রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক দুই নেতাকে গণপিটুনির মতো মারধর করা হয়েছে। পরে তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গত রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ফরিদপুর শহরের চরকমলাপুর জোড়া ব্রিজ এলাকায় এমন ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত দু'জন হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফরিদপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা ও যুগ্ম সদস্যসচিব আরিয়ান ইসলাম কাইয়ুম।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শহরের চর কমলাপুর এলাকায় হেযবুত তাওহীদ ফরিদপুর জেলা শাখার আয়োজনে সংগঠনের ইমাম মোহাম্মদ হোসাইন সেলিমের বক্তব্য মাইকে প্রচার করছিলেন ওই সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত কিছু ব্যক্তি তাতে বাধা দিলে কথা তাদের সাথে বাকবিতন্ডা হয়। দু'পক্ষের কথাকাটির একপর্যায়ে বাধাদানকারীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক ওই দুইনেতা সোহেল ও আরিয়ানকে তাদের পক্ষে ঘটনাস্থলে ডেকে নিয়ে আসেন। এরপর বাধাদানকারী ব্যক্তিবর্গের সাথে মিলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক ওই দুইনেতাও হেযবুত তাওহীদের সদস্যদের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে লিপ্ত হন। এর কিছুক্ষণ মধ্যে এক পর্যায়ে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় মারধরের শিকার হয়ে আহত হন সোহেল ও আরিয়ান।

এ ঘটনার পর সংঘর্ষের বিষয়ে হেযবুত তাওহীদের ফরিদপুর জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম গণমাধ্যমকে জানান, ‘পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আমাদের ইমামের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছিলাম। এসময় আমাদের ওপর হামলা হলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।’

ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপত্র কাজী জেবা তাহসিন বলেন, ‘দুই ছাত্রনেতার ওপর হামলা করেছে হেযবুত তাওহীদ। এটি একটি নিষিদ্ধ সংগঠন।’

মারধরে দু'জন আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম।

আজ সোমবার সকালে, এ বিষয়ে ওসি শহিদুল জানান, 'দু'পক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিরন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে একটি মামলা হয়েছে। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল (রবিবার) দু'জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া, এ ঘটনার তদন্ত সহ পরবর্তী আইনী প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

উল্লেখ করা যেতে পারে, চলতি বছরের গত ৫-৬ ফেব্রুয়ারি (২০২৫) তারিখে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর পুড়ানো বাড়িটি ভাঙচুরের সময় ব্যাপক আলোচনার আসেন ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা ও যুগ্ম সদস্যসচিব আরিয়ান ইসলাম কাইয়ুম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সেই ঐতিহাসিক বাসভবনটি ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞে এই দুই নেতা সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই সময় ওই বাড়ী ভাঙার সময় তাদের অংশগ্রহণের বেশকিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ফরিদপুর সহ সারা দেশে তাদের নিয়ে আলোচনার-সমালোচনার হয়। ওই সময়ে ফরিদপুরের স্থানীয় অনেককেই ওমন একটি ঐতিহাসিক বাড়ী ভাঙচুরের তাদের সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়ে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। তবে ওই ক্ষোভের কারণে এ দুই নেতাকে ওমন গণপিটুনির মতো করে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে কিনা, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

(আরআর/এএস/ডিসেম্বর ২৯, ২০২৫)