‘কর বাড়ি’ এখন অতিথি পাখির স্বর্গরাজ্য
একে আজাদ, রাজবাড়ী : শীতের আগমনে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানীবহ ইউনিয়নের শিবরামপুর কর বাড়ির বাগানের উঁচু গাছগুলো এখন যেন অতিথি পাখির নিরাপদ আবাসে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন এসব পাখি দেখতে ভিড় জমাচ্ছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। আর এসব পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইতিমধ্যে বাগানটিকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে বন বিভাগ।
পুকুর পাড়ের শতবর্ষী গাছে বাসা বেঁধেছে হাজার হাজার ধূসর পালকের বড় আকারের শামুকখোল পাখি। তাদের ডানা ঝাপটানি ও কলরবে মুখরিত হয়ে উঠেছে চারপাশের পরিবেশ। গত বছরের মতো এবারও উষ্ণতা ও খাদ্যের খোঁজে এসেছে এসব অতিথি পাখি। প্রায় ৭-৮ মাস আগে কিছু পাখির আগমন হলেও এখন সংখ্যা আরও বেড়েছে। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি বাসায়ই রয়েছে ডিম ও ছানা। দিনের বেলায় এরা আশপাশের বিল, পুকুর ও জলাশয়ে শামুক শিকার করে, আর বিকালে ফিরে আসে বাসায়।
কর বাড়ির কর্তা মুকুল কর বলেন, দুই/তিন বছর ধরে আমাদের বাড়ির বাগানে অতিথি পাখি আসছে। এ বছর কমপক্ষে ২০ হাজার পাখি এসে বসবাস করছে। তার ডিম পাড়ছে, বাচ্চা ফুটাচ্ছে। রাতভর কিচিরমিচির শব্দ আমাদের এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। অনেকেই এসে পাখিগুলো শিকার করতে চায়। আমরা তাদেরকে বাধা দেই। দূর-দূরান্ত থেকে পাখি দেখতে আমাদের বাড়িতে অনেকে ছুটে আসছে। বিষয়টি আমাদের কাছে দারুণ লাগে।
মুকুল করের স্ত্রী বলেন, গত বছরও অনেক পাখি এসেছিলো। তবে এ বছর হাজার হাজার পাখি আসছে। এসব পাখি সকাল হলে বিভিন্ন মাঠে চলে যায় খাবার সংগ্রহ করতে। বিকেল হলে আবার ফিরে আসে। মাঝে একদিন সব পাখি চলে গেছিলো। সেদিন মনটা খুব খারাপ হয়ে গেছিলো। একদিন পরেই আবার আরও অনেক পাখি নিয়ে চলে আসে। গত ৭/৮ মাস ধরে আমাদের বাগানের গাছে এসব পাখি আছে। বাড়ির উপরের গাছেও থাকে। এখন আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন সকাল বিকেল ওদের কিচিরমিচির কানে না আসলে ভালো লাগে না।
অতিথি পাখি দেখতে আসা কয়েকজন বলেন, শীত আসলে আমাদের দেশে অতিথি পাখি আসে এটা শুধু গল্পে শুনতাম। এবার নিজের চোখে দেখতে কর বাড়ি এসেছি। ভালো লাগছে, হাজার হাজার পাখি দেখছি। এক-একটা পাখির ওজন ৫/৬ কেজি হবে। অনেক দুষ্ট লোক এসব পাখি শিকার করার পায়তারা চালায়।
পাখি প্রেমি সাংবাদিক লিটন চক্রবর্তী বলেন, এসব পাখি নিজেদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের সন্ধানে এখানে আসে। তাই তাদের অতিথির মতোই সম্মান জানানো উচিত। কারণ প্রকৃতির ভারসাম্য ও সৌন্দর্য রক্ষায় এই অতিথি পাখিদের ভূমিকা অনন্য।
জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, উন্মুক্ত জলাশয়ের কারণে রাজবাড়ীতে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এসব পাখির অবাধ বিচরণ ও নিরাপত্তার স্বার্থে ইতিমধ্যে ওই বাগানটি "পাখির অভয়ারণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এসব পাখি শিকার করলে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থদণ্ড করা হবে জানিয়ে ওই এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে।
(একে/এসপি/ডিসেম্বর ১১, ২০২৫)
