বরগুনা প্রতিনিধি : নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগে মুন্সীগঞ্জ থেকে প্রত্যাহারকৃত পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে রবিবার সকাল ১১টায় নির্যাতিত স্ত্রী হালিমা আক্তারের নেতৃত্বে মানববন্ধন ও সমাবেশ করা হয়েছে। মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে বরগুনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পাঠানো হয়েছে স্মারকলিপি। বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে, বরগুনার সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। বরগুনা জেলা মহিলা পরিষদ, সিবিডিপি, জাগোনারী, ব্র্যাক, এনএসএস, নারী এনজিও ফোরাম, শুকতারা, ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন, বিসিএনএফ ও জন উদ্যোগ এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করে। কর্মসূচিতে মিডিয়া পার্টনার ছিলো, বরগুনার লোকবেতার এফএম ৯৯.২।

মানববন্ধন চলাকালীন সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, এসপি হাবিবের নির্যাতিত স্ত্রী হালিমা আক্তার, বরগুনা জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান, বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও লোকবেতারের স্টেশন ম্যানেজার মনির হোসেন কামাল, ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশনের আঞ্চলিক পরিচালক চিত্তরঞ্জন শীল, জাগোনারীর প্রধান নির্বাহী হোসনে আরা হাসি, বরগুনা জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খাদিজা বেগম ও অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির বাচ্চু। সমাবেশ পরিচালনা করেন, সিবিডিপির নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মিরাজ। সবশেষে বরগুনা জেলা প্রশাসক মীর জহুরুল ইসলামের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বরাবরে দেয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে যৌতুকের দাবিতে তার স্ত্রী হালিমা আক্তারকে শারীরীক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছেন। নির্যাতনের অতিশয্যে এক সময় হালিমা আক্তারকে তার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন এসপি হাবিব। নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় মুন্সিগঞ্জের সাবেক পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেছে আদালত। তার বাড়ি তালতলী উপজেলার ছোটবগী গ্রামে।

এসপি হাবিবের স্ত্রী হালিমা আক্তারের দায়েরকৃত একটি মামলার প্রেক্ষিতে নারাজীর আবেদন আমলে নিয়ে ১৯ জানুয়ারি বিকেলে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. বজলুর রহমান এ আদেশ দিয়েছেন। হালিমা আক্তার মামলায় উল্লেখ করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে এসপি হাবিব বিভিন্ন সময়ে যৌতুকের জন্য তাকে শারীরিক নির্যাতন করে আসছিলেন। তাছাড়া মুন্সিগঞ্জ থেকে সাময়িক বরখাস্তের পর এসপি পদে পূণর্বহাল হতে উচ্চ মহলে তদবীরের জন্য ত্রিশ লাখ টাকা চেয়ে তাকে ও তার পিতা মো. শামসুল হককে চাপ দিতে থাকেন হাবিব। যৌতুকের টাকা দিতে অসমর্থ হওয়ায় গত ১১ জুলাই শ্বশুর বাড়িতে হালিমাকে মারধর করেন হাবিব ও তার ভাই আবু হানিফসহ শশুরবাড়ির লোকজন। এ অভিযোগে গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে উপস্থিত হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি দায়ের করেন তিনি।

অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসনের দাখিলকৃত অনিয়ম, দুর্নীতি এবং পেশাগত অসদাচরণের ২২টি গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতে মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে নিযুক্ত করা হয়। এছাড়া পুলিশ সুপারের প্রভাব খাটিয়ে নিজ বাড়ি বরগুনার তালতলী উপজেলার একাধিক স্থানীয় অধিবাসীকে মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রাণীর অভিযোগ রয়েছে এসপি হাবিবের বিরুদ্ধে। পুলিশ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও ব্যক্তিগত চরিত্রহীনতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দেশের প্রধান প্রধান গণমাধ্যমে অনুসন্ধানী বহু প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।

(এমএইচ/এএস/ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৫)