হাবিবুর রহমান, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোটি টাকার চিকিৎসা যন্ত্রপাতি অচল হয়ে পড়ে থাকায় এবং চরম অব্যবস্থাপনায় সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কার্যত ভেঙে পড়ছে।

হাসপাতাল সূত্র ও স্থানীয়দের অভিযোগ অনুযায়ী, আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন, এক্স-রে মেশিন, জেনারেটরসহ অপারেশন থিয়েটারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ধরে বিকল অবস্থায় রয়েছে। ফলে জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা।চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের একটি বড় অংশকে বাধ্য হয়ে উপজেলা সদরের বেসরকারি ক্লিনিক কিংবা জেলা শহরে যেতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন বাড়ছে অতিরিক্ত খরচ, অন্যদিকে ভোগান্তি ও সময় নষ্টের কারণে অনেক দরিদ্র রোগী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকেও পিছিয়ে পড়ছেন। রোগীদের অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালে যেসব আধুনিক যন্ত্র থাকার কথা, সেগুলো কেবল কাগজে-কলমেই আছে, বাস্তবে কোনো কাজে আসছে না।

অভিযোগ উঠেছে, এমএসআর (Medical Store Requisition) এর মাধ্যমে ক্রয়কৃত রোগী বহনকারী ট্রলি, বেড, ট্রেসারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিম্নমানের হওয়ায় অল্পদিনের ব্যবহারের মধ্যেই ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে। এসব সামগ্রী বর্তমানে হাসপাতালের এক পাশে অযত্নে পড়ে রয়েছে, যা সরকারি অর্থের অপচয়েরই প্রমাণ বলে মনে করছেন সচেতন মহল। নিয়মিত তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দামী যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামগুলো কার্যত পরিত্যক্ত হয়ে যাচ্ছে।

আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে হাসপাতালের জন্য নির্মিত ট্রিটমেন্ট প্ল্যান অযত্ন ও অবহেলায় নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এর ফলে হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা বিশুদ্ধ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। রোগী ও স্বজনদের ভাষ্য, অসুস্থ অবস্থায় থেকেও তাদের নিরাপদ পানির জন্য বাইরে থেকে পানি কিনে আনতে হচ্ছে, যা একটি সরকারি হাসপাতালের জন্য চরম লজ্জাজনক।

হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের খাবার ব্যবস্থাপনাও প্রশ্নবিদ্ধ। অভিযোগ রয়েছে, রোগীদের জন্য নির্ধারিত কোনো খাবার মেনু টানানো নেই এবং খাবার নিয়ে অভিযোগ জানানোর জন্য কোনো নির্দিষ্ট ব্যবস্থা বা অভিযোগ বাক্সও নেই। রোগীদের দাবি, ইউএইচএন্ডএফপিও নিজেই কুকমশালচীর মাধ্যমে বাজার করিয়ে খাবার সরবরাহ করছেন, যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির বড় অভাবের ইঙ্গিত দেয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউএইচএন্ডএফপিও ডা. মোছাম্মদ হেলেনা আক্তারের তদারকির ঘাটতির কারণেই হাসপাতালের সার্বিক ব্যবস্থাপনা এমন বেহাল অবস্থায় পৌঁছেছে। দীর্ঘদিন ধরেই নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে তারা জানান।

এদিকে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। তারা বলছেন, সরকারি অর্থে কেনা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার না হওয়া এবং মৌলিক সুবিধা না পাওয়া সাধারণ মানুষের প্রতি চরম অবহেলার শামিল। দ্রুত অচল যন্ত্রপাতি মেরামত, মানসম্মত সরঞ্জাম সরবরাহ, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং দায়িত্বশীলদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।

সচেতন মহলের আশঙ্কা, সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত হস্তক্ষেপ না করলে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবার এই নাজুক অবস্থা আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে, যার চরম মূল্য দিতে হবে সাধারণ রোগীদের।

(এইচআর/এএস/ডিসেম্বর ১৫, ২০২৫)