রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : এপিবিএন পুলিশ পরিচয়ে ঢাকার হযরত শাহাজালাল বিমানবন্দর থেকে ৪০০ ভরি সোনার গহনা ও দুটি মোবাইল  ছিনতাইয়ের অভিযোগে এন্টিটেরিজম ইউনিটের পূর্বাচল শাখার সিপাহী রফিকুল ইসলাম গ্রেপ্তারের পর ছয় সপ্তাহ ধরে কারাগারে রয়েছেন। এ খবর সাতক্ষীরা সদরের নিজ গ্রাম যোগরাজপুরে জানাজানি হওয়ায় যোগরাজপুরের সাবেক প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আবুল কালাম মোস্তফার বাড়িতে গত বছরের মে মাসে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় সকল প্রমান থাকা স্বত্বেও অভিযোগপত্রে রফিকুলের নাম না আসায় তার বিরুদ্ধে সম্পুরক অভিযোগপত্র দাখিলের দাবি তুলেছেন এলাকাবাসী।

রফিকুল ইসলাম (৩৮) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের যোগরাজপুর গ্রামের আমিরুল ইসলামের ছেলে। রফিকুল ইসলাম ঢাকার খিলখেত এলাকার মন্তুল (বেলতলা) এলাকায় বসবাস করেন।

চাঁদপুর জেলার কঁচুয়া উপজেলার বিতারী ইউনয়নের হরিপুর কেরানীপাড়া গ্রামের ও চাকুরি সূত্রে বর্তমানে ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানাধীন মোকলেছ মাদব্বর রোড এর শনির আখড়া এলাকায় বসবাসকারি মুজিবর রহমানের ছেলে জুয়েল হোসেন জানান, তার মামাত ভাই সৌদি আরব প্রবাসী মিজানুর রহমানের আত্মীয় আব্দুল হক ও আয়েশা এবং নূরজাহান ও-শামসুল হক দম্পতি ওমরা হজ্ব শেষে গত ১৫ অক্টোবর রাত ১২টার দিকে ৬০ লাখ টাকা মূল্যের ৪০০ ভরি সোনার গহনাসহ সৌদি এয়ারলাইন্সের বিমানে হযরত শাহাজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।

বিমানবন্দরের ২ নং কনোপী দিয়ে বের হওয়ার পর তাদেরকে অভ্যর্থনা জানান তিনি নিজে (জুয়েল), জানিবুল হাসান ও ইয়াছিন। এর আগে থেকে তার সঙ্গীয় ভাই সোহেল মিঞা বিমানবন্দরের কার পাকিং এর বহুতল ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থান করছিলেন। বেশি রাত হয়ে যাওয়ায় রাত দুটোর দিকে ওই দুই জোড়া দম্পতি তার ও সোহেলের কাছে ৬০ লাখ টাকা মূল্যের ৪০০ ভরি সোনার গহনা তুলে দিলে তা নিয়ে তারা কার পার্কিং এর ২য় তলায় অবস্থান করতে থাকেন। সোহেল মিয়ার তার কাছে থাকা ২০০ ভরি সোনার গহনা নিয়ে ওই ভবনের ফালেকান কাফেতে চলে যান। কার পার্কিং এর দোতলায় বসে থাকাকালিন আসামী রফিকুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা দুইজন বিমানবন্দরের এপিবিএন পুলিশ পরিচয়ে তার কাছে চোরাই সোনা আছে বলে জানান। পুলিশ কিনা সন্দেহ হওয়ায় তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করলে রফিকুল তার বাম হাতে হ্যান্ডকাপ লাগায়। নিয়ে নেয় তার হাতে থাকা ২০ হাজার টাকা মূল্যের অপো-এ৭৭ মোবাইল ও পকেটে থাকা ২০০ ভরি সোনার গহনা। পরবর্তীতে সোহেল মিঞার কাছ থেকে একইভাবে রফিকুলসহ ওই চক্রটি ২০০ ভরি সোনার গহনা ছিনতাই করে।

বিমানবন্দর থানার উপপরিদর্শক মোঃ রায়হান জানান, ৪০০ ভরি সোনার গহনা ও দুটি মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনায় জুয়েল বাদি হয়ে রফিকুলের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা দুইজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা(জিআর-৩০৩/২৫) দায়ের করেন(ধারা-১৭০ ও ৩৯২)। বিমানবন্দরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যাঁচাই করে পূর্বাচলের এন্টি টেরিজম ইউনিট থেকে বিভাগীয় মামলায় বরখাস্ত হওয়া সাতক্ষীরার যোগরাজপুরের রফিকুল ইসলামকে ২২ অক্টোবর রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ১০ দিনের রিমাÐ আবেদন জানানো হয়। সিএমএম আদালতের ১১ নং এর বিচারক তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ২৪ অক্টোবর তাকে থানা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে সে সোনা ছিনতাইয়ের ঘটনা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজী হয়। ২৮ অক্টোবর তাকে আদালতে নিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণের জন্য বিচারকের খাস কামরায় নিয়ে গেলে সে কৌশলে এড়িয়ে যায়। বিচারককে সে বলে যে, তাকে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। পরে তাকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে সে কোরানীগঞ্জ কারাগারে রয়েছে। সিএমএম জজ আদালতে তার জামিন শুনানীর প্রক্রিয়া চলছে। তবে ছিনতাই হওয়া কোন সোনার গহনা বা মোবাইল উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে জানান মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মোঃ রায়হান।

এদিকে সাতক্ষীরার একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গত বছরের মে মাসে সদর উপেেজলার যোগরাজপুরের অবসরপ্রাপ্ত প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আবুল কালাম মোস্তফার বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি (২৭ ভরি সোনার গহনা ও নগদ দুই লাখ টাকা) হয়। এ ঘটনায় ঢাকা এন্টিটেরিজম ইউনিটে কর্মরত পুলিশ সদস্য যোগরাজপুরের রফিকুল ইসলাম ও তার চাচা মনিরুল ইসলামের সম্পৃক্ত থাকার কথা প্রাথমিকভাবে জানা যায়। এ মামলায় গ্রেপ্তারকৃত অন্যতম আসামী কালিগঞ্জের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামের ইয়ার আলীকে জেলখানার মধ্যে বাদি সনাক্ত করার পর আদালতে ১৬৪ ধারার স্বীকারেক্তিমূলক জবানবন্দিতে একজন পুলিশ ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিল ও তার আকার রফিকুলের মত বলে জানান। পরবর্তীতে বিভিন্ন মোবাইল রেকডিং যাঁচাই করে রফিকুলের ডাকাতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা প্রাথমিকভাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান হোসেন ও মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক সোহরাব হোসেন জানতে পারেন। একপর্যায়ে রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বিভাগীয় মামলার পর তাকে বরখাস্ত করা হয়। এরপরও সে এন্টি টেরিজম ইউনিটে বিভিন্ন সময়ে অবস্থান করতো। সেখানে চাকুরিরত না থাকলেও পূর্ব পরিচয় নিয়ে সে বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন এলাকায় নানা অপকর্ম করতো। রফিকুলের সাথে তারই এলাকার অস্ত্র, চাঁদাবাজি ও ছিনতাই মামলার আসামী সাদ্দাম হোসেনের গভীর সখ্যতা রয়েছে। যে কারণে রফিকুলের মদতে ও সাদ্দামের নেতৃত্বে কৃষ্ণনগরের ইয়ার আলী, বাহার আলী, জোহর আলী ও রেজাউলসহ ৮ থেকে ১০ জনের ডাকাত ও ছিনতাইকারি চক্র সাতক্ষীরার যোগরাজপুরের পার্শ্ববর্তী বাইপাস এলাকায় একটি ঘেরে নিয়মিত গোপন বৈঠক করে। এই চক্রটি সম্প্রতি সাতক্ষীরা সদরের ছয়ঘরিয়া জোড়া শিবমন্দিরের পাশে আমিরুল ইসলামের বাড়ি ও নলকুড়া গ্রামের গোলাম রব্বানির বাড়িসহ শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গ্রীল কেটে পরিবারের সদস্যদের মারপিট করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব লুট করেছে বলে অনেকেই মনে করে।

(আরকে/এএস/ডিসেম্বর ০৬, ২০২৫)