বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পানির ট্যাংকি পরিষ্কার করলে  বেশি বিস্কুট দেয়া হবে এই লোভে স্কুলের  ছাদে উঠে পড়ে মৃত্যুর মুখোমুখি পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র রাসেল।

ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার দুপুরে টিফিনের সময় শরনখোলা উপজেলার দক্ষিণ খোন্তাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এদিন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সরকারের দেয়া বিস্কুট বেশি দেয়া হবে এমন লোভ দেখিয়ে স্কুলের পানির ট্যাংক পরিষ্কার করার জন্য পঞ্চম শ্রেণীর ৫ ছাত্রকে চারতলার ছাদে পাঠায়। ছাদের ট্যাংকি পরিষ্কার করার এক পর্যায়ে শিশু রাসেল (১২) প্রায় ৫০ ফুট উচু ওই ছাদ থেকে নিচে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয় । তার বাম পায়ের উরু, হাঁটুর নিচ ও মাথা ফেটে যায়। থেঁতলে যায় শরীরের বিভিন্ন অংশ। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন মৃত্যুর সাথে লড়ছে রাসেল।
সোমবার দুপুরে সরেজমিন ওই স্কুলে গিয়ে জানা যায়, সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র রাসেলসহ রিয়াজ, স্বাধীন, রনি ও লাল চাঁনকে নিয়ে পানির ট্যাংক পরিস্কার করাতে উঠিয়ে দেন বিদ্যালয়ের চার তলার ছাদে। দুই-তিন জন ট্যাংকের ভেতরে নেমে পরিষ্কার করছিল। রাসেলসহ বাকিরা থাকে বাইরে। এদের মধ্য থেকে একসময় রাসেল ছাদ থেকে পা ফসকে প্রথমে দ্বিতীয় তলার সিঁড়ির রেলিংয়ের ওপর, সেখান থেকে পড়ে যায় নিচে। সহপাঠীরা এ দৃশ্য দেখে চিৎকার শুরু করে। পরে শিক্ষক ও এলাকাবাসী রাসেলকে উদ্ধার করে প্রথমে শরণখোলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। শিশুটির অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় পরে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । শিশুটি এখন সেখানে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে ।
পানির ট্যাংক পরিষ্কার করতে ওঠা স্কুল ছাত্র রিয়াজ ও স্বাধীন বলেন, ‘আমাগো বেশি বিস্কুট দেওয়ার কথা বইল্যা জাহাঙ্গীর স্যার পাঁচ জনরে ছাদে উঠায়। আমরা দুই জন ট্যংকির মইধ্যে নাইম্যা পরিষ্কার করতে ছিলাম। রাসেল, রনি, লাল চাঁন বাইরে ছিল। কিছু সময় পর চিৎকার শুইন্যা আমরা ট্যাংকির মধ্যে হইতে বাইরে আসি। দেহি রাসেল নিচে পইড়া রইছে।’
বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা কলেজ ছাত্র আরিফ ও স্কুল ছাত্র রাজিব জানায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বাবুল কয়েক দিন আগে একইভাবে ছাত্রদের দিয়ে ওই ট্যাংকি পরিষ্কার করিয়েছেন। বেশি বিস্কুট দেওয়ার লোভ দিয়ে ছোট ছোট ছাত্রদের ছাদে উঠায় শিক্ষকরা। একই এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার মাতুব্ব (৪৫), ফজিলা খাতুন (৫৫) জানান, শিক্ষকদের শিশুদের দিয়ে এই কাজ করানো ঠিক হয়নি। শিশুটি এখন মরার পথে।তারা সবাই এঘটনায় জড়িত স্কুল শিক্ষকের বিচার দাবি করেন ।
শরণখোলার খোন্তাকাটা এলাকার বাসিন্দা ও আহত ছাত্র রাসেলের পিতা পান্না মীর মুঠোফোনে বলেন, আমি এখন রাসেলের কাছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছি । ওর অবস্থা গুরুতর। বেশি সমস্যা মাথায় ও বুকে। বাম পা’টা দুই জায়গায় ভেঙেছে।
স্কুরের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বাবুল জানান, ঘটনার দিন আমি বিদ্যালয়ে ছিলাম না। মামলার হাজিরা দিতে বাগেরহাট গিয়েছিলাম। তবে এঘটনার জন্য আমি দুঃখিত। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান মিলন জানান, ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে বিদ্যালয়ের কোনো কাজ করানো যাবেনা। কোনো শিক্ষক যদি এই কাজ করিয়ে থাকে তবে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এ অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন , ছাত্ররা নিজেরা টিফিন টাইমে ছাদে ওঠে ও রাসেল পা ফসকে পড়ে যায় ।
(একে/এএস/মে ০৫, ২০১৪)