১০ জেলায় ২শ’ অভয়াশ্রম, জলাশয়ে ফিরছে দেশীয় মাছ
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : দেশের নদী, খাল, বিল ও জলাশয় থেকে থেকে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি কমে আসছে দেশীয় মাছের সংখ্যাও। তার ব্যতিক্রম নয় বিল বেষ্টিত গোপালগঞ্জ জেলায় মাছের আশ্রয়স্থল, প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে নষ্ট হচ্ছে। প্রজনন মৌসুমে অবাধে মাছ শিকারের ফলে অসংখ্য প্রজাতির দেশীয় মাছ আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। কিন্তু বিলুপ্ত প্রজাতির দেশীয় মাছের উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিস্তার, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং মৎস্যজীবীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে দেশীয় প্রজাতির মাছ ও শামুক সংরক্ষণ এবং উন্নয়ন প্রকল্প।
২০২১ সালথেকে গোপালগঞ্জ সহ ১০ জেলায় মাছ রক্ষায় সাফল্য দেখাচ্ছে এ প্রকল্প । মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তুলে মৎস্যজীবীদের সম্পৃক্ত করায় সাফল্য এসেছে বলে মনে করছেন প্রকল্প সংশ্নিষ্টরা । তারা জানিয়েছেন, শুধু দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষা নয়, মাছের সঙ্গে সংশ্নিষ্টদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে টেকসই আয়ের পথ দেখানো হচ্ছে। এ প্রকল্প থেকে ইতোমধ্যে ভ্যান, গরু, ছাগলসহ অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে মৎস্যজীবীদের মধ্যে।
সরকার দেশীয় প্রজাতির মাছ ও শামুক সংরক্ষণের জন্য ২০২১ সালে একটি প্রকল্প গ্রহন করে। এ প্রকল্পের অফিস গোপালগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিসের একটি ভবনে ওই বছরের মার্চ মাস থেকে কাজ শুরু করে । আগামী বছরের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত হবে। এ প্রকল্পের অর্থায়নে এ পর্যন্ত গোপালগঞ্জে ৪৬টি, ফরিদপুরে ১৯টি, মাদারীপুরে ১১ টি, শরীয়তপুরে ১৮টি বরিশাশে ৩৫টি, ঝালকাঠিতে ১২টি পিরোজপুরে ২০টি, বরগুনায় ১৫টি, বাগেরহাটে ১১টি ও নড়াইল জেলায় ১৩টি সহ মোট ২শ’টি অভয়াশ্রম স্থাপন করা হয়েছে । প্রতিটি অভয়আশ্রমের আয়তন ১ হেক্টর। সে হিসাবে ২শ’টি অভয়াশ্রমের আয়তন ২শ’ হেক্টর।
ঢাকা,খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ১০ জেলার নদী, খাল, বিল ও জলাশয়ে দেশীয় মাছের বংশ বৃদ্ধির জন্য প্রজনন মৌসুমে মা মাছগুলো এখানো আশ্রয় নিচ্ছে। এখানে বংশ বিস্তার করছে । বর্ষায় এখান থেকে মাছগুলো নদী, খাল, বিল সহ জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিটি অভয়াশ্রমে ২০ জন মৎস্যজীবীকে নিয়ে গঠন করা হয় অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনা কমিটি। এছাড়া প্রতিটি অভয়াশ্রমে ১ জন করে পাহারাদার নিয়োজিত রয়েছেন। তাকে মাসে ৭ হাজার ৫শ’ টাকা পারিশ্রমিক হিসেবে প্রকল্প থেকে দেওয়া হচ্ছে। অভয়াশ্রম তৈরি করার ফলে চিতল, আইড়, বোয়াল, সরপুটি, বাচা, চ্যালেন্দা, রয়না, খলিশা, পাবদা, ট্যাংরা, নন্দেল সহ প্রভৃতি বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির মাছ এখন সেখানে মিলছে।
প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক আসলাম হোসেন শেখ বলেন, শীতকালে পানি কমে যাওয়ায় মাছগুলো আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। এ কারণে নদী, খাল ও বিলে সাড়ে ৮শ’ বাঁশ ২১টি টিলার, গাছের ডাল-পালা সহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে মাছের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য অভয়াশ্রম তৈরি করা হয়েছে। অভয়াশ্রমের চারদিকে ১ কিলোমিটারের মধ্যে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অভয়াশ্রমে মাছগুলো আশ্রয় নিয়ে নিরাপদে বংশ বিস্তার করতে পারছে। বিলুপ্ত প্রায় প্রজতির মাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে খাল, বিল, নদী নালায় দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রান্তিক জেলেরা এখান জলাশয় থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছেন । দেশীয় প্রজাতির মাছ বিশাল জনগোষ্ঠির নিরাপদ আমিষের চাহিদা পুরণ করছে।
প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো: খালিদুজ্জামান বলেন, দেশীয় প্রজাতির মাছ ও শামুক সংরক্ষণ এবং উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩ বিভাগের ১০ জেলায় ২শ’ অভয়াশ্রম স্থাপন করে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। এতে জীব বৈচিত্রও রক্ষা পাচ্ছে। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিরাপদ আমিষের সরবরাহ বেড়েছে । এতে মৎস্য সংশ্লিষ্ট পেশাজীবি ও ভোক্তারা উপকৃত হচ্ছেন
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা জেলে পাড়ার জেলে অনিল মালো (৬২) জানিয়েছেন, দেশেীয় প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে পড়ে অভয়াশ্রমের বদৌলতে জলাশয়ে আগের চেয়ে বেশি দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে ।
ওই মৎস্যজিবি আরো বলেন, আমাদের অঞ্চলে এ ধরণের প্রকল্প দীর্ঘ বছর কাজ করলে দেশীয় মাছ সংরক্ষিত হবে। পাশাপাশি দেশীয় মাছের প্রাচুর্যতা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আমি আশা করছি।
(টিবি/এএস/ডিসেম্বর ০৬, ২০২৫)
