রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ২০০৯ সালে আমার স্বামীকে তৎকালিন পুলিশ সুপার এসএম মনিরুজ্জামান ও ভ‚মিদস্যুরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। অথচ সেই পুলিশের লোকই (সিআইডি) তদন্ত করে কোন হত্যাকারিকে চিহ্নিত করতে না পারার কথা উল্লেখ করে মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে।

গত বছরের ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও তার সরকারের আমলে আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার কিছু সদস্য সাধারণ মানুষসহ রাজনৈতিক নেতাদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন চালালেও ভোল পাল্টে তারা চাকুরি করে যাচ্ছেন। অনেকে অবসরে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সাইফুল্লাহ লস্কর হত্যা মামলা নতুন করে বিচার শুরু করে তৎকালিন পুলিশ সুপার এসএম মনিরুজ্জামানসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

স্বামীর ১৬তম মৃত্যু বার্ষিকীতে বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে কথোপকথনের একপর্যায়ে এ অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন নিহত সাইফুল্লাহ লস্করের সহধর্মিনী সুরাইয়া আক্তার (৭১)।

এদিকে সাইফুলাহ লস্করের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি শুক্রবার সকাল ১০টায় মরহুমের কবর জিয়ারত শেষে পার্শ্ববর্তী মাঠে এক স্মরণসভার আয়োজন করেছে। এ ছাড়াও জেলা ভ‚মিহীন সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠণ শুক্রবার সকালে মরহুমের মাজারে পুষ্প স্তবক অর্পণ করবে।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দেবহাটার নোড়ারচকে যুবদল নেতা মিঠু খান ও ইউসুফ আব্দুলাহ’র ইজারাকৃত জলমহল ২০০৯ সালের ২২ নভেম্বর ভূমিহীনরা দখলে নেওয়ায় ভূমিদস্যুরা সাতক্ষীরা থেকে ভূমিহীন আন্দোলন মুছে ফেলার জন্য দু’টি বড় এনজিও প্রধানের সহযোগিতা নিয়ে পুলিশ ও ভূমিদস্যুরা শহরতলীর একটি বাগান বাড়িতে দফায় দফায় বৈঠক করে। ২০০৯ সালের ৩ ডিসেম্বর রাতে তৎকালিন পুলিশ সুপার এসএম মনিরুজ্জামান (বর্তমানে অবসরে), সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম কামরুজ্জামান ছয় মাস আগে নির্বাচিত সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের কমিটির সদস্যদের সংবর্ধনা দিয়ে সাংবাদিকদের কাছের মানুষ হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন। আগে থেকে সাইফুলাহ লস্করের হত্যার মিশনের পরিকল্পনা করে নিজেকে নির্র্দোষ প্রমান করতে ৪ ডিসেম্বর তৎকালিন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার এসএম মনিরুজ্জামান বেড়ানোর কথা বলে সাতক্ষীরার তৎকালিন জেলা প্রশাসককে নিয়ে কালীগঞ্জের বন্দকাটি গ্রামের কুখ্যাত হরিণ শিকারী প্রয়াত সাত্তার মোড়লের লঞ্চে সুন্দরবনে রাত কাটান। রাতে প্রয়াত সাত্তার মোড়ল ও তার সহযোগি পাতাখালির কুখ্যাত হরিণ শিকারী প্রয়াত আব্দুল আজিজ প্রশাসনের দু’ কর্মকর্তার তাস খেলার অংশীদার ছিলেন। সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের দু’জেলা প্রধানের একইসাথে সুন্দরবন বিহার সাতক্ষীরার জন্য সেটাই ছিল প্রথম।

২০০৯ সালের ৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাত তিনটার দিকে সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির প্রশিক্ষণরত ্উপপরিদর্শক (টিএসআই) নজরুল ইসলাম ও সিপাহী শাহজালাল (কংনং-২৪৮) বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির সহ-সভাপতি ও জেলা ভ‚মিহীন সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সাইফুলাহ লস্করকে কাটিয়া লস্করপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে বাইরে ডেকে আনেন।

পরদিন ভোরে আকবর লস্করের বাড়ির পুকুর পাড়ে কাঠ ও বিচালী রাখার ঘরের মধ্যে সাইফুলাহ লস্করের রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় সদর থানার উপপরিদর্শক মনোয়ারা খাতুন ২০০৯ সালের ৫ ডিসেম্বর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন। মামলার তদন্তভার সদর থানার উপপরিদর্শক আব্দুস সবুরের(বর্তমানে প্রয়াত) উপর ন্যস্ত হয়। ৬ ডিসেম্বর রাতে জেলা জাপা নেতা ও ভ‚মিহীনদের পৃষ্টপোষক অ্যাড. আব্দুর রহিমকে আহবায়ক ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা শাখার সম্পাদক সাবেক সাংসদ অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহকে সদস্য সচিব করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট সাইফুলাহ লস্কর হত্যার বিচার বাস্তবায়ন সংগ্রাম ও সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়।

পুলিশ সুপার এসএম মনিরুজ্জামান, সদর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার শামসুল আলম সরকার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম কামরুজ্জামান ও কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির শিক্ষানবীশ উপপরিদর্শক নজরুল ইসলামসহ ভ‚মিদস্যু মিঠু খান, আশাশুনির শরাফপুরের ভূমিদস্যু প্রয়াত বসির আহম্মেদ, শোভনালী ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম (প্রয়াত), চম্পাফুল ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক, ভ‚মিদস্যু নলতার মহব্বত মীর (প্রয়াত), ইউসুফ আব্দুল্লাহসহ হত্যাকারিদের গ্রেফতারের দাবিতে পরদিন সকালে বিভিন্ন সংগঠনের ডাকে আপামর জনতা শহীদ স.ম আলাউদ্দিন চত্বরে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। এতে সারা সাতক্ষীরা অচল হয়ে পড়ে। কর্মসূচি পালনকালে সাইফুল্লাহ লস্করকে হত্যার পিছনে ভূমিহীনদের পৃষ্টপোষক সাতক্ষীরার দু’টি বড় বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) নির্বাহী পরিচালকের হাত আছে বলে সুধী সমাজের নেতৃবৃন্দ দাবি করেন । যা’ পরিদিন বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়। জনগনের আই ওয়াশ করতে কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির শিক্ষানবীশ উপপরিদর্শক নজরুল ইসলামকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয় ।

ক্ষুব্ধ সাতক্ষীরাবাসির দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন দিকে ঘোরাতে তৎকালিন জেলা পুলিশ সুপার এসএম মনিরুজ্জামান ২০০৯ সালের ৯ ডিসেম্বর রাতে দেবহাটার নোড়ারচকে ভ‚মিহীনদের হামলার শিকার হয়েছেন মর্মে কাল্পনিক নাটক তৈরি করে সখীপুর স্বাস্থ্য কমপেক্সে থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। পরবর্তীতে শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে তৎকালিন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি কমঃ রাশেদ খান মেনন শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে পৃথক সমাবেশে সাইফুল্লাহ লস্কর হত্যার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ঘোষণা দেন। একপর্যায়ে সাইফুল্লাহ লস্করকে হত্যার যথার্থ পরিকল্পনাকারির পুরষ্কার হিসেবে এসএম মনিরুজ্জামান অতিরিক্ত উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) হিসেবে পদোন্নতি পান বলে আবাল বৃদ্ধ বনিতার মুখেমুখে উচ্চারিত হয়।

নিহতের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার বাদি হয়ে ৬ ডিসেম্বর থানায় এজাহার জমা দিলে তা হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির শিক্ষানবীশ উপপরিদর্শক (টিএসআই) নজরুলসহ দু’জন পুলিশ ২০০৯ সালের ৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাত তিনটার দিকে সাইফুলাহ লস্করকে তার বাড়ি থেকে ডেকে আনেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। পুলিশ ও সুবিধা বঞ্চিত ভ‚মিদস্যুরা সাইফুল্লাহ লস্করকে হত্যা করেছে মর্মে মামলায় বলা হয়। এ ছাড়া ঘটনার রাতে পুলিশ ও সাদা পোশাক পরিহিত কিছু লোকজন সাইফুল্লাহ লস্করের বাড়ির আশে পাশে অবস্থান করছিল বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সদর থানার তৎকালিন উপপরিদর্শক সরদার মোশাররফ হোসেন ২০০৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর কালীগঞ্জের চম্পাফুল ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন ব্নিপি’র সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক গাইন (৬৪) ও ২০১০ সালের ৩০ জুন সাতক্ষীরা শহরের থানাঘাটার আবু সাঈদ(৫৮) ওরফে নাক কাটা সাঈদকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ২০১০ সালের ৪ জানুয়ারি হাইকোর্ট থেকে তৎকালিন জেলা যুবদল নেতা মিঠু খান ও আশাশুনির শোভনালী ইউপি’র তৎকালিন চেয়ারম্যান ভূমিদস্যু শহীদুল ইসলাম(প্রয়াত) চার সপ্তাহের জন্য অন্তবর্তীকালিন জামিন নেন। একই সময়ে সাতক্ষীরার বহুল আলোচিত ভ‚মিদস্যু আশাশুনির সরাফপুরের বসির আহম্মেদ(প্রয়াত) ও আলীপুরের আব্দুর রউফ একইভাবে হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের জন্য জামিন গ্রহণ করেন। পরে তারা আর জামিনের আবেদন বাড়ান নি। এমনকি আদালতের নির্দেশে নিম্ন আদালতে তারা আত্মসমর্পণ করেননি।

একপর্যায়ে মামলাটির তদন্তভার পরিবর্তিত হলে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি পুলিশের গোয়েন্দা, অপরাধ ও তদন্ত সাতক্ষীরা শাখার পরিদর্শক আমির হোসেন আমু তদন্তভার বুঝে নেন। ৩১ জানুয়ারি সংস্থার খুলনা বিভাগীয় পুলিশ সুপার (সিআইডি) আব্দুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে বাদিকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেন। এ ঘটনায় পরদিন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরে মামলার তদন্তভার ২০১২ সালে উপপরিদর্শক লস্কর জায়াদুল হক ও ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর মামলার তদন্তভার একই সংস্থার বাগেরহাট শাখার পরিদর্শক সাইফুল ইসলামের উপর ন্যস্ত করা হয়। তদন্তকালে সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে বাদি ও তার স্বজনদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানির অভিযোগ ওঠে। সাড়ে চার বছরে সাতজন তদন্তকারি কর্মকর্তা পরিবর্তণ করা হয়। মামলা থেকে বাঁচতে এসএম মনিরুজ্জামান প্রভাব খাটিয়ে তিন বছর আগে রাজশাহী থেকে খুলনা রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেন।

এদিকে সাইফুল্লাহ লস্কর হত্যার বিচার বাস্তবায়ন সংগ্রাম ও সমন্বয় কমিটির সদস্যরা অধিকাংশই তৎকালিন ক্ষমতাসীন ১৪ দলের সদস্য হওয়া, বাদি ও তার পরিবারের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব, অ্যাড. আব্দুর রহিমের মৃত্যু, মিঠু খানসহ সন্ধিগ্ধ হত্যাকারির সঙ্গে বাদির স্বজনদের ঘনিষ্টতা, অস্তিত্ব সঙ্কটে থাকা জেলা ভূমিহীন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলী নুর খান বাবলু দোষী এক পুলিশ কর্মকর্তার অর্থায়নে ২০১৩ সালে একটি সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের সঙ্গে স্বপরিবারে বনভোজনে সুন্দরবনে বেড়াতে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে লস্কর হত্যাকারিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম থেমে যায়। যদিও আলী নূর খান বাবুল তা অস্বীকার করেন। একপর্যায়ে ২০১৫ সালের ৬ জুলাই মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

চারটি ধার্য দিনে ভীত সন্ত্রস্ত বাদি পুলিশ ও ভূমিদস্যৃদের বিরুদ্ধে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিচার পাওয়া যাবে না এমন চিন্তা ও চেতনাকে মাথায় রেখে আদালতে নারাজির আবেদন দাখিল না করায় ২০১৮ সালের ২১ জুন মামলাটির কার্যক্রম চলে যায় হিমাগারে।

বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি বিএম শামীমুল হক জানান, তারা বিচারের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন।

এদিকে দেবহাটার খলিষাখালির মর্জিনা খাতুন বলেন, তার স্বামী ভূমিহীন নেতা কামরুল গাজী সাইফুলল্লাহ লস্করের সঙ্গে ভ‚মিহীন আন্দোলন করেছেন। খলিষাখালির জমি সুপ্রিম কোর্টের আদেশে লাওয়ারিশ ঘোষণার পরও আইডিয়ালের নির্বাহী পরিচালক সখিপুরের ডাঃ নজরুল, আব্দুল আজিজ, শিমুলিয়ার সুরুজ কাজী, তার বাবা গোলাম কাজী, আহছানিয়া মিশনের ইকবাল মাসুদ দেবাহাটা থানার তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ ওবায়দুল্লাহকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে মিথ্যা দ্রুত বিচার আইনে দায়েরকৃত মামলায় খালাস পাওয়া তার স্বামী কামরুল, মুর্শিদ ও শরিফুলকে আদালত চত্বর থেকে ধরে এনে পরদিন ডাকাতির চেষ্টা ও অস্ত্র মামলা দিয়ে আদালতে পাঠিয়েছেন।

এ নিয়ে প্রতিবেদন করায় তৎকালিন পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানের নির্দেশে ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি শহরের পিএন হাইস্কুলের পাশ থেকে সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে পুলিশ তুলে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের পর মিথ্যা নাশকতা ও চাঁদাবাজির মামলার প্রধান আসামী করে জেলে পাঠায়। ঘটনা মিথ্যা জেনেও ওইসব মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। এ ঘটনায়ও পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।

গত বছরের ১ নভেম্বর খলিষাখালির ১৩১৮ বিঘা লাওয়ারিশ জমি দখলে রাখতে নলতার চেয়ারম্যান আরিজুল পাড়, মাছ আনারুল, পারুলিয়ার চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বাবু, সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, আউডিয়ালের ডাঃ নজরুল, ইকবাল মাসুদ, সুরুজ কাজী, আব্দুল আজিজ জোট বেঁধে প্রশাসনকে ব্যবহার করে তার স্বামীকে গত বছরের পহেলা নভেম্বর নির্যাতন করে হত্যা করেছে। মামলা হলেও প্রধান আাসামী আরিজুল পাড়, গোলাম ফারুক বাবু, সিরাজুল ইসলামের পক্ষ নিয়ে জামিন শুনানীতে জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুস সাত্তারের পক্ষপাতিত্বমূলক ভূমিকার কারণে তাদেরকে জেলে যেতে হয়নি। পুলিশ সুপার ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো সকল আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। উপরন্তু প্রশাসনের সহযোগিতায় হাইকোর্টের স্টাটাস-কো থাকার পরও ভ‚মিহীনদের উচ্ছেদ করে সেখানে সর্বোচ্চ আদালতে স্বত্বহীন হওয়া ডাঃ নজরুলদের প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এ মামলায় ন্যয় বিচার পাবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন মর্জিনা খাতুন। তিনি সাইফুলল্লাহ লস্কর হত্যা, কামরুল হত্যাসহ সকল ভ‚মিহীন হত্যার ন্যয় বিচার দাবি করেন তিনি।

এ ব্যাপারে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাড. মোসলেমউদ্দিন বলেন, ময়না তদন্তে কোন ব্যক্তির অস্বাবাভিক মৃত্যুর কথা উল্লেখ করলে সেই মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তার আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের সূযোগ নেই। গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরণের হত্যাসহ সকল হত্যার বিচার হওয়া উচিত। তবে বিচার পেতে হলে তদন্তকারি কর্মকর্তা ও বিচারকার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত সকলের আন্তরিক হতে হবে।

(আরকে/এএস/ডিসেম্বর ০৪, ২০২৫)