শিতাংশু গুহ


১৩ই ডিসেম্বর ২০২৩-র বিজয় দিবসের প্রাক্কালে লিখেছিলাম, ‘বিজিতরা এখন বিজয়ী’। ঢাকায় বাংলা টাইমস ছেপেছিলো, অন্যরা পাগলের প্রলাপ ভেবেছিলো? একজন বলেছিলেন, দাদা, খালি উল্টাপাল্টা লিখে! তাঁকে বলেছিলাম, দেশে সবই যখন উল্টাপাল্টা চলছে, সমকালীন লেখা লিখতে হলে আমাকে তো সেই ধারা বজায় রাখতে হবে, তাইনা?

বলছিলাম, ‘বিজিতরা এখন বিজয়ী’। অর্থাৎ একাত্তরের পরাজিত শক্তি এখন বিজয়ী। তাঁরা শক্তিশালী। বিজয় দিবসের গৌরব অনুজ্জ্বল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ম্লান হয়ে গেছে, পাকিস্তানী চেতনা বা ধর্মীয় চেতনায় দেশ উজ্জীবিত। প্রশ্ন জাগে, স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি কখনো ছিলো? জনগণ কি এটি লালন করেছে? নেতারা কি সেটি ধারণ করেছেন?

পাকিস্তান ভেঙ্গে দু’টি পাকিস্তান হয়েছে। স্বাধীনতার পর কিছুটা সময় গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়ে লাফালাফি ছিলো, এখন সকল চেতনা ধর্মীয় চেতনার মধ্যে ঢুকে গেছে। ইসলামী চেতনার কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরাজয় ঘটেছে। বর্তমান বাংলাদেশ ও পাকিস্তান অভিন্ন ইসলামী চেতনার ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ। সরকার ও জনগণের বৃহদংশ পাকিস্তান প্রেমে মশগুল।

২০২৫-র বিজয় দিবসের তাৎপর্য একটু অন্যরকম। সামনে নির্বাচন। ২০২৪-র নির্বাচন ছিলো আওয়ামী লীগ ভার্সেস নৌকা। ২০২৬-র নির্বাচন হবে জ্বিহাদী ইসলাম ভার্সেস মৌলবাদী ইসলামের মধ্যে। ২০২৪-এ শুনেছিলাম, নেত্রী থাকতে চিন্তা নাই, এখন শুনছি ইউনুস থাকতে ‘নো চিন্তা’। ভোট যদি শেষ পর্যন্ত হয়ও, ফলাফল থাকবে ‘পূর্ব-নির্ধারিত’।

ধর্মীয় চেতনায় বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। দেউলিয়া পাকিস্তান শুধুমাত্র ধর্মীয় কারণে আমাদের আদর্শ হয়ে গেছে? মুক্তিযুদ্ধ এখন ‘ভাই-ভাইয়ে’ ভুল বোঝাবুঝি? ভুললে চলবে কেন যে, বাংলাদেশে একদা ‘নাজাত’ দিবস পালিত হতো, আবারো হবে? সাঁধের পাকিস্তান ভাঙ্গার কারণে হয়তো আগামী দিনে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের বিচার হবে?

বিজয় দিবস এখন শুধুমাত্র একটি ছুটির দিন। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ বা বিজয় দিবসের চেতনা বাস্তবায়ন করার কথা ছিলো, তাঁরা কথা রাখেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অবস্থা এখন বাংলাদেশের হিন্দুদের মত অসহায়, নিরাপত্তাহীন। মৌলবাদী শক্তির যে উত্থান এখন বাংলাদেশে দেখছে, তা ঘটেছে একটানা গত ১৭ বছর। এজন্যে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা দায়ী। সবাইকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।