কালিগঞ্জে সন্ত্রাসীর ছোঁড়া গুলিতে গ্রাম পুলিশের স্ত্রী জখম
খুলনা হাসপাতালে হয়নি অপারেশন, হতাশায় পরিবার, নেই কোন গ্রেপ্তার
রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার সোতা গ্রামে স্বামী পরিত্যক্তা অপর্ণা মন্ডলের সঙ্গে পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় সন্ত্রাসী ইয়ার আলীর ছোঁড়া গুলিতে সোমবার বিকেলে ছেলে হৃদয় তরফদার ও গ্রাম পুলিশ মোসলেম গাজীর স্ত্রী হালিমা খাতুন জখমের ঘটনার গত ২৪ ঘণ্টায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। হয়নি কোন মামলা। ফলে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে গুলিবিদ্ধ হালিমা খাতুনকে সোমবার রাতে খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও মঙ্গলবার দুপুরে নাক কান ও গলার ডাক্তারকে দেখিয়ে বুধবার অপারেশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলে ৫ তলায় স্থানান্তর করা হয়েছে। ফলে গ্রাম পুলিশ মোসলেম গাজী তার স্ত্রীকে বাঁচাতে পারবেন কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পিবিআই সাতক্ষীরার সহকারি পুলিশ সুপার রেজাউল হোসেনসহ গোয়েন্দা অপরাধ ও তদন্ত শাখার কর্মকর্তাসহ (সিআইডি) গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, সোতা গ্রামের ডিভোর্সী অপর্ণা মন্ডলের (৩২) সাথে হত্যা ও ডাকাতিসহ কমপক্ষে তিন ডজন মামলার আসামী ইয়ার আলীর দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া সম্পর্ক চলে আসছে।খুলনায় তার স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর অপর্ণা মন্ডল তার বাবা হরিশংকর মন্ডলের বাড়িতে থাকতেন। পরকীয়া সম্পর্কের জেরে ইয়ার আলী সোমবার দুপুরে অপর্ণা মন্ডলের বাড়িতে আসে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিকেল তিনটার দিকে ইয়ার আলীর খোঁজে স্ত্রী তাহমিনা খাতুন তার ছেলে হৃদয় তরফদারকে(২১) নিয়ে অপর্ণা মন্ডলের বাড়িতে আসে। অপর্ণা মন্ডলের বাড়িতে পৌঁছানোর পর ইয়ার আলীর সাথে তহমিনা ও হৃদয়ের কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় অপর্ণা মন্ডলের বাড়ির বিপরীতে নিজ বাড়ির ফটকে ছেলে সাইফুল্লাহকে নিয়ে পরিস্থিতি দেখছিলেন হালিমা খাতুন।
এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ ইয়ার আলী তার স্ত্রীকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে হালিমা খাতুনের মাথায় ও বাম চোয়ালে লাগে। এ সময় হৃদয় তরফদারও গুলিবিদ্ধ হন। হৃদয়কে উদ্ধার করে তার মা সাতক্ষীরার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। হালিমা খাতুনকে প্রথমে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অবস্থার অবনতি হওয়ায় সোমবার রাত ৭টার দিকে হালিমাকে খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় গ্রাম পুলিশ মোসলেম গাজী মঙ্গলবার বিকেলে এ প্রতিবেদককে জানান, সোমবার বিকেল তিনটার দিকে ইয়ার আলীর গুলিতে তার স্ত্রী জখম হওয়ার পর রাত ৭টার দিকে খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে তার মাথা ও চোয়ালের সিটি স্ক্যান করা হয়। প্রতিবেদনে মাথার মাধ্য গুলির অস্তিত্ব রয়েছে মর্মে জানানো হয়। একপর্যায়ে মঙ্গলবার তার অপারেশন করার কথা বললেও নাক, কান ও গলার ডাক্তার দেখানোর জন্য তাকে ৫ তলায় স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া অভিজ্ঞ ডাক্তার বুধবার এসে দেখার পর অপারেশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। দ্রুত অপারেশন করা না হলে তার স্ত্রীকে বাঁচিয়ে তোলা কঠিন হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। টাকার অভাবে তিনি স্ত্রীকে বেসরকারি কোন হাসপাতালে অপারেশন করতে নিয়ে যেতে পারছেন না বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোতা গ্রামের কয়েকজন নারী ও পুরুষ জানান, মংকরপুর গ্রামের ইয়ার আলী, বাহার আলী ও জোহর আলী তিন ভাই ও রেজাউল ইসলামসহ ছয় জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসীদলের হাতে এলাকা জিম্মি হয়ে পড়েছে। গ্রাম পুলিশ থেকে জনপ্রতিনিধি ও চাকুরিজীবি থেকে সাধারণ মানুষকে ওই এলাকায় বসবাস করতে হলে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। সোমবার হালিমা খাতুন ও নিজের ছেলের উপর গুলি চালানোর ঘটনায় একটি মানুষ নেই যে ইয়ার আলীর বিরুদ্ধাচারণ করবে। সোমবার পুলিশ ঘটনান্থলে এলেও তাদেরকে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। পালিয়ে গেছে অপর্ণা মন্ডল। তাছাড়া ঘটনার দুই দিনে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় ও থানায় মামলা না হওয়ায় কৃষ্ণনগর এলাকা ত্রাসের রাজত্বে পরিণত হয়েছে। সাতক্ষীরার যোগরাজপুর গ্রামের সাবেক প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোস্তফা আবুল কালামের বাড়িতে গত বছরের মে মাসে ডাকাতির ঘটনায় জেলখানায় গৃহকর্তা তাকে সনাক্ত করা, আদালতে ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করার পর ওই মামলায় ইয়ার আলীসহ ৬জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে। অথচ ইয়ার আলী জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারো অস্ত্র নিয়ে তার সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
এ ব্যাপারে খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালের কোন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
কালিগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক আসলাম খাঁন জানান, এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। সম্ভব হয়নি সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা।
(আরকে/এসপি/ডিসেম্বর ০২, ২০২৫)
