স্টাফ রিপোর্টার : মেলান্দহে ভূয়া সার্টিফিকেট দিয়ে হাইস্কুলের অফিস সহকারী পদ থেকে ঝাউগড়া সরকারি কলেজের (পূর্ব নাম বঙ্গবন্ধু কলেজ) প্রভাষক পদে চাকুরি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঝাউগড়া সরকারি কলেজ এর নাম ছিল ঝাউগড়া বঙ্গবন্ধু  কলেজ। শেখ হাসিনা সরকারের সময় শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে সারা দেশেই অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়। হাসিনা সরকারের সময় প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্ভুত অজপাড়াগাঁয়ে তার পরিবারের সদস্যদের নামে যে সকল কলেজ প্রতিষ্ঠা হয় তার মধ্যে মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়া বঙ্গবন্ধু কলেজ ছিল অন্যতম। সরকারি নিয়মনীতি অনুসরণ না করে শুধুমাত্র শেখ হাসিনা পরিবারের উছিলায় প্রতিষ্ঠিত হয় এই কলেজ।

জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক চৌধুরীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটিতে নিয়োগ বাণিজ্য করে এমপিও নীতিমালা লংঘন করে অনেক অযোগ্য ভুয়া সনদ ও সরকারি অনুমতি প্রাপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাল সনদ সংগ্রহ করে অনেকেই ঝাউগড়া বঙ্গবন্ধু কলেজে অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত হন।

এমপিও নীতিমালা লংঘন নির্ধারিত জনবল কাঠামোর বাইরে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে ।কলেজের নাম বঙ্গবন্ধু হবার কারণে দুর্নীতি অনিয়ম ছিলো ধরাছোঁয়ার বাইরে। বঙ্গবন্ধু নাম থাকলেও সব অনিয়ম দুর্নীতি লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায়। কলেজ গভর্ণিং বডির সভাপতি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক চৌধুরী। যার জন্য কলেজের দুর্নীতি অনিয়ম ছিলো ধরাছোঁয়ার বাইরে। যার উপর আছে শেখ হাসিনা পিতার নামে কলেজ। যার জন্য রাতারাতি কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়। ইউনুস সরকার ক্ষমতা আসার পরে শেখ পরিবারের নামে সকল প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে সংশ্লিষ্ট এলাকার নামে করা হয়। ফারুক চৌধুরী জামালপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় কোটি টাকা ব্যয় করা হয় জেলা পরিষদের তহবিল থেকে। যার কোন হিসাব নিকাশ নাই। শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়। সনদ জালিয়াতির ঘটনাটি ঘটেছে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়া (বঙ্গবন্ধু) সরকারি কলেজে।
অভিযুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে একজনের নাম মো: জাহাঙ্গীর আলম। তিনি আইসিটির প্রভাষক।

জাহাঙ্গীর আলম ১৯৯৩ সালে ফুলকোচা উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাস ও ১৯৯৫ সালে আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করে ফুলকোচা উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকুরী নিয়ে এমপিও ভুক্ত হন।তিনি ফুলকোচা উচ্চ বিদ্যালয়ে এক যুগেরও বেশি সময় চাকুরি করেন। আওয়ামী সরকারের সময় হ ঝাউগড়া কলেজে সীমাহীন দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহারকারী বর্তমানে অবসরে আছেন অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান লেবু চৌধুরীর সাথে আলাপচারিতায় ও তার আশ্বাসে কলেজের প্রভাষক হওয়া স্বপ্ন জাগে জাহাঙ্গীরের ।সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে অধ্যক্ষের সহযোগিতায় অফিস সহকারীর চাকুরীরত অবস্থায় অবৈধ ভূয়া দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি নামে ক্যাম্পাসের ঠিকানা বিহীন একটি জায়গা হতে টাকার বিনিময়ে সনদ সংগ্রহ করে এই ঝাউগড়া কলেজ কর্তৃপক্ষের অনৈক সহযোগিতায় দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি হতে ২০০৯ সাল সিজিপিএ ৩.৫০ পয়েন্ট পেয়ে অনার্স পাস সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন। এই জাল সনদ সংগ্রহ করে কলেজের অধ্যক্ষকে ম্যানেজ করে দুর্তীতির আশ্রয় নিয়ে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম ৮ নং ফুলকোচা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতা হওয়ার সুবাদে মির্জা আজমের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধ সনদধারী জাহাঙ্গীর কে ঝাউগড়া কলেজে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ইনডেক্স -২০১৫১২০১৭৫১৭/২০১৫(তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) । তার কিছু দিন পরেই কলেজ টি বঙ্গবন্ধুর নামে হওয়ার কারণে সরকারি করণ করা হয়। এর পরে থেকেই জাহাঙ্গীর আলম আলাদিনের চেরাগ পেয়ে অফিস সহকারী পদ থেকে হয়ে গেলেন ফাস্ট ক্লাস শিক্ষা নন ক্যাডার প্রভাষক ।

কলেজের বর্তমানে স্থায়ীকরণের কাজ চললেই সকল শিক্ষকদের পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রতিবেদন ভালো আসলেও ৩য় শ্রেণির অফিস সহকারী থেকে ভূয়া সার্টিফিকেটে ১ম শ্রেণির শিক্ষক হওয়া জাহাঙ্গীর আলমের পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রতিবেদন ( রিপোর্ট) অন্যান্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম তথা উল্টো। জাহাঙ্গীর আলমের পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনে লেখা দারুণ ইহসান ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস না পাওয়া যাওয়ায় তার রিপোর্ট প্রদান করা সম্ভব হলো না। চাকুরী গ্রহণের সময় দেয়া অনার্স পাস সার্টিফিকেট টির কোন সঠিক তথ্য মিলে নি।এটা ভূয়া সার্টিফিকেট।

এই সার্টিফিকেট দিয়ে চাকুরী গ্রহণ করে টাকার মাধ্যমে এমপিও ভুক্ত হয়ে অদ্যবধি যে অর্থ নিয়েছে এবং সরকারি অর্থ তছরুপ করেছে সেগুলো আইনের আওতায় এনে প্রতারক প্রভাষক জাহাঙ্গীর আলমের শাস্তি দাবি করেছেন এলাকার অভিভাবক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ

এ বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো: তোফাজ্জল হোসেন বলেন- জাহাঙ্গীর আলমের সার্টিফিকেট দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির এটা ঠিক।তবে এটা জাল কি না আমি বলতে পারিনা। তার নিয়োগের সময় কলেজের অধ্যক্ষ পদে ছিলাম না।আমি কয়েকদিন আগে দায়িত্ব নিয়েছি। সে যদি সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরি নিয়ে থাকে তার খেসারত সেই দিবে।

এর আগে আরও দুইজনের সনদ জাল হওয়া এই কলেজ থেকে চলে যেতে হয়েছে।
অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে কোন বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেন।

বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্তে বঙ্গবন্ধুর নাম পরিবর্তন করে কলেজটিকে ঝাউগড়া কলেজ করা হলেও সরকারি করণের পূর্বের নানা ধরনের অনিয়ম দুর্নীতি বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক।

(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ১৫, ২০২৫)