‘কোনো ষড়যন্ত্রই ছাত্র-যুবকদের অগ্রযাত্রাকে থামাতে পারবে না’
সঞ্জীব কুমার দাস, কাপাসিয়া : গাজীপুরের কাপাসিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে বিশাল ছাত্র-যুব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৫ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকালে কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে কেন্দ্রীয়, জেলা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা ফরহাদ মোল্লার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।
কাপাসিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আবুল ফাত্তাহর পরিচালনায় প্রধান আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন গাজীপুর -৪, কাপাসিয়া আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত দাড়িপাল্লা প্রতীকের পদপ্রার্থী মু. সালাউদ্দিন আইউবী। বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) জিএস এস এম ফরহাদ। গাজীপুর জেলা জামায়াতের আমির ড. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম,গাজীপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা শেফাউল হক,ইসলামী আন্দোলন কাপাসিয়ার সভাপতি মাওলানা কাজিম উদ্দিন,মনোহরদী উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা সানাউল্লাহ, ইসলামী আন্দোলন কাপাসিয়ার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, গাজীপুর মহানগর ছাত্র শিবিরের সভাপতি রেজাউল ইসলাম, গাজীপুর জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতিইয়াসিন আরাফাত, টঙ্গী তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা ছাত্র শিবিরের সভাপতি মু. ইকবাল কবির, ভিপি খায়রুল আনাম প্রমুখ।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ছাত্র ও যুব সমাজকে নৈতিক ও আদর্শিক উন্নয়নের পথে উদ্বুদ্ধ করতেই এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও তরুণ-তরুণীরা অংশ নেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিগত দিনে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে যারা ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়েছে, তাদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং তাদের জন্য দোয়া করেন।
বিএনপির চেয়ারপার্সন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিগত দিনের ভূমিকার ভূয়সি প্রশংসা করে রোগমুক্তি কামনায় সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, এই বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য বার বার হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। বাতিলের কাছে ছাত্রশিবির কখনো মাথা নত করেন নাই। আপামর মানুষ ন্যায় প্রতিষ্ঠায় বার বার জীবন দিয়েছে। ফ্যাসাবাদী হাসিনা যা রেখে গেছে, আজকে একটি রাজনৈতিক দল তা তাদের কাদে নিয়েছে। ফ্যাসিবাদের পতনের পর তারা পাথর মেরে মানুষ হত্যা করেছে, পাথর চুরি করেছে। এখন সময় বদলেছে, মানুষ রাজনীতির গুনগত পরিবর্তন চায়। মানুষের মেন্ডেটকে যথাযথ কাজে লাগাতে হবে, হানাহানি বন্ধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের রায় সঠিক ছিল, তারা বুঝতে পেরেছে, আগামী নির্বাচনে মানুষ সঠিক রায় দিবে। কাপাসিয়ার মনোনীত প্রার্থী সালাউদ্দিন আইউবী ২০২০-২১ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের নেতৃত্ব দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক ভাবে তার পরিচয় রয়েছে। ইসলাম প্রতিষ্ঠায় মুসা (আঃ) যেমন ভূমিকা রেখেছে, তেমনি ছাত্র-যুবকরা তাদের সর্বশক্তি দিয়ে ইসলামী আন্দোলন অব্যাহত রাখবে। যুবকদের ভূমিকা কখনো বিফলে যায়নি। ফ্যাসিবাদীরা আমাদের অনেক ভাইদের গুম, খুন করেছে, তাতে অগ্রযাত্রা থামানো যায়নি। আজ একটি রাজনৈতিক দল পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট শ্লোগান দেয়। "একটা একটা শিবির ধর, সকাল বিকাল নাস্তা কর"। আমাদের যারা নিষিদ্ধ করেছিল, তারা আজ নাই।
একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আমরা কোনো অপশক্তির কাছে মাথানত করি না। কাপাসিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের মূল্যবান সম্পদ রয়েছে, বিগত দিনে তা লুটপাট হয়েছে, চাঁদাবাজি হয়েছে। উপস্থিত ছাত্র-যুবকদের ভালো ছাত্র, ভালো সন্তান ও ভালো মানুষ হওয়ার আহ্বান জানান।
ইসলামের বিরুদ্ধে একটি গোষ্ঠী বার বার ষড়যন্ত্র করেছে, আজও তারা অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা নারীদের ইসলামে সবচেয়ে বেশি মর্যাদা দিয়েছেন। ইসলাম প্রতিষ্ঠায় আয়েশা (আ:) এর অনেক বড় ভূমিকার উদাহরণ দিয়ে বলেন, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হলে, ক্ষমতায় মআসলে নারীদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের জিএস এস এম ফরহাদ বলেন, শিক্ষার্থীরা ডাকসুতে যা চেয়েছে , তা-ই হয়েছে। আমাদের অনেক রক্ত ঝড়েছে কিন্তু রক্ত দেয়া এখনো শেষ হয়নি।ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, কিন্তু বিগত দিনের কম্বল চুরি ও দুর্নীতি এখনো শেষ হয়নি। শপথ নিতে হবে, ভালো হতে হবে। কেন্দ্রীয় বাজেট গ্রাম পর্যায়ে আসতে আসতে কমতে থাকে। আগামী দিনে দুর্নীতিকে লাল কার্ড দেখাবো। ভুল মানুষকে ভোট দিবেন না, বড় বড় জায়গায় আজ চাঁদাবাজি হয়। সঠিক জায়গায় ভোট না দিলে চাঁদাবাজি হবেই। ভোট চাইতে গেলে প্রার্থীদের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। এমপি মন্ত্রীরা এলাকায় এসে সালিস দরবার করে বেড়ায়। রাষ্ট্রীয় পলিসি নিয়ে চিন্তা না করে চাঁদাবাজি করে বেড়ায়। সংসদে গিয়ে কিছু না বুঝে দলের নেতাদের কথায় বিল পাশ করে। এসব একপেশে বিল জনগণের কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। তাদের লাল কার্ড দেখানো হবে। মিথ্যে কথা বলে নির্বাচিত হয়ে আগের মতো আচরণ করে। তারা নীতিনৈতিকতার ধার ধারে না। নৈতিক শিক্ষার প্রতি খেয়াল করে না। সুষ্ঠু ধারার শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার উত্তরণ করতে হবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেছি, আপনারা এলাকায় দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের লোকদের ভোট দিয়েছে। দুর্নীতিবাজদের এলাকায় ঢুকতে দিবেন না। আপনি অন্ততঃ দুর্নীতি করবেন না, এই কমিটমেন্ট দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের ভোট দেয়নি, তাদের এখনো শিক্ষা হয়নি। যারা চাঁদাবাজির জন্য নিজেদের লোকদের খুন করে তাদের ভোট দিবেন না। জনপ্রতিনিধিরা ইচ্ছা করলে জনসম্পদকে শক্তিশালী করতে পারে। তাহলে বেকার থাকতো না। শিক্ষার্থীরা যেন ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। কুশিক্ষা ও হতাশা পরিহারে নিশ্চয়তা দিতে হবে। দাড়িপাল্লায় ভোট দেয়ার জোয়াড় উঠেছে। বিগত দিনে দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, বিসিএস দলীয় করন করা হয়েছিল। আবার ৫ বছর পর এ এলাকায় দেখতে আসবো। দলীয় নেতৃবৃন্দদের নিজ নিজ জায়গায় থেকে কাজ করার আহ্বান জানান।
গাজীপুর -৪, কাপাসিয়া আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী সালাউদ্দিন আইউবীর তার বক্তব্যে প্রতিপক্ষ বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, তোরণ ভেঙে দিয়ে আপনাদের নিজেদেরই মাজা ভেঙে দিয়েছেন। এখন ধানের শীষের সময় শেষ, দাড়িপাল্লার বাংলাদেশ। ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রত্যেকটি মানুষের হৃদয়ে আজ দাড়িপাল্লা। তোরণ ভেঙে দিতে পারবেন, কিন্তু মানুষের হৃদয় থেকে দাড়িপাল্লা প্রতীক মুছে ফেলতে পারবেন না। আগামী নির্বাচনে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দাড়িপাল্লা বিজয়ী হবে ইনশাআল্লাহ। দলীয় নেতা কর্মীদের নিজ অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান।
(এসকেডি/এএস/ডিসেম্বর ০৫, ২০২৫)
