ওয়াজেদুর রহমান কনক, নীলফামারী : ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নীলফামারী হানাদার মুক্ত দিবস এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এই দিনটি শুধু একটি জেলার শত্রুমুক্ত হওয়ার স্মৃতি নয়, বরং বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা, ত্যাগ ও অদম্য সাহসের এক উজ্জ্বল প্রতীক।

দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর নীলফামারীর মাটিতে যেদিন হানাদার বাহিনীর পতন ঘটে, সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী প্রতিরোধ ও জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন মিলিয়ে স্বাধীনতার বিজয় আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়। নীলফামারী হানাদার মুক্ত দিবস সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে স্মরণ করিয়ে দেয়, যখন ভীত-সন্ত্রস্ত একটি জনপদ বিজয়ের আনন্দে জেগে উঠেছিল এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড্ডীন হয়েছিল শোষণ ও দখলদারত্বের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রত্যয়ের ঘোষণা হিসেবে।

নীলফামারীতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে হানাদার মুক্ত দিবস উদযাপিত হয়েছে।

আজ শনিবার সকালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ের সামনে জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচির সূচনা হয়। পরে সেখান থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মিলনায়তনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।

জেলা ও সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সামসুল হক জবার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল এবং সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেনসহ অন্যান্যরা।

কর্মসূচিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, তাঁদের পরিবারবর্গ এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর নীলফামারী সদর উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়। সেদিন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে রাতে দখলদার বাহিনী জেলা শহর ত্যাগ করে সৈয়দপুর সেনানিবাসে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পরদিন ভোরে চৌরঙ্গী মোড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন মুক্তিযোদ্ধারা। সেই মুহূর্তে বিজয়ের আনন্দে মুক্তিকামী মানুষ রাস্তায় নেমে আসে এবং পুরো শহর মুখরিত হয়ে ওঠে উল্লাসধ্বনিতে।

(ওআরকে/এএস/ডিসেম্বর ১৩, ২০২৫)