বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ থাকায় বিপাকে শিক্ষার্থীরা
যশোরে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতি
স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : চার দফা দাবিতে সারাদেশের মত যশোরেও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলছে। ১ ডিসেম্বর থেকে কর্মবিরতি শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। দুইদিনই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে এসে ফিরে গেছেন। সোমবার যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এক শিফটে বিকল্প ব্যবস্থায় পরীক্ষা নেওয়া হলেও দ্বিতীয় শিফটে পরীক্ষা হয়নি। আর যশোর জিলা স্কুলে দ্বিতীয়দিনের মত পরীক্ষা গ্রহণ হয়নি। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে আন্দোলন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।
এদিকে শিক্ষকরা বলছেন, দীর্ঘদিনের বৈষম্য নিরসনের দাবিতে কেন্দ্রীয় ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই কর্মসূচি নিতে বাধ্য হয়েছেন তারা। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া হবে। সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের জন্য দুঃখ প্রকাশও করেছেন তারা।
যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান তাসনিম অফসরা বলেন, কিছু বলার নেই। পরীক্ষা দিতে এসে ফিরে যাচ্ছি। এখনও ৫টা পরীক্ষা বাকি রয়েছে। গতদিন রাত ১১ টাই জানিয়েছিলো পরীক্ষা হবে না। আজ পরীক্ষা দিতে এসে জানতে পারলাম পরীক্ষা হবে না।
একই প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজিফা ইয়াসমিন জানান, মনটা খারাপ হয়ে গেল। শেষ পরীক্ষা দিতে পারলাম না। আজ ধর্ম পরীক্ষা ছিলো। সকালে জোড় ক্লাসের ছেলেমেয়েরা দিতে পেরেছে। আমরা বিজোড় ক্লাসের তাই দিতে পারলাম না।
সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কথা হয় আজমিরা পারভীন রেখা নামে এক অভিভাবকের সাথে। তিনি জানান, গতদিন পরীক্ষা হয়নি। আজও হলো না। ছেলেমেয়েরা প্রস্তুতি নিয়ে এসে ফিওে যাচ্ছে। এতে করে তাদের লেখাপড়ায় বিঘœ তৈরি হচ্ছে। এমনকি তাদের মনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
খড়কি এলাকার মেজবাউদ্দীন ফেরদৌস, কারবালা এলাকার মো. মুক্তি, বাকি বিল্লাহ মেয়েকে স্কুলে পৌছে দিতে এসে দেখেন বালিকা বিদ্যালয়ে পরীক্ষা বন্ধ। তারা মনে করেন, শিক্ষার্থীদেও জিম্মি করে আন্দোলন বাস্তবায়ন করছে শিক্ষকরা। এই ঘটনায় তারা নিন্দা জানান। সাথে সাথে স্কুলের মেইন গেট খোলা রেখে হট্টগোল করার কারণে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
যশোর জিলা স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সিয়াম জানায়, পরীক্ষা দিতে স্কুলে এসেছে। এখন শিক্ষকরা বলছেন পরীক্ষা হবে না। পরীক্ষা না দিয়েই তাকে বাড়ি ফিরত হল। আগে থেকে জানতে পারলে ভাল হতো।
আরেক শিক্ষার্থী জানায়, স্কুলের আসার পর জানলাম পরীক্ষা হবে না। স্যারেরা আন্দোলন করছে এজন্য পরীক্ষা হচ্ছে না। পরীক্ষা কবে হবে এসএমএস করে জানিয়ে দিবেন বলেছে।
সালাউদ্দিন শাহীন নামে এক অভিভাবক বলেন, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে আন্দোলন মেনে নেওয়া যায় না। বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ করে শিক্ষকরা আন্দোলন করছে, এটা খুবই খারাপ কাজ। তাদের দাবির বিষয়ে আলোচনা কিংবা পরীক্ষা শেষে করতে পারত। শিশুরা প্রস্তুতি নিয়ে স্কুলে আসছে আর ফিরে যাচ্ছে। এটা তাদের জন্য ক্ষতিকরও বটে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে দ্রæত সমাধানের উদ্যোগ নিক সরকার। শিক্ষকরাও তাদের আন্দোলন শিথিল করুক।
যশোর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক কাজী শাহেদা পারভীন মুক্তি আন্দোলনরত শিক্ষকদের পক্ষে বলেন, সকাল বেলা প্রভাতি শিফটে পরীক্ষা নিয়েছে আয়া পিয়ন দিয়ে। এই পরীক্ষা ঠিকমত হয়নি। আমরা কেন্দ্রের সাথে সমন্বয় করে ৪ দফা দাবিতে আন্দোলন করছি। আজকের কর্মসূচি পালনের পর কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত দিবে আমরা সেটা পালন করবো।
যশোর জিলা স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক গাজী আনিছুর রহমান বলেন, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেডভিত্তিক (ক্যাডার) পদসোপানসহ চার দফা দাবিতে দেশের ৭ শতাধিক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি আমরাও পালন করছি। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করছি। দীর্ঘদিনের বৈষম্য নিরসনের জন্য বাধ্য হয়েই তারা কর্মসূচি পালন করছি। সরকার দাবি মেনে নিলে শিক্ষার্থীদের সাময়িক ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করো। শুক্র ও শনিবার হলেও আমরা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণ করবো। অভিভাবকদের বলবো, আপনারা উদ্বিগ্ন হবেন না।
যশোর জিলা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদিন বলেন, চার দফা দাবিতে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প জনবল না থাকায় পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। আশা করছি দ্রæতই সমস্যার সমাধান হবে।
যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান, প্রভাতী শিফটের সহকারি প্রধান শিক্ষক সোহেল উদ্দীসসহ ৭ জন দায়িত্ব নিয়ে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়েছেন। এডিসি শিক্ষাকে হাজার বার কল করেছি তিনি কল ধরছেন না। আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে আগে থেকে পরীক্ষা বন্ধের কোনো নোটিশ করা যাবে না। এদিকে শিক্ষকরা আন্দোলনরত। আমার একার পক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব না।
এদিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) খান মাসুদ বিল্লাহর সরকারি কন্টাক নম্বরে যোগাযোগ করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
(এসএ/এসপি/ডিসেম্বর ০২, ২০২৫)
