সংলগ্ন) এলাকার আরশাদ হোসেনের পুত্র।

সরেজমিনে বড়ঘাট বাজারে গিয়ে আতিয়ারের প্রতারণা বিষয়ে বেশকিছু ভুক্তভোগীর কথা শুনার পর খোঁজ মিলে নূর মোহাম্মদ মুন্সী নামে তারই আরেক প্রতিবেশীর, যিনিও প্রতারক আতিয়ার ও তার পরিবারের দ্বারা প্রতারণার শিকার হয়েছন। নূর মোহাম্মদ প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ওই প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে।

এরপর কারুন্যপুরে মুন্সী বাড়ি গিয়ে পরিবারের সাহায্যে প্রবাসে থাকা ভুক্তভোগী নূর মোহাম্মদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে রেকর্ডেড বক্তব্য দেন।

এসময় নূর মোহাম্মদ জানান, প্রতারক প্রবাসী আতিয়ারের বড়ভাই দেলোয়ার হোসেন তার সাথে যোগাযোগ করে আতিয়ার কিছু ভালো ভিসার ব্যবস্থা করেছেন কয়েজজন লোক জোগার করে দিতে বলেন। কিন্তু 'আতিয়ারের মাধ্যমে যারাই প্রবাসে গিয়েছেন তারাই শুনেছি প্রতারণার শিকার হয়েছেন' জানিয়ে নূর দেলোয়ারের প্রস্তাব নাকচ করে দেন। পরে এ প্রতারক চক্রের মুলহোতা আতিয়ার ও দেলোয়ারের খপ্পরে পড়ে দুইজন লোক পাঠাতে সাহায্য করবেন বলে সম্মতি প্রকাশ করেন নূর মোহাম্মদ। কিন্তু নূর মোহাম্মদের কথা শুনে এলাকার তাঁর আত্মীয়স্বজনেরা প্রায় ৬ জনের মতো বিদেশে যেতে রাজি হয়ে যান। পারিবারিক ঐতিহ্য ও এলাকায় ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত নূর মোহাম্মদ বারবার সতর্ক করেন আতিয়ার গংদের, যেনো তার লোকদের সাথে প্রতারণা না করা হয়।

আতিয়ার তাকে জানান, কোনো ধরণের কথার হেরফের হবে না। পরে, আতিয়ারকে ছয়জন লোক দেন নূর মোহাম্মদ। আতিয়ার গংদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা ধাপে ধাপে পরিশোধ করা হয়। পরে আতিয়ারের পাঠানো ভিসায় মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন তার ভাই দেলোয়ার। কথাছিলো ওইলোকদের বিদেশে নিয়ে ওয়ার্ক পারমিট ও কাজের ব্যবস্থা আতিয়ার করে দিবেন এবং ততোদিন পর্যন্ত তার তত্বাবধানে থাকবেন। বিদেশের মাটিতে নেমে কথা মতো আতিয়ার ওই লোকদের রিসিভ করে তার বাসায় নিয়ে যান বটে, পরে তাদের কাজের কথা বলে বাসা থেকে বের করে অন্যত্র পাঠিয়ে দেন। তারপর ওই প্রবাসীরা পালিয়ে থেকে দিনে সর্বোচ্চ ২১ ঘন্টা পর্যন্ত কাজে করেন এবং চেষ্টা করেন আতিয়ার থেকে তার প্রতিশ্রুতি অনুযাযী কাজের অনুমতিপত্র আদায় করা ও কাজ নিতে চেষ্টা চেষ্টা করেন। এসময় কয়েকজন দিনে সর্বোচ্চ ২১ ঘন্টা কাজ করেও বেতন বঞ্চিত হন। পরে ওই ভুক্তভোগী প্রবাসীদের পরিবার থেকে চাপ আসে প্রবাসী নূর মোহাম্মদের দেশের বাড়িতে ও নূর মোহাম্মদের ওপর। পরে নূর মোহাম্মদ যোগাযোগ করেন আতিয়ারের সাথে। যেহেতু ওই প্রবাসীরা নিজের আত্নীয় স্বজন এবং নিজের পরিবার ও ব্যক্তিগত রেপুটেশনটাও খারাপ করতে চাননি নূর মোহাম্মদ।

তাই তিনি আতিয়ারকে বলেন, 'তোর কাছে এখন টাকা না থাকলে কার কতো লাগবে আমাকে বল, আমি দিচ্ছি তুই পরে দিয়ে দিস; তবুও তুই আমার মাধ্যমে আমার যেসব আত্নীয়স্বজন এনেছিস, তুই তাদের ওয়ার্ক পারমিট করে কাজের ব্যবস্থা করে দে। এলাকার বড় ভাই হিসেবে এই কথা টুকু রাখ।' আতিয়ার এতে রাজি হয়ে যায় এবং ধাপে ধাপে সে নূর মোহাম্মদ আতিয়ারকে সাড়ে আট লক্ষ টাকা দিয়ে ওই লোকদের ঝামেলা মেটান। প্রতারক আতিয়ার রহমান নূর মোহাম্মদের টাকা দেই দিচ্ছি করে আর ফেরত দেননি। আজও তার পিছনে পিছনে ঘুরছেন প্রবাসী নূর মোহাম্মদ।

এদিকে, এসব বড়ঘাট বাজারে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও নূর মোহাম্মদের সাথে প্রতারণার বিষয়ে প্রবাসী প্রতারক আতিয়ার রহমানকে অবগত অবগত করলে তিনি উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের কাছে একজন সহজ সরল প্রবাসী চাকরিজীবী হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে এ বিষয়ে কিছু ডকুমেন্টস ও ভুক্তভোগী নূর মোহাম্মদের দেওয়া অভিযোগের ভিডিও বক্তব্যের কিছু অংশ পাঠালে আতিয়ার রহমান লোক নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, 'প্রতিবেশি বড়ভাই নূর মোহাম্মদ কি বিনা লাভে আমাকে লোক দিয়েছেন। তিনি কি এসব লোক আমাদের দিয়ে কোনো টাকা পাননি!'

এছাড়া, তার সিন্ডিকেট দ্বারা ফরিদপুর অঞ্চলের মধ্যপ্রাচ্যের লোক নেওয়ার ক্ষেত্রে এতো সংখ্যক প্রতারণার অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনো গ্রহণযোগ্য উত্তর না দিয়ে বলেন, আমি এ ব্যাপারে পরে কথা বলছি। তবে, পরে তিনি আর যোগাযোগ করেন নাই।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ২৭, ২০২৫)