রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চম্পাফুল বাজারের পাশে কাঁটাতারের বেড়া ও ইটের প্রাচীর দিয়ে সুনীল মণ্ডলের পরিবারকে অবরুদ্ধ করলেন হত্যা, ধর্ষণ ও ঘর পোড়ানো মামলার আসামি সামাদ গাজী ও তার ছেলে আলমগীর কবীর।

অভিযোগ, আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এ জবরদখল প্রক্রিয়া চালালেও নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া আক্তারের নির্দেশ পেয়েও যথাসময়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাননি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুয়েল হোসেন।

চম্পাফুল বাজারের মাধবী রানী মণ্ডল জানান, তার স্বামী সুনীল মণ্ডল গত ১৯ নভেম্বর মারা যান। একই গ্রামের আব্দুস সামাদ গাজী (৬৫) ও তার ছেলে আলমগীর কবীরের (৪৫) সাথে তাদের জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। তিন ভাইপোকে হত্যা মামলার অভিযোগে ভাই গফুর গাজীর দায়েরকৃত দুটি মামলা ও স্থানীয় এক হিন্দু গৃহবধূ ধর্ষণ,ও তাদের বাড়ি জ্বালানো মামলার আসামী আব্দুস সামাদ গাজী। সাঁইহাটি গ্রামের রোমেছা খাতুন ও তার ছেলে আবু সাঈদকে হত্যার পর লাশ গুমের অভিযোগ রয়েছে সামাদ গাজীর বিরুদ্ধে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় সামাদ গাজী ও তার ছেলে আলমগীর কবীরের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।

মাধবী মণ্ডল আরো জানান, সামাদ গাজী ও তার ছেলে আলমগীর কবীরের বিরুদ্ধে ৮৮ দাগে সাড়ে ১৬ শতক জমির উপর স্থাপনা উচ্ছেদ (দেঃ ৪৮৮/২৩), ৮৮ ও ৯১ দাগে তিন বিঘা ৮ শতক জমির উপর নিষেধাজ্ঞা পাওয়া সংক্রান্ত মামলা কালীগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে বিচারাধীন ছিল। গত ৬ অক্টোবর উচ্ছেদের মামলার রায় তাদের বিপক্ষে ও নিষেধাজ্ঞা না দেওয়ায় তার ছেলে শংকর মণ্ডল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে যথাক্রমে দেঃ আপীল (২০১/২৫) ও মিস আপীল (৫৩/২৫) দাখিল করে। আমল গ্রহণ শুনানির জন্য যথাক্রমে আগামি ১০ ফেব্রুয়ারি ও ১২ ফেব্রুয়ারী দিন ধার্য করা হয়েছে। তবে ওই জমি অর্পিত সম্পত্তি ট্রাইব্যুনাল থেকে রায় ও ডিক্রি পাওয়ার পর তার স্বামীর নামে গেজেট হয়। ওই জমি অবমুক্তির জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করলে গত ২৮ অক্টোবর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মঈনুল ইসলাম মঈন বিবাদী পক্ষ সামাদ গাজী ও আলমগীর কবীরের বিরুদ্ধে স্থিতাবস্থা জারির নির্দেশ দেয়। আগামি ২৪ ডিসেম্বর রায় এর জন্য দিন ধার্য আছে। ওই জমি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে সামাদ গাজী ও তার ছেলে আলমগীর কবীর জবরদখল করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে।

এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সামাদ গাজী তাদের (মাধবী) জমিতে একটি টিনের ঘর বানিয়ে তাতে চারটি সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে কাঁটা তারের বেড়া ও ইট দিয়ে প্রাচীর নির্মান করে তাদের বাড়ির প্রবেশ পথ,টিউবওয়েল, তুলসী মন্দিরসহ সকল পথ বন্ধ করে দেয়। তিনি সকাল ১১ টার দিকে বিষয়টি নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া আক্তারকে জানালে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ জুয়েল হোসেনকে নির্দেশ দেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আদেশ পেয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলিশ পাঠাচ্ছেন বলে তাকে বাড়ি যাওয়ার কথা বলেন।৷ সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে না আসলে তিনি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আবারো অবহিত করেন। বর্তমানে তারা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। রাতের আঁধারে তাদের ঘরবাড়ি ভাংচুর করে বিরান ভূমিতে পরিনত করার হুমকি দিয়েছে সামাদ গাজী।

এ ব্যাপারে আলমগীর কবীর সাংবাদিকদের বলেন,সুনীল মণ্ডলের পরিবারকে আপোষের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তারা না মানায় বৃহস্পতিবার প্রাচীর ও কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে জমি ঘিরে নিয়েছেন। এতে তাদের যাতায়াতের পথ বন্ধ হলে কিছু করার নেই।

কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ জুয়েল হোসেন বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে জানান, জমি নিয়ে মামলা আছে। দুপুর দুটোর দিকে এক এসআইকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি না গেলে আবারো কাউকে পাঠানো হবে।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া আক্তার বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর আদালতের আদেশ, আপিল মামলার কাগজপত্র যাঁচাই করে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গতঃ গত ১৮ আগষ্ট সকাল ৬টা থেকে ২৭ আগষ্ট বিকেল পর্যন্ত সামাদ গাজী ও তার ছেলে আলমগীরের নেতৃত্বে ৪০/৫০ জন ভাড়াটিয়া সশস্ত্র সন্ত্রাসী তাদের দখলীয় ও পৈতৃক জমি জবরদখলের উদ্দেশ্যে জমিতে তাদের (মাধবী) লাগানো নরিকেল, তাল, সুপারী, বেল, আম ও কলাগাছসহ কমপক্ষে ১০ প্রজাতির শতাধিক গাছ কেটে, ফল ও সবজি মিলিয়ে তিন লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করা হয়। বাড়ির জিনিসপত্র লুটপাট করে। তুলসী বেদী ভাঙচুর করে। জমির চারিদিক, বাড়ির উঠানসহ বিভিন্ন স্থানে বাঁশের বেড়া দিয়ে জমি জবরদখলের জন্য তাদেরকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। শত শত নারী ও পুরুষ ঘটনা দেখলেও প্রভাবশালী ও হিংস্র সামাদ গাজীর ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি।

গত ২ সেপ্টেম্বর আনুমানিক দিবাগত রাত দেড়টা থেকে দুটোর মধ্যে অর্থাৎ ৩ সেপ্টেম্বর তাকে (মাধবী) ও তার পরিবারের সদস্যরা ঘুমিয়ে থাকাকালিন বসতবাড়ি সংলগ্ন কাঠঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। তার আশঙ্কা পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে উচ্ছেদের মামলার রায় ঘোষণার আগেই সামাদ গাজী ও আলমগীর কবীরসহ তাদের ভাড়াটিয়া লোকজন রাতের আঁধারে তার কাঠঘরে আগুন লাগিয়ে পরবর্তীতে বসতঘরে শুয়ে থাকা তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের পুড়িয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল। এ ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর থানায় মামলা করেন। মামলায় সামাদ গাজী ও আলমগীর কবীরসহ অজ্ঞাতনামা ৫০ জনকে আসামি শ্রেণীভুক্ত করা হয়।

(আরকে/এসপি/ডিসেম্বর ১১, ২০২৫)