হাবিবুর রহমান রুবেল, ঝিনাইদহ : ২৫ শয্যা বিশিষ্ট ঝিনাইদহ সরকারি শিশু হাসপাতালের চারটি ফটোথেরাপি মেশিনের মধ্যে তিনটিই নষ্ট হয়ে গেছে। গত এক বছর ধরে এসব নষ্ট মেশিন স্টোর রুমে ফেলে রেখেছে কতৃপক্ষ। এতে বিনামূল্যের চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাজারো হতদরিদ্র পরিবার।  নবজাতকের জন্ডিস রোগের চিকিৎসায় জরুরি প্রয়োজন হয় ফটোথেরাপি মেশিনোর।

চিকিৎসকরা জানান, বর্তমান সময়ে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ নবজাতকের জন্ডিস রোগ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। নবজাতকরা সঠিক চিকিৎসা না পেলে মস্তিষ্কে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদের প্রতিবন্ধী হওয়ার শঙ্কা থাকে।

জানা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের বাস টার্মিনাল এলাকায় ২০০৫ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের এক বছর পর নির্মাণকাজ শেষ হয় দেশের একমাত্র শিশু হাসপাতালটির। দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পর ২০২০ সালে চালু করা হয় হাসপাতালটি। পরে সরকারি বরাদ্দের দুটি ও অনুদানের দুটিসহ চারটি ফটোথেরাপি মেশিন দিয়ে চলছিল নবজাতকদের জন্ডিস চিকিৎসা। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে গত বছর তিনটি মেশিন নষ্ট হয়ে যায়। এতে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হলেও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এখন পর্যন্ত মেশিনগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রাইভেট হাসপাতালে শিশুদের ফটোথেরাপি মেশিনে রাখতে প্রতিঘন্টা ১০০ টাকা করে খরচ করতে হয় অভিভাবকদের। ফলে সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দরিদ্র পরিবারের শিশুরা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নষ্ট মেশিনগুলো হাসপাতালের দুটি স্টোর রুমে ফেলে রাখা হয়েছে। তবে এগুলো এখন সংস্কারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ।

জানা যায়, সাধারণত নবজাতকের রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা ১৫ শতাংশের বেশি হলে জন্ডিস রোগ অতিমাত্রায় চলে যায়। এজন্য ফটোথেরাপি মেশিনে রাখতে হয় নবজাতকদের। এই মেশিন আলোর বিশেষ রশ্মির মাধ্যমে ত্বকের নিচের অদ্রবণীয় বিলিরুবিনকে দ্রবণীয়তে রূপান্তর করে, যা মলমূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়। ফলে সর্বোচ্চ ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই নবজাতকরা সুস্থ হয়ে ওঠে।

সম্প্রতি শিশু হাসপাতালটি একটি ফটোথেরাপি মেশিনে রেখে দুই থেকে তিনজন নবজাতককে সেবা দিতে বাধ্য হচ্ছেন তাদের অভিভাবকরা।

শৈলকুপার মীনগ্রামের গৃহবধূ বিলকিস আক্তার বলেন, আমার বাচ্চার বয়স মাত্র আট দিন। চার দিন হাসপাতালে ভর্তি রাখার পর চিকিৎসক আমার বাচ্চাকে ফটোথেরাপি মেশিনের মধ্যে একদিন রেখে দেন।

সদর উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের আলেয়া খাতুন বলেন, আমার নাতিকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে দুদিন চিকিৎসা করার পর ডাক্তার জানান তার জন্ডিস হয়েছে। আর তখনই নাতিকে ফটোথেরাপি মেশিনে রেখে দেন। এখানে শিশুকে চিকিৎসা দিতে কোনো খরচ লাগেনি। বাচ্চাও এখন সুস্থ।

ঝিনাইদহ শিশু হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. আলী হাসান ফরিদ জামিল বলেন, আমাদের হাসপাতালে তিনটি ফটোথেরাপি মেশিন নষ্ট থাকায় বর্তমানে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিন অন্তত ৫ থেকে ৬ জন নবজাতককে ফেরত পাঠাতে হচ্ছে। ফলে বিনামূল্যের পরিবর্তে অনেক টাকা খরচ করে প্রাইভেট হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসা দিতে বাধ্য হচ্ছেন তাদের অভিভাবকরা। বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার স্বাস্থ্য বিভাগকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি তারা।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. মো. কামরুজ্জামান বলেন, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারে আগুনের কারণে মেশিনগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। শিশুদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে নতুন মেশিনের ব্যবস্থা করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আশা করছি শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে।

(এইচআর/এএস/ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫)