এস.কে.এ.সাকুর উল্লাস : গত ৫ জানুয়ারি ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দোহারে মধ্যযোগীয় কায়দায় ঘটে যাওয়া ট্রিপল মার্ডারের মামলার এখনও কোন কিনারা খুঁজে পায়নি নিহতের পরিবার গুলো। মরার ওপর খাড়ার ঘায়ের মত নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে নিহতের পরিবারের সদস্যরা ।

নিহত মুছা খন্দকারের ছেলে ও মামলার বাদী মোতালেব খন্দকার মামলার এজহারভুক্ত আসামীদের নামে অভিযোগ করে বলেন, আসামীরা জামিনে মুক্তি পেয়ে মুঠোফোনে প্রতিনিয়তই নানা হুমকি দিয়ে আসছে। এমনকি অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে মামলা উঠিয়ে নেয়ার জন্য নানা রকম চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে আমাকেসহ আমার পরিবারের সকল সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছে।

অভিযোগ করে বাদী আরো বলেন, আসামী পক্ষের আচরণে মনে হয় খুনটা আমরা করেছি তাই আমাদেরই বাড়ি ছাড়া হওয়া উচিত। তাদের ভয়ে আমরা ইতোমধ্যে আতঙ্কে বসবাস করছি। কিছুদিন আগেই আমাদের ৩টি হাঁস বিষ দিয়ে মেরে ফেলেছে আসামী পক্ষ। তাদের ভয়ে আমরা আমাদের সব কবুতর বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।

তারা হুমকি বা মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে এই মামলা কিছুতেই থামাতে পারবেনা এটা আমার আত্মবিশ্বাস। আমরা আমাদের বাবা ও ভাই হত্যার এবং আমাদের উপর চলমান অন্যায়ের ন্যায় বিচার চাই।

আসামী পক্ষের নানা অত্যাচার ও হুমকির বিষয়ে দোহার থানায় কয়েকটি সাধারণ ডায়রি করা হলেও পুলিশ চোঁখে পরার মত কোন পদক্ষেপ নেয়নি জানান মামলার বাদী মোতালেব খন্দকার।

অপর নিহত মকবুলের পরিবার ভাসছে অথই সাগরে। কারণ তাদের পরিবার একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিল নিহত মকবুল। মকবুলের মৃত্যুতে তার রেখে যাওয়া ২বছরের পুত্র রাতুল ও ৪ বছরের পুত্র হৃদয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছে নিহতের স্ত্রী শারমিন। সন্তানদের ভোরণ-পোষণ ও তাদের লেখা-পড়ার খরচ চালাতে রীতিমত হিমসিম খেতে হচ্ছে তাকে, তার উপর মামলা উঠিয়ে নেবার হুমকিতো আছেই। হুমকি যতই আসুক স্বামীর হত্যার সঠিক বিচার ও ছেলে দুটোকে কিভাবে মানুষের মত মানুষ করা যায় এখন এটাই আমার জীবনের এক মাত্র লক্ষ।

মকবুলের বড় বোন জামাতা আফতাব উদ্দিন মোল্লা আক্ষেপের সাথে বলেন নিহত মকবুলের চড়ে কিছু জমি আছে যা বর্গা চাষিদের দিয়ে চাষবাদ করানো হতো কিছুদিন আগে সেই জমির শষ্য আসামী হুকুম আলী চোকদারের চাচা মালেক চোকদার জোরপূর্বক কেটে নিয়ে যায় আর চড়ে আমরা গেলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমরা তার ভয়ে চরে নিজেদের জমির খবরাখবর পর্যন্ত নিতে পারছিনা।

আফতাব উদ্দিন মোল্লা আরো বলেন নিহত মুছা খন্দকারের পরিবারের কয়েকজন খুনিদের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করছে বলে শুনতে পেরেছি। যদি তা সত্য হয় তবে আমরা মামলার কর্যক্রম আলাদা ভাবে পরিচালনা করবো তবুও খুনিদের সাথে আপোস করবোনা।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মোল্লা জানান, মামলার মূল আসামীদের বাদ দিয়ে ডিবি পুলিশ চার্জসিট দেয়। তাই বাদী সেই চার্জসিট বাতিল করে মূল আসামিদের বিচারের আওতায় আনার জন্য মহামান্য আদালতের কাছে আবেদন করেছে। আগামি ২৬ জানুয়ারি জর্জ কোর্টে শুনানির কথা রয়েছে।

তিনি আরো বলেন ৬ জানুয়রি ঘটে যাওয়া বর্বরতার পর আহতদের চিকিৎসায় মোট ১৪ লক্ষ টাকা ব্যায় হয় এর মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য এড. সালমা ইসলাম ৩ লক্ষ টাকা দেন আর বাকি ১১ লক্ষ টাকা আমি ব্যক্তিগত ভাবে ব্যায় করে তাদের চিকিৎসা করিয়ে আনি।

নিহত মকবুলের বড় ছেলে হৃদয় কে জয়পাড়া কিন্ডার গার্টেনে ভর্তি করিয়েছি। এবং মামলার গতি যাতে কেউ রোধ করতে না পারে আমি সেই ব্যাপারে সজাগ আছি।

দোহার থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: মাহমুদুল হক মামলার বাদী মোতালেবকে সহযোগিতা না করার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, হাঁস মারার জন্য তো আর কাউকে গ্রেফতার করা যায়না তবে তাকে পূর্ণ আইনী সহায়তা দেওয়া হচ্ছে এবং আগামীতেও দেওয়া হবে ।

(এএস/জানুয়ারি ০৬, ২০১৪)