ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চত্বরে মা কুকুরের অগোচরে আটটি কুকুরছানাকে বস্তাবন্দি করে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনায় ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তার পরিবারকে সরকারি কোয়ার্টার থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার এনিমেল অ্যাকটিভিস্ট কমিটির তদন্ত টিম ঈশ্বরদী আসছেন বলে জানা গেছে।

গত সোমবার সকালে ঘটনার ছবি ও নিন্দাসূচক মন্তব্য সাবেক ইউএনও ও ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুবির কুমার দাশ এবং ইত্তেফাকের ঈশ্বরদী প্রতিনিধি স্বপন কুমার কুন্ডুর ফেসবুক পোস্ট থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর শহরজুড়ে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয় এবং ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাতে থাকেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।

ঘটনার পর স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সোমবার দুপুর থেকেই বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে এবং মঙ্গলবার জাতীয় দৈনিকে ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বলেন, “ঘটনাটি জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশনে প্রচারিত হওয়ার পর ঢাকার এনিমেল অ্যাকটিভিস্ট কমিটির একটি টিম মঙ্গলবার ঈশ্বরদীতে আসছেন বলে জানতে পেরেছি। প্রাণী কল্যাণ আইন, ২০১৯ অনুযায়ী প্রাণী হত্যার ঘটনায় মামলার বিধান রয়েছে। সেহেতু অভিযুক্ত নিশি বেগমের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা আমরা নেব। প্রয়োজনে মামলা করা হবে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, “কুকুরছানা হত্যার ঘটনায় ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নকে মঙ্গলবারের মধ্যে গেজেটেড কোয়ার্টার ছাড়তে লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেনেছি তারা ইতোমধ্যে বাসা খালি করছেন।”

অভিযুক্ত কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, অভিযুক্ত নিশি আকতার কোয়ার্টার ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি বলেন, “বাচ্চাগুলো আমাদের বাসার সিঁড়ির পাশে থাকতো এবং খুব ডিস্টার্ব করত। তাই আমি বাজারের ব্যাগে ভরে পুকুরের পাশে একটি সাজিনার গাছের গোড়ায় রেখে আসি। কীভাবে পুকুরে পড়েছে জানি না। আমি নিজে ছানাগুলোকে পুকুরে ফেলিনি।”

উল্লেখ্য, রবিবার সন্ধ্যার পর গেজেটেড ভবনে বসবাসরত কর্মকর্তার স্ত্রী নিশি আকতারের অবহেলায় বা ইচ্ছাকৃতভাবে আটটি কুকুরছানা ডুবে মারা যায়। ছানাগুলো হঠাৎ নিখোঁজ হলে মা কুকুরটি রাতভর আবাসিক এলাকা, অফিসার্স ক্লাব ও বিভিন্ন বাড়ির সামনে ছুটোছুটি করে আর্তচিৎকার করে। খাবার দিলেও সে মুখ দেয়নি। তখনও কেউ জানতেন না ছানাগুলোর কী হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাড়ির কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “সোমবার সকালে নয়ন স্যার মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। আমি ছানাগুলোর কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছু জানেন না বলেন। তখন তার ছেলে বলে—‘আম্মু ছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দিয়েছে।’ এরপর আমরা পুকুরে গিয়ে একটি বস্তা ভাসতে দেখি। তুলে খোলার পর আটটি ছানাকেই মৃত অবস্থায় পাই।”

মৃত ছানাগুলো দেখে মা কুকুরটি প্রচণ্ড আর্তনাদ করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মীরা কুকুরটিকে চিকিৎসা দেন এবং সেডেটিভ ইনজেকশন প্রয়োগ করেন।

(এসকেকে/এসপি/ডিসেম্বর ০২, ২০২৫)