নাটোর প্রতিনিধি : সোমবার নাটোরে প্রাইমারী শিক্ষক প্রশিক্ষন কেন্দ্রের (পিটিআই) অনয়িম দুর্নীতির খবর সংগ্রহ করতে গেলে স্থানীয় এক সাংবাদিকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণসহ হুমকি দেওয়া হয়। ওই প্রতিষ্ঠানের শরীরচর্চা শিক্ষক আহমেদ জাকি রায়হান প্রতিষ্ঠানের সুপারের উপস্থিতিতে এটিএন বাংলা ও দৈনিক করতোয়ার স্থানীয় প্রতিনিধি জুলফিকার হায়দার জোসেফের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। একপর্যায়ে তিনি সাংবাদিকের দিকে তেড়ে গিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এদিকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিককে হুমকি দেওয়ায় স্থানীয় সাংবাদিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

পিটিআই প্রশিক্ষনার্থীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহসহ প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও ডিপিএড প্রশিক্ষনার্থীরা সম্প্রতি প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করে। এ বিষয়ে জানতে সাংবাদিক জুলফিকার হায়দার জোসেফ সোমবার প্রতিষ্ঠানের সুপার আহমাদ সাবিহা আখতারের কাছে যান। সুপারের কক্ষে বসে সাংবাদিক কথা বলার সময় প্রতিষ্ঠানের শরীরচর্চা শিক্ষক আহমেদ জাকি রায়হান সেখানে গিয়ে উপস্থিত হন। অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে সুপারের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে শিক্ষক আহমেদ জাকি রায়হান উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং সাংবাদিক জুলফিকার হায়দার জোসেফের দিকে তেড়ে যান। এসময় তিনি সাংবাদিকের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন এবং সাংবাদিকগিরি শিখিয়ে দিব বলে হুমকি দেন। স্থানীয় একটি সুত্র জানায়, শিক্ষক আহমেদ জাকি রায়হান দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর ধরে নাটোর পিটিআই কেন্দ্রে কর্মরত আছেন। তিনি বর্তমান সুপার আহমাদ সাবিহা আখতারের সহায়তায় সিন্ডিকেট করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছেনা। তবে আহমেদ জাকি রায়হান অভিযোগ অস্বীকার করলেও উভয়ের মধ্যে কথাকাটাকাটির ঘটনা ঘটে বলে জানান।
লিখিত ওই অভিযোগ পত্র সুত্রে জানা যায়, গত ১৬ জানুয়ারি কর্মরত সুপার রাশিদা খাতুনের মৃত্যুর পর সহকারী সুপার আহমাদ সাবিহা আখতারকে সুপারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সুপারের দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি স্বেচ্চাচালি আচরণ শুরু করেন। পিটিআইতে আইসিটি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের জন্য ৫০০ টাকা দামের ব্যাগ বরাদ্দ থাকলেও মাত্র ২০০ টাকা দামের ব্যাগ প্রদান করেন। তিনি নিজে রাজশাহী থেকে এসব ব্যাগ কিনে আনেন। যা আগে স্থানীয় বাজার থেকে কেনা হয়েছে। এমনকি খাবারের জন্য মাথাপিছু ৩৩০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও তিনি ১২০ টাকায় নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করেন। এ নিয়ে প্রশিক্ষনার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং খাবারের জন্য বরাদ্দ টাকা প্রদানের দাবি করে। কিন্তু সুপার তাদের কোন দাবিই কর্ণপাত করেননি। উপরুন্তু প্রতিবাদকারী প্রশিক্ষনার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়। অভিযোগ পত্রে বলা হয়, সুপার তার অনিয়ম ও দুর্নীতির সহায়তায় অদক্ষ শিক্ষকদের পদোন্নতি দিয়ে পিটিআই প্রশিক্ষক বানিয়েছেন। এসব প্রশিক্ষকদের সকলেই এই প্রতিষ্ঠানে ৫ থেকে ৭ বছর ধরে কর্মরত রয়েছেন। সুপার তাদের মাধ্যমেই প্রশিক্ষনের খাবারের টাকা ও উপকরণ ক্রয়ের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি সহায়ক কর্মচারির টাকাও ঠিকমত দেননি। এসব খাতের বরাদ্দকৃত সকল টাকা উত্তোলন করে বাসায় নিয়ে যান। সুপার তার নামে বরাদ্দকৃত বাসা ভাড়া দিয়ে নিজে রাজশাহী থেকে অফিস করেন।
সম্প্রতি ডিপিএড ভুক্ত ১৪ টি বিদ্যালয় ও পিটিআইয়ের উপকরণ ক্রয়ের জন্য জন্য ২লাখ ৪০হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। সুপার আহমাদ সাবিহা আখতার বিদ্যালয় প্রতি ৮০০ টাকা প্রদান করে অবশিষ্ট টাকা আত্মাসাত করেন। এছাড়া লেপ তোশকের জন্য বরাদ্দ পাওয়া যায় ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু লেপ তোশক না কিনে তিনি সমুয় টাকা আত্মসাত করেছেন। প্রশিক্ষনার্থীদের হোস্টেল বাবদ ৫০ টাকা নিয়ে আত্মসাত করেন। দেড়শ ডিপিএড প্রশিক্ষনার্থীর জন্য বরাদ্দ ৩০ হাজার টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়া হয়।
পিটিআই সুপার আহমাদ সাবিহা আখতার এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলে দাবি করেন। তবে তার উপস্থিতিতে সাংবাদিককের সঙ্গে শিক্ষক আহমেদ জাকি রায়হানের কথাকাটাকাটি হয় বলে স্বীকার করলেও হুমকি দেওয়া সঠিক নয় বলে জানান।

(এমআর/এএস/মে ০৫, ২০১৪)