মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরা সদর উপজেলার মাগুরা-যশোর মহাসড়কের মঘির ঢাল এলাকায় শনিবার রাতে ট্রাকে পেট্রোল বোমা হামলায় দগ্ধ ৯ শ্রমিকের মধ্যে রওশন আলী (৪৫), শাকিল আহমেদ (৩০)ও মতিন বিশ্বাস (২৫) নামের ৩ শ্রমিক মারা গেছেন।

শনিবার রাতে ঢাকায় নেওয়ার পথে রওশন ও রবিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেলেজের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাকিলের এবং রবিবার বিকালে মতিনের মৃত্যু হয়। নিহত দু’জনের মধ্যে রবিবার সকাল ৯ টায় রওশনের লাশ ঢাকা থেকে মাগুরা এসে পৌছালে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারন হয়। এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া।

নিহত শ্রমিক রওশনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার গোটা পরিবারে চলছে শোকের মাতম। শোকে স্ত্রী,ভাই-বোনসহ পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। কেউ-কেউ বিলাপ করে বার-বার মুচ্ছা যাচ্ছেন। হতদরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে রওশনের স্ত্রী নাবালক তিন সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

রওশনের স্ত্রী সুকুরন্নেছা বিলাপ করে বারবার বলেছেন,আল্লাহ-ওগের বিচার করুক। কি দোষ করেছিল? টাকা না থাকায় শুক্রবার বাড়িতি বাজার আনেনি। কাজে যাবার সময় মনির কয়ছি কাম করে বাজার নিয়ে আসপানে। কিন্তু আর ফিরলো না। এখন আমি তিনটে নাবালক পুলাপান নিয়ে কি করে বাচে থাকপানে। যারা আমার স্বামীরে পুড়ায়ে মারিছে, আমাগের পথে বসাইছে আমি তাদের শাস্তি চায়।আল্লাহ ওগের বিচার করুক।

এদিকে পরিবারের বড় সন্তান ও একমাত্র উপার্জনক্ষম পুত্র শাকিলকে হারিয়ে তার বাবা ইসলাম মোল্লা মানুষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি কখনও কাঁদছেন, কখনও মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন। মা ও অপর তিন ভাই-বোন শোকে নির্বাক। বাবা ইসলাম মোল্লা বিলাপ করে জানান, শাকিলের বয়স ৩০ হলেও স্বল্প আয়ের সংসারে মা-বাবা, ভাই-বোনের সুখের কথা ভেবে সে এখনও বিয়ে করেনি। কিন্তু সবার সুখের পাখি, আমাদের দু:খের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেল।

কোন রাজনীতির সাথে জড়িত না থেকেও নোংড়া রাজনীতির শিকার হয়ে একই গ্রামের দিনমজুর দুটি তাজা প্রানের আকস্মিক মৃত্যু ও ৯ জন অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনায় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গ্রামবাসীসহ পরিবারের সদস্যরা নৃশংশ এ ঘটনা কোনভাবে মেনে নিতে পারছেন না। তরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। রজব আলী ও জাফর বিশ্বাস নামে দুই গ্রামবাসী জানান, নিহত রওশন ও শাকিলসহ অগ্নিদগ্ধ ৯ জনের কেউ রাজনীতির সাথে জড়িত না। তারা প্রত্যেকেই গ্রামের সহজ-সরল খেটে খাওয়া মানুষ। নিরাপরাধ মানুষের উপর এই বর্বতা মেনে নেওয়া যায়না। আমরা এ ঘটনার বিচার দেখতে চাই।

এদিকে রওশনের লাশ মাগুরা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত শেষে দুপুরে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ রোববার বাদ আসর নিজ গ্রাম মালিকগ্রামে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হবে। শাকিলের মরদেহ সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে মাগুরায় পৌছানোর কথা।

জেলা প্রশাসক মাহবুবর রহমান জানান, দুর্বৃত্তদের দ্বারা ৯ জনের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর শনিবার রাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিকভাবে চিকিৎসার জন্য প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করেন প্রদান করা হয়। এ ছাড়া চিকিৎসার জন্য প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ঢাকায় সকলকে পাঠানো হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে তার একান্ত সহকারী সচীব সাইফুজ্জামান শিখর সার্বক্ষনিক ঢাকায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা ও তদারকি করছেন। নিহতের দাফন-কাফন ও পরবর্তী সাহায্য অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে পেট্রোল বোমা হামলায় নিহতের ঘটনায় রবিবার দুপুরে দলীয় কার্যলয়ে জেলা আওয়ামীলীগের জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সাংবদিক সম্মেলন করে বোমা হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রোববার বিকেল ৫ টায় শহরে এক প্রতিবাদ মিছিল বের করে। মিছিল শেষে ২৪ মার্চ গণ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এই সাথে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এদিকে রবিবার সকালে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী জেলা বিএনপি’র সাধারন সম্পাদক আলী আহমেদ বিশ্বাস ও পৌর বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মাছুদ হাসান খান কিজিলের বাড়িতে হামলা ভাংচুর করেছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার দায়ে বাদশা মিয়া ও বিল্লাল হোসেন নামের দুই শিবির কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদর্শন রায় জানান, এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। সন্দেহভাজন কয়েক জনকে আটক করা হয়েছে।

(ডিসি/এএস/মার্চ ২২, ২০১৫)