রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি এ বি এম জিলানীর মালিকানাধীন মেঘনা হাসপাতালে (প্রা:) হালিমা আক্তার বৃষ্টি নামের এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। মৃত বৃষ্টি আক্তার লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ গ্রামের প্রবাসী মাহফুজুর রহমান স্ত্রী ও রায়পুর পৌর সভার পূর্বলাছ গ্রামের আমির হোসেন মৃধা বাড়ীর মৃত দুলাল মৃধার একমাত্র মেয়ে।

অন্য হাসপাতাল থেকে অনভিজ্ঞ চিকিৎসক ডেকে এনে প্রসূতির আস্ত্রোপাচার (অপারেশন) করতে মেরুদন্ডে এনেসথেসিয়া দেয়ার সাথে সাথে তাঁর মৃত্যু হয়। এজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও চিকিৎসকের অবহেলা, সিজারিয়ান অপারেশনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকাকে দায়ী করেছেন নিহতের স্বামী ও তাঁর স্বজনেরা। মঙ্গলবার রাতে শহরের তাজমহল সিনেমা হল সংলগ্ন মেঘনা প্রাইভেট হাসপাতালে।


হাসপাতাল সূত্র ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে,লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ এলাকার সৌদি প্রবাসী মাহফুজুর রহমান রনি প্রায় এক বছর আগে রায়পুরের নতুন বাজার এলাকার প্রয়াত দুলাল মৃধার মেয়ে হালিমা আক্তার বৃষ্টিকে বিয়ে করেন। মঙ্গলবার দুপুরে ৯ মাসের গর্ভবতী বৃষ্টিকে গর্ভপাত ঘটাতে আস্ত্রোপাচার (অপারেশন) করাতে মেঘনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকেলে তাঁর সিজারের আগে এ্যানেসথেসিয়া করতে সেবা হাপাতালের মেডিকেল অফিসার শফিকুল ইসলামকে ডেকে আনা হয়। তিনি অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে রোগীর মেরুদন্ডে ইনজেকশন পুশ করেন।

এসময় বাহির থেকে কয়েক আয়াকে (বুয়া) অক্সিজেনের বিকল সিলেন্ডার নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা যায়। পরে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার সানজিদা রোমা অপারেশন করতে গেলে রোগীর মৃত্যর বিষয়টি নিশ্চিত হয়। ওই হাসপাতালের পাশের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, কয়েকদিন আগে ডাক্তার ও নার্সদের ভুল চিকিৎসায় পৌর শহরের লেংড়া বাজার এলাকার চার দিন বয়সের এক শিশু ও আলোনীয়া গ্রামের ৮৫ বছর বয়সের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। পৌর মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি এবিএম জিলানী এ হাসপাতালের মালিক হওয়ায় কেউ এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। তবে অবস্থা বেগতিক দেখলে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখা হয়।

নিহতের স্বামী মাহফুজুর রহমান রনি বলেন, আমার জীবনের সব স্বপ্ন শেষ। হাসপাতালে চিকিৎসকের খামখেয়ালির কারণে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। নতুন সন্তানের মুখও আমাকে দেখা হলো না। তারা (হাসপাতাল) চিকিৎসার জন্য নয়, শুধু ব্যবসা করতে হাসপাতাল খুলে বসেছে। মৃত্যুর পর স্ত্রীর লাশ নিয়ে তারা লুকোচুরি করেছে। আমি তাদের বিচার চাই।

অভিযুক্ত ডাক্তার শফিকুল ইসলাম মোবাইল ফোনে জানান, গর্ভবতী বৃষ্টির সকল পনীক্ষা নিরিক্ষা করেই সিজার অপারেশনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। কিন্তু উনি বেশী ভীতু হওয়ায় মারা যান। এতে ডাক্তারের কোন ভুল ছিল না। আপনি আমার হাসপাতালে আসুন বিস্তারিত বলব।
এ ব্যাপারে মেঘনা হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও রায়পুর পৌরসভার মেয়র এ বিএম জিলানী বলেন, প্রসূতির মৃত্যুর জন্য ডাক্তার ও হাসপাতালের ষ্টাফদের কোন অবহেলা ছিল না। এ মৃত্যু স্রেফ দুর্ঘটনা। এজন্য আমিও মর্মাহত।

(পিকেএস/এএস/জানুয়ারি ২১, ২০১৫)