রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ৭ ডিসেম্বর,সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা থ্রি নট থ্রি আর এসএলআরের ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে সাতক্ষীরা শহরে প্রবেশ করে।  ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সাতক্ষীরা ইউনিটের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সম শহিদুল ইসলাম জানান, ১৯৭১ সালের ২ মার্চ সাতক্ষীরা শহরে পাকিস্তান বিরোধী মিছিলে রাজাকাররা চাপড়া লজের সামনে গুলি করে হত্যা করে শহীদ আব্দুর রাজ্জাককে। আর এখান থেকে শুরু হয় সাতক্ষীরার দামাল ছেলেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া। ২৯ এপ্রিল সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয় এ সময় পাক সেনাদের ২ শতাধিক সৈন্য নিহত হয়। এরপর থেমে থেমে চলতে থাকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্ত হামলা। এসব যুদ্ধের মধ্যে ভোমরার যুদ্ধ, টাউন শ্রীপুর যুদ্ধ, বৈকারী যুদ্ধ, খানজিয়া যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য।

এ সব যুদ্ধে শহীদ হয় ৩৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বিদ্যুতের আলোয় মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সময়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছিল। তাই ৩০ নভেম্বর টাইম বোমা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত পাওয়ার হাউস উড়িয়ে দেয়। এতে ব্যাপক ভীত সন্ত্রস্ত হয় পাক সেনারা। রাতের আঁধারে বেড়ে যায় গুপ্ত হামলা। পিছু হটতে শুরু করে পাক সেনারা। ৬ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় টিকতে না পেরে বাঁকাল, কদমতলা ও বিনেরপোতা ব্রীজ উড়িয়ে দিয়ে পাক বাহিনী সাতক্ষীরা থেকে পালিয়ে যায়। ৭ ডিসেম্বর জয়ের উন্মাদনায় জ্বলে ওঠে সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা।

মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান জানান, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সাতক্ষীরা ট্রেজারী হতে অস্ত্র লুট আর ন্যাশনাল ব্যাংক হতে অলংকার ও টাকা-পয়সা লুটের মধ্য দিয়ে শুরু মুক্তির সংগ্রাম। ৮ম ও ৯ম সেক্টরের অধীনে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ট্রেনিং শেষে ২৯ এপ্রিল সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয় এ সময় পাক সেনাদের ২ শতাধিক সৈন্য নিহত হয়। ১৭ ঘন্টাব্যাপী এ যুদ্ধে শহীদ হন মাত্র ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা। আহত হন আরো ২ জন মুক্তিযোদ্ধা। এরপর থেমে থেমে চলতে থাকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্ত হামলা। এসব যুদ্ধের মধ্যে ভোমরার যুদ্ধ, টাউন শ্রীপুর যুদ্ধ, বৈকারী যুদ্ধ, খানজিয়া যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। এ সব যুদ্ধে শহীদ হয় সাতক্ষীরার ৩৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

সন্তান ও সম্ভ্রম হারানোর বেদনা ভুলে সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সাথে রাস্তায় নেমে আসে সাতক্ষীরার মুক্তিপাগল আপামর জনতা। একাত্তর ও স্বাধীনতাযুদ্ধকে অপমান করার যেকোন দুরভসন্ধি রুখে দিতে হবে। এছাড়া আগামীতে যারাই ক্ষমতায় আসবেন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে তারা দেশ পরিচালনা করবেন- এ আহবান জানান বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান।

(আরকে/এএস/ডিসেম্বর ০৬, ২০২৫)